ঢাকা : শাওয়ালের চাঁদ দেখা গেলে রাত পোহালেই ঈদ। সময় যেন একদমই নেই! তাই প্রিয়জনের সঙ্গে ঈদের আনন্দ উপভোগ করতে শেষ মুহূর্তে বাড়ি ফিরছেন অসংখ্য মানুষ। পথঘাটের সব দুর্ভোগ উপেক্ষা করেই নাড়ির টানে বাড়ি ফিরছেন তারা। পথের ভোগান্তিও তুচ্ছ হয়ে যাচ্ছে আনন্দের কাছে।
বৃহস্পতিবার (১৪ জুন) রাজধানীর সায়েদাবাদ, মহাখালী ও গাবতলী বাসটার্মিনাল, ঢাকা নদীবন্দর (সদরঘাট) এবং কমলাপুর ও বিমানবন্দর রেলওয়ে স্টেশন যাত্রীদের পদচারণায় মুখর ছিল। আগাম টিকেট সংগ্রহ করতে না-পারা যাত্রীদের অনেকেই জীবনের ঝুঁকি নিয়ে বাস, ট্রেন ও লঞ্চের ছাদে চড়ে গন্তব্যে রওনা হন। আবার অনেকেই বিকল্প ব্যবস্থায় গাড়ি রিজার্ভ করে কিংবা নিজস্ব গাড়িতে বাড়ি ফিরেছেন। বিপুলসংখ্যক মানুষ বাড়ি ফেরায় অনেকটাই ফাঁকা রাজধানী ঢাকা। ফাঁকা রাজধানীতে থাকা মানুষদের পড়তে হয় যানবাহন সঙ্কটে। অধিকাংশ যাত্রীবাহী গাড়ি হাইওয়ে রুটে চলাচল করায় এই অবস্থার সৃষ্টি হয়।
কমলাপুর রেলস্টেশন : যাত্রীদের সর্বোচ্চ নির্ভরতার জায়গা রেলপথেও গতকাল অতিরিক্ত যাত্রীর চাপে ঘটে শিডিউল বিপর্যয়। কমলাপুর রেলস্টেশন থেকে রাজশাহী অভিমুখী সিল্কসিটি এক্সপ্রেস দুপুর ২টা ৪০ মিনিটে ছাড়ার কথা থাকলেও তা ছাড়ে ৪টা ৫০ মিনিটে। এ ছাড়া ঈদ স্পেশাল সার্ভিসের প্রতিটি ট্রেন আধ থেকে এক ঘণ্টা দেরিতে স্টেশন ছাড়ে।
কমলাপুর রেলস্টেশন কর্তৃপক্ষ জানায়, ঈদ স্পেশাল ও লোকাল ট্রেনগুলো স্বাভাবিক সময়েই কিছুটা দেরিতে চলাচল করে। আর ঈদে ঘরমুখো মানুষের প্রচণ্ড চাপে তা আরো পিছিয়ে যায়। তা ছাড়া এই ট্রেনগুলোকে আন্তঃনগর ট্রেনগুলোর ক্রসিংয়ে বা স্টেশনে ঢুকতে সিগন্যালের জন্য বেশি বিড়ম্বনায় পড়তে হয়। সব মিলিয়ে কমলাপুর রেলস্টেশন থেকে এদিন ৬৯টি ট্রেন বিভিন্ন গন্তব্যে ছেড়ে গেছে। বার বার নিষেধ সত্ত্বেও অনেককে ট্রেনের ছাদে উঠে যেতেও দেখা যায়।
অন্যদিকে তীব্র গরমে ট্রেনের এই বিলম্বের কারণে ভোগান্তিতে আছে ঈদযাত্রীরা। সিল্কসিটি এক্সপ্রেসের যাত্রী হুমায়রা বলেন, ‘দুপুর ১টার সময় স্টেশনে এসে দেড়টার দিকে জানতে পারলাম ট্রেন বিকাল ৫টায় ছাড়বে। আমার সঙ্গে আমার মা, ছোট বোন ও বাবা রয়েছেন। প্রচণ্ড গরমে স্টেশনে বসে থাকতে খুব কষ্ট হচ্ছে। আবার ভিড় ঠেলে ট্রেনে ওঠার যুদ্ধের বিষয় তো আছেই।’ তবে বাড়ি যাওয়ার আনন্দের কাছে এই কষ্ট তুচ্ছ বলেও উল্লেখ করেন তিনি।
মহাসড়ক : যানবাহনের চাপ থাকলেও মহাসড়কে যানজট নেই বললেই চলে। এদিন সকাল থেকেই ঢাকা-টাঙ্গাইল, ঢাকা-ময়মনসিংহ ও ঢাকা-সিলেট মহাসড়কে যান চলাচল স্বাভাবিক ছিল। তবে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের মুন্সীগঞ্জ অংশে দাউদকান্দি থেকে শুরু করে মেঘনা-গোমতী সেতু পর্যন্ত সাত কিলোমিটার এলাকায় যান চলাচলে ছিল ধীরগতি। আর শিমুলিয়া-কাঁঠালবাড়ী ও দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া ঘাটেও যানবাহনের বাড়তি চাপ ছিল না।
গাবতলী বাস টার্মিনাল : এদিন যাত্রীদের চাপ থাকলেও যানের আধিক্য থাকায় তা তেমন অসুবিধার সৃষ্টি করেনি। যাত্রী বিশ্রামাগারে বাসের জন্য অপেক্ষারত সাগর খান জানান, ঈগল পরিবহনে করে ঝালকাঠিতে যাবেন তিনি। কর্মস্থল থেকে ছুটি পেয়েই গতকাল সকালে তিনি এখানে এসেছেন। অগ্রিম টিকেট না কাটায় কাউন্টারে এসে তিনি কোনো ঝামেলা ছাড়াই টিকেট পেয়ে গেছেন।
জেআর পরিবহনের জন্য অপেক্ষায় থাকা যাত্রী আবদুর রহমান জানান, মেহেরপুর যাওয়ার জন্য তিনি সকাল ১০টার দিকে এখানে এসেছেন। এসে গাড়ি পাননি, তবে বাড়তি ভাড়া ছাড়াই দুপুর ১২টার বাসের টিকেট পেয়ে গেছেন তিনি।
শ্যামলী পরিবহনের কাউন্টার মাস্টার রাজিব মিয়া বলেন, বছরের অন্য সময়ে চাপ না থাকলেও ঈদের আগ মুহূর্তে যাত্রীদের চাপ বেড়ে যায়। এখন যাত্রীদের উপস্থিতি বেশি থাকায় তাদের ডাকাডাকিও বেশি করা লাগে। এ সময় আমাদের একটু বেশি সচেতন হতে হয়। না হলে যাত্রীরা ভোগান্তিতে পড়ে।
সদরঘাট : লঞ্চ টার্মিনালেও ছিল ঘরমুখী মানুষের ভিড়। আইন অনুযায়ী লঞ্চের ছাদে যাত্রী বহন নিষিদ্ধ হলেও এদিন ঢাকা নদীবন্দর (সদরঘাট) থেকে ছেড়ে যাওয়া সব ক’টি লঞ্চের ছাদে যাত্রী বহন করতে দেখা গেছে। সুন্দরবন, পারাবত, সুরভীসহ অন্য লঞ্চগুলোতে যাত্রী ভরপুর হওয়ার পরও না ছাড়ায় রোদ ও গরমে অতিষ্ঠ যাত্রীরা ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন।
এ ব্যাপারে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআইডব্লিউটিএ) সদরঘাট বন্দরের যুগ্ম পরিচালক আলমগীর কবির বলেন, ‘যথাযথ নিয়ম মেনেই লঞ্চ ছাড়া হচ্ছে। আমরা যাত্রীদের নিরাপত্তায় সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিচ্ছি। কোনো লঞ্চে যাত্রী ভরে গেলেই তা নির্ধারিত সময়ের আগে ছাড়তে বলা হচ্ছে।
রাজধানীতে গাড়ি সঙ্কট : ঈদ যাত্রার শুরুতে রাজধানীতে দুর্ভোগের শিকার হয়েছেন অনেক যাত্রী। গতকাল রাজধানীতে গণপরিবহন ছিল খুবই কম। যেগুলো চলাচল করেছে সেগুলোতেও আদায় করা হয়েছে ঈদ বখশিশের নামে বাড়তি ভাড়া। সিএনজি ও ট্যাক্সিক্যাব চালকরা দ্বিগুণ-তিন গুণ বেশি ভাড়া ছাড়া যাত্রী বহন করেনি।
মহাখালী থেকে গাবতলী রুটে চলাচলকারী লেগুনাগুলোতে ২০ টাকার ভাড়া আদায় করা হয়েছে ২৫ টাকা। গাবতলী থেকে কুড়িল পর্যন্ত ৩০ টাকার ভাড়া নেওয়া হয়েছে ৪০ টাকা। মিরপুর থেকে সদরঘাটের ভাড়া ৩০ টাকা। কিন্তু আদায় করা হয়েছে ৫০, ৮০ ও ১০০ টাকা পর্যন্ত। তা ছাড়া দুপুরের পর রাজধানীতে গাড়ির পরিমাণ একেবারেই কমে যায়। যেসব বাস চলাচল করে সেগুলোতে গেটলকের নামে গলাকাটা ভাড়া আদায় করা হয়। আবার যানবাহন না পেয়ে মানুষ মাইলের পর মাইল হেঁটে গন্তব্যে পৌঁছায়।
এদিকে এবারের ঈদযাত্রায় কোথাও যানজট নেই বলে মন্তব্য করেছেন সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। গতকাল সকালে রাজধানীর মহাখালী আন্তঃনগর বাস টার্মিনাল পরিদর্শন শেষে সাংবাদিকদের তিনি বলেন, এবার যাত্রীরা ভালোভাবে ঘরে ফিরছে। রাস্তার জন্য কোথাও কোনো যানজট নেই। তবে বৃষ্টির কারণে দেশের মহাসড়কগুলোর কোথাও কোথাও যানবাহন চলাচলে ধীরগতি ছিল।
সোনালীনিউজ/এমটিআই
আপনার মতামত লিখুন :