বিআরটিসির বাস বন্ধ ৫০ রুটে!

  • নিজস্ব প্রতিবেদক | সোনালী নