ঢাকা : দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে নাক না গলানোর জন্য সরকারের পক্ষ থেকে বিদেশি কূটনীতিকদের কড়া বার্তা দেয়া হয়েছে। বিশেষ করে আগামী সংসদ নির্বাচন প্রশ্নে বলা হয়েছে, ‘বাংলাদেশ গণতন্ত্রে বিশ্বাস করে। কাজেই গণতন্ত্রের পথচলা অব্যাহত রাখতে কী করতে হবে, সে বিষয়ে আমরা ওয়াকিবহাল।’ কূটনীতিকদের আরো বলা হয়েছে, ‘এসব বিষয়ে যেচে এসে পরামর্শ না দেয়াই ভালো।’
একাধিক কূটনীতিক সূত্রে জানা গেছে, আগামী সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে এরই মধ্যে ব্যাপক তৎপরতা চালাচ্ছেন বিদেশি কূটনীতিকরা। এদেশে ইউরোপ এবং পশ্চিমাদের বিনিয়োগ যাতে সফল হয় এজন্যই এই তৎপরতা। কূটনীতিকরা চান, সামনের নির্বাচনটি সব দলের অংশগ্রহণে সুষ্ঠু, অবাধ এবং নিরপেক্ষ হোক। পাশাপাশি নির্বাচনী সহিংসতা বন্ধ হোক। এলক্ষ্যে কূটনীতিকরা নিজেদের মধ্যে একাধিক বৈঠক করে রোডম্যাপ ঠিক করছেন। তারা বর্তমান সরকারের একাধিক নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের প্রতিনিধির সঙ্গে নির্বাচন বিষয়ে আলাপ করেছেন এবং অনেকের সঙ্গে আলাপ করার জন্য সময় চেয়েছেন।
এদিকে সরকারের একাধিক সূত্রে জানা গেছে, দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয় এবং আগামী নির্বাচন নিয়ে বিদেশি কূটনীতিকদের নাক না গলানোর জন্য এরই মধ্যে সরকারের পক্ষ থেকে বার্তা দেয়া হয়েছে। পাশাপাশি বলা হয়েছে, আগামী সংসদীয় নির্বাচনটি সব দলের অংশগ্রহণে যাতে অবাধ ও নিরপেক্ষ হয়, এজন্য সরকার আন্তরিকভাবে কাজ করছে। এ বিষয়ে বিদেশিদের কাছ থেকে এখনই কোনো পাঠ নিতে চায় না বাংলাদেশ। নতুন নির্বাচন কমিশন গঠন নিয়ে রাষ্ট্রপতির সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে চেয়েছিলেন বিদেশিরা। এজন্য তারা আনুষ্ঠানিক আবেদনও করেছিলেন। কিন্তু রাষ্ট্রপতির পক্ষ থেকে তাদের আহ্বানে সাড়া দেয়া হয়নি। উল্টো তাদের বার্তা দেয়া হয়েছে, একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচন কমিশন গঠনে বাংলাদেশ সক্ষম, এজন্য বাইরের পরামর্শ নেয়ার প্রয়োজন নেই।
অন্যদিকে গত সপ্তাহে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং যোগাযোগমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের সঙ্গে আগামী সংসদ নির্বাচন এবং নতুন নির্বাচন কমিশন নিয়ে আলোচনা করেন যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত মার্শা বার্নিকাট। যুক্তরাষ্ট্রের কূটনীতিকের সঙ্গে আলাপে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক স্পষ্ট ভাষায় জানিয়ে দেন, বাংলাদেশের দিন বদলেছে। তাদের অভ্যন্তরীণ বিষয় নিয়ে বিদেশিদের না ভাবলেও চলবে। আগামী নির্বাচনে বড় রাজনৈতিক দল বিএনপিসহ সব দলই অংশ নেবে। নির্বাচনটি স্বচ্ছ, অবাধ এবং নিরপক্ষে করতে সরকারের আন্তরিকতায় কোনো ঘাটতি নেই।
