ঢাকা : জনতার ঐক্যে দানবের দম্ভ ভাঙার ঘোষণা নিয়ে আগামী ২২, ২৩ ও ২৪ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে অসাম্প্রদায়িকতা, মানবিক মূল্যবোধ ও প্রাণ-প্রকৃতি-পরিবেশ রক্ষায় প্রত্যয়ী সংগ্রামী মানুষের উদ্দীপ্ত কণ্ঠস্বর বাংলাদেশ উদীচী শিল্পীগোষ্ঠীর ২০তম জাতীয় সম্মেলন।
সম্মেলনের আগে শুক্রবার (৯ ডিসেম্বর) দিনব্যাপী অনুষ্ঠিত হয় উদীচী কেন্দ্রীয় সংসদের সবশেষ সভা। আগামী ২২ ডিসেম্বর বিকেল ৩টায় কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে উদ্বোধন হতে যাওয়া সম্মেলনের স্লোগান নির্ধারণ করা হয়েছে- ‘জনতার ঐক্য দানবের দম্ভ ভাঙবেই’।
উদীচী’র সভাপতি কামাল লোহানীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় আসন্ন সম্মেলন এবং সংগঠনের সার্বিক অবস্থা নিয়ে প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন উদীচী কেন্দ্রীয় সংসদের সাধারণ সম্পাদক প্রবীর সরদার।
তিনি জানান, উদীচী’র ২০তম জাতীয় সম্মেলন উদ্বোধন করবেন মহান ভাষা আন্দোলনের অন্যতম সৈনিক এবং ভাষা শহীদদের স্মৃতির উদ্দেশ্যে নির্মিত প্রথম শহীদ মিনারের অন্যতম রূপকার ডা. সাঈদ হায়দার।
উদীচী কেন্দ্রীয় সংসদের সভাপতি কামাল লোহানীর সভাপতিত্বে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত থাকবেন, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের প্রধান কৌঁসুলী গোলাম আরিফ টিপু এবং বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ ও উদীচী’র সাবেক সভাপতি অধ্যাপক যতীন সরকার।
এছাড়া আরো উপস্থিত থাকবেন, বিভিন্ন প্রগতিশীল রাজনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক সংগঠনের প্রতিনিধি এবং সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট, বাংলাদেশ গ্রুপ থিয়েটার ফেডারেশন, আবৃত্তি সমন্বয় পরিষদসহ সংস্কৃতি অঙ্গণের বিভিন্ন জোটের নেতৃবৃন্দ।
সভায় জানানো হয়, গঠনতান্ত্রিক নিয়ম অনুযায়ী জাতীয় সম্মেলনের পূর্বে দেশে ও বিদেশে অবস্থিত উদীচী’র প্রায় চারশ’ শাখা সংগঠনের সম্মেলন অনুষ্ঠানের বাধ্যবাধকতা রয়েছে। সেই বাধ্যবাধকতা মেনে মাত্র দু’একটি বাদে সকল জেলা ও শাখা সংসদের সম্মেলন সফলভাবে অনুষ্ঠিত হয়েছে। পুরো কার্যক্রমকে তত্ত্বাবধানের লক্ষ্যে উদীচী’র সভাপতি কামাল লোহানীকে চেয়ারম্যান ও সাধারণ সম্পাদক প্রবীর সরদারকে আহবায়ক করে ৯২ সদস্যবিশিষ্ট প্রস্তুতি পরিষদ নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে।
উদীচী’র জাতীয় সম্মেলনের অনুষ্ঠানসূচি অনুযায়ী, আগামী ২২ ডিসেম্বর বিকেলে উদ্বোধনের পর সন্ধ্যায় কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের পাদদেশে পরিবেশিত হবে মনোজ্ঞ বিচিত্রানুষ্ঠান। এছাড়া, ২৩ ও ২৪ ডিসেম্বর সন্ধ্যায় কাজী বশির মিলনায়তন (ঢাকা মহানগর নাট্যমঞ্চ, গুলিস্তান)-এ অনুষ্ঠিত হবে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানমালা। দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে আগত উদীচী’র শিল্পী-কর্মীরা উপস্থাপন করবেন আবহমান বাংলার ঐতিহ্যের ধারক-বাহক নানা বৈচিত্র্যপূর্ণ পরিবেশনা।
এছাড়া, ২৩ ও ২৪ ডিসেম্বর প্রতিদিন সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত চলবে সম্মেলনের সাংগঠনিক অধিবেশন। ২৪ ডিসেম্বর বিকেলে পরবর্তী দুই বছরের জন্য নতুন নেতৃত্ব নির্বাচন এবং নতৃন নেতৃত্বের শপথ গ্রহণের মধ্য দিয়ে শেষ হবে বাংলাদেশ উদীচী শিল্পীগোষ্ঠীর ২০তম জাতীয় সম্মেলনের অনুষ্ঠানমালা।
উদীচী কেন্দ্রীয় সংসদের সভায় বক্তারা বলেন, এই মুহূর্তে নানা ধরণের দানবের কবলে বাংলাদেশ। একদিকে রয়েছে আন্তর্জাতিক সাম্রাজ্যবাদী দানবের আগ্রাসন যা লুটে নিতে চাইছে এদেশের তেল-গ্যাস-খনিজ সম্পদ। এমনকি যা থাবা বসিয়েছে বিশ্ব ঐতিহ্যের অংশ, বাংলাদেশের প্রাকৃতিক রক্ষাকবচ সুন্দরবনের দিকেও।
অন্যদিকে রয়েছে দেশীয় নানা দানব। জঙ্গীবাদের উত্থান, উগ্র ধর্মভিত্তিক মৌলবাদ, ধর্মকে আশ্রয় করে সাম্প্রদায়িক আগ্রাসন, মানুষে মানুষে ভেদাভেদ সৃষ্টির অপচেষ্টা, সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্টের ষড়যন্ত্র, নারী ও শিশুর উপর নৃশংস পৈশাচিক বর্বরতা, বিচারহীনতার অপসংস্কৃতি, ক্ষমতার অপব্যবহার করে ছাত্র-শিক্ষকসহ দেশের প্রায় প্রতিটি শ্রেণীর মানুষের উপর নিপীড়ন-অত্যাচার চালানোসহ নানামুখী দানবের নিষ্ঠুর আচরণে ক্ষতবিক্ষত প্রিয় স্বদেশ।
এ দুর্বিষহ অবস্থা থেকে প্রিয় দেশকে মুক্ত করতে হলে প্রয়োজন সর্বস্তরের জনতার ঐক্য। সাধারণ মানুষের ঐক্যের অভাবের সুযোগ নিয়েই দানবেরা দম্ভভরে তাদের কার্যক্রম চালিয়ে যাওয়ার সাহস পাচ্ছে। দানবের এ দম্ভকে ভাঙতে হলে জনতার ঐক্যই একমাত্র হাতিয়ার। আর সেই হাতিয়ারকে শাণিত করার লক্ষ্যেই উদীচী’র ২০তম জাতীয় সম্মেলনের শ্লোগান নির্ধারণ করা হয়েছে- ‘জনতার ঐক্য দানবের দম্ভ ভাঙবেই’।
বাংলাদেশ উদীচী শিল্পীগোষ্ঠীর ২০তম জাতীয় সম্মেলনের অনুষ্ঠানমালায় স্বতঃস্ফুর্ত অংশগ্রহণের মাধ্যমে জনতার ঐক্যবদ্ধ প্রচেষ্টায় দানবের দম্ভ ভেঙে মুক্ত, স্বাধীন, সাম্যবাদী, বৈষম্যমুক্ত, অসাম্প্রদায়িক- সর্বোপরি মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় সমুজ্জ্বল বাংলাদেশ গড়ে তোলার লড়াইয়ে সামিল হওয়ার জন্য সবার প্রতি আহবানও জানান উদীচী’র কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ।
সোনালীনিউজ/ঢাকা/জেডআরসি
আপনার মতামত লিখুন :