ঢাকা : সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ সংসদ নির্বাচন আয়োজন নিয়ে কমিশনের সক্ষমতা এবং সদিচ্ছার বিষয়ে প্রশ্ন তুলেছেন সাবেক নির্বাচন কমিশনার, সাবেক সচিব, পুলিশ কর্মকতা, রাজনীতিবিদ ও নির্বাচন পর্যবেক্ষকরা। ‘লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড’ নিশ্চিতের মাধ্যমে প্রার্থীদের নির্বাচনি পরিবেশ নিশ্চিতে কমিশন ‘ব্যর্থ’ বলে মন্তব্য করেছেন তারা।
মঙ্গলবার (১৮ ডিসেম্বর) জাতীয় সংসদ নির্বাচনের চ্যালেঞ্জ নিয়ে সেমিনারের আয়োজন করে ‘সেন্টার ফর গভর্নেন্স’। সেমিনারে অংশ নিয়ে বক্তারা এসব কথা বলেন।
রাজধানীর পুরাতন এলিফ্যান্ট রোডে সংস্থাটির কার্যালয়ে আয়োজিত সেমিনারে বক্তারা নির্বাচন আয়োজনে কমিশনকে আন্তরিক ও সঠিক পদক্ষেপ গ্রহণের আহ্বান জানিয়ে বলেন, নয়তো ভোটকে কেন্দ্র করে সহিংসতা ও বিশৃঙ্খলার আশঙ্কা দেখা দিতে পারে।
সেমিনারে দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন আয়োজন নিয়ে প্রশ্ন তোলেন সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা এম হাফিজউদ্দিন খান। তিনি বলেন, দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাবচন আয়োজন আমরা টেস্ট কেস হিসেবে নিয়েছিলাম। ভেবেছিলাম হয়তো সুষ্ঠু একটি নির্বাচন হবে। তবে এ নিয়ে নতুন করে কিছু বলার অপেক্ষা রাখে না।’
নির্বাচন সময়ে ৩৫০ জন সংসদ সদস্যকে যে বেতন-ভাতা দেওয়া হচ্ছে এটা রাষ্ট্রের অপচয় বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
এম হাফিজউদ্দিন খান আরও বলেন, ‘নির্বাচন কমিশন এখন পর্যন্ত যে কার্যক্রম দেখিয়েছে, এখনই বলা যায় এই নির্বাচন কমিশন টোটালি ফেইলর। এটা নির্বাচন হওয়ার আগেই বলা যায়। তারা নাকি কিছু দেখে না, তারা বøাইন্ড। মাঠে-ঘাটে কী হচ্ছে তা তারা কিছুই দেখেন না।’
তিনি বলেন, ‘নির্বাচন কমিশন আমাদের ডেকেছিলেন। আমি সেখানে বলেছিলাম-প্রধানমন্ত্রী যেখানেই যাচ্ছেন সেখানেই তিনি নির্বাচনি বক্তব্য দিয়ে আসছেন এবং ভোট দেওয়ার কথা বলে আসছেন। অন্যান্য দলতো রাস্তায় বের হতেই পারে না। তাহলে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড কীভাবে হবে। তখন নির্বাচন কমিশন বলল- শিডিউল ঘোষণার আগে আমাদের বলার কোনও ক্ষমতা নেই।’
সুষ্ঠু নির্বাচন আয়োজনে কমিশন দায়িত্ব পালন করছেন না উল্লেখ করে সাবেক নির্বাচন কমিশনার এম সাখাওয়াত হোসেন বলেন, ‘এই যে মারামারি, একজন প্রার্থী গুলিবিদ্ধ, এটা বিবেচ্য না তিনি কোন দলের। তবে নির্বাচন কমিশনের যে দায়িত্ব, সেটি তারা প্রয়োগ করেননি, করবেন বলেও মনে হয় না। নির্বাচন কমিশন একচুয়ালি ডোন্ট নো, হাউ টু হ্যান্ডেল অ্যান্ড হাউ টু গো। মোদ্দা কথা আমরা কী দেখছি, যেটা দেখছি তা ভালো দেখছি না।’
সাবেক প্রধান তথ্য কমিশনার মুহাম্মদ জমির বলেন, ‘যে দলই জিতুক, নির্বাচন সম্পন্ন হওয়ার পরিস্থিতি ক্রিটিক্যাল। নির্বাচন কমিশনের কিছু দায়িত্ব আছে, তাদের উচিত ছিল সেগুলো পালন করা। কিন্তু তারা সম্পূর্ণভাবে পালন করেননি। নির্বাচন কমিশনের উচিত ছিল আরও সক্রিয়ভাবে সব কিছু করা। শুধু বললেই হবে না, যেখানেই ঘটনা ঘটুক দৃষ্টান্তমূলক পদক্ষেপ নেওয়া উচিত।’
নির্বাচন কমিশনের আচরণ পক্ষপাতমূলক উল্লেখ করে সাবেক সচিব এ এইচ মোফাজ্জল করিম বলেন, ‘খুব আশা করেছিলাম রাজনীতিতে সুবাতাস বইবে। কিন্তু গত কিছুদিন ধরে যে ঘটনা ঘটেছে, এটা সহজে দমন করা যায়। এর দায়িত্ব নির্বাচন কমিশনের। নির্বাচন কমিশনকে কাজ করে দেখাতে হবে। এ নির্বাচন কমিশনের ওপর মানুষের আস্থা কি করে থাকবে। নির্বাচন কমিশনের নির্লিপ্ততা পক্ষপাতমূলক অবস্থানে চলে গেছে।’
অনুষ্ঠানের সঞ্চলনা করেন সেন্টার ফর গভর্নেন্সের নির্বাহী পরিচালক জিল্লুর রহমান। অনুষ্ঠানে কী নোট উপস্থাপন করেন সেন্টার ফর পিচ অ্যান্ড জাস্টিসের নির্বাহী পরিচালক ব্যারিস্টার মানজুর হাসান।
অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ পলিটিক্যাল সায়েন্স অ্যাসোসিয়েশনের প্রেসিডেন্ট ও সেন্টার ফর গভর্নেন্সের চেয়ারম্যান অধ্যাপক এম আতাউর রহমান, বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আতাউর রহমান ডালি, জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের সাবেক চেয়ারম্যান ড. মুহাম্মদ আব্দুল মজিদ, ব্রতীর প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা শারমিন মুরশিদ, ফেমার প্রেসিডেন্ট মুনিরা খান, সাবেক প্রতিমন্ত্রী আবুল হাসান চৌধুরী, গণ সংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক জোনায়েদ সাকী, বিএনপির আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিষয়ক সহকারী সম্পাদক ব্যারিস্টার রুমিন ফারহানা, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক অ্যাসোসিয়েশনের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ড. মামুন আহমেদ, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সরকার ও রাজনীতি বিভাগের অধ্যাপক আব্দুল লতিফ মাসুম, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক সাহাব এনাম খান, পুলিশের সাবেক মহাপরির্দশক এম ইনামুল হক, সেন্টার ফর গভর্নেন্সের ভাইস চেয়ারম্যান ড. মানজুর আহমেদ চৌধুরী প্রমুখ।
সোনালীনিউজ/এমটিআই
আপনার মতামত লিখুন :