যোগাযোগমন্ত্রীর সঙ্গে ওই বৈঠক শেষে যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত মার্শা বার্নিকাট বলেন, ‘আমার ৩৫ বছরের কূটনৈতিক জীবনে বাংলাদেশের মতো জটিল রাজনৈতিক পরিস্থিতি কখনোই দেখিনি। উন্নয়নের স্বার্থে বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে আমরা সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে সব সময়েই আলাপ করি। এটা একটা চলমান প্রক্রিয়া।’
বাংলাদেশে ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) রাষ্ট্রদূত পিয়েরে মায়াদু বলেন, সব দলের অংশগ্রহণে আগামী সংসদীয় নির্বাচনটি যাতে অবাধ, সুষ্ঠু এবং নিরপেক্ষভাবে অনুষ্ঠিত হয়, এজন্য যে কোনো সহযোগিতা করতে প্রস্তুত রয়েছে ইইউ। নবগঠিত নির্বাচন কমিশন কোনো সহযোগিতা চাইলে তা দিতে রাজি আছে সংস্থাটি।
২০১৪ সালের জানুয়ারিতে সংঘাতময় ও অস্থিতিশীল রাজনৈতিক পরিস্থিতি, বড় রাজনৈতিক দলের নির্বাচন বর্জন এবং স্বাভাবিকের চেয়ে কম সংখ্যক ভোটার উপস্থিতিতে অনুষ্ঠিত দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মাধ্যমে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করে। বর্তমান সরকারের পথচলা এবং বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ নিয়ে সরকার গঠনের শুরুতে দেশি-বিদেশিদের মধ্যে অনেক শঙ্কা, আশঙ্কা, সন্দেহ এবং অনেক অনিশ্চয়তা ও ‘অনুমান কথন (প্রেডিকশন)’ ছিল। কিন্তু সব ধরনের আশঙ্কা এবং ‘অনুমান কথন’ গত পৌনে তিন বছরে সরকার বাস্তবিক হতে দেয়নি। সর্বশেষ পদ্মা সেতুতে বিশ্বব্যাংকের দুর্নীতির অভিযোগও খারিজ করে দিয়েছেন কানাডার আদালত। অনেক ব্যর্থতার মাঝেও অর্থনৈতিক ভিত্তি শক্তিশালী করার পাশাপাশি কূটনৈতিক সাফল্য সরকারকে পথ চলায় সফলতা এনে দিয়েছে। দেশের বাইরে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল হয়েছে। পাশাপাশি বিশ্বদরবারে বাংলাদেশ এখন দর কষাকষি করতে শিখেছে। বিশ্বের বুকে বাংলাদেশ এখন অনুসরণযোগ্য দেশ। এখন চাইলেই যে কেউ অভ্যন্তরীণ বিষয়ে নাক গলাতে পারবে না।
পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মো. শাহরিয়ার আলম এই প্রতিবেদককে বলেন, এই মুহূর্তে যে কোনো সময় থেকে বাংলাদেশের সঙ্গে বিশ্বের খুব ভালো সময় যাচ্ছে। আমরা বিশ্বের সঙ্গে আস্থার সম্পর্ক আরো শক্তিশালী করতে কাজ করছি। আন্তর্জাতিক অঙ্গন থেকে এরই মধ্যে ইতিবাচক সাড়াও পেয়েছি, যার ফলে বাংলাদেশের গড় প্রবৃদ্ধির হার ছয় শতাংশের বেশি অর্জন করা গেছে। সামনে এই হারকে সাত শতাংশে উন্নীত করতে কাজ করছি। সরকার স্বচ্ছতার সঙ্গে কাজ করছে বলেই এই উন্নয়ন সম্ভব হয়েছে। একসময় বাংলাদেশকে তলাবিহীন ঝুড়ি বলা হলেও এখন সময় পরিবর্তন হয়েছে।
সোনালীনিউজ/এমটিআই
আপনার মতামত লিখুন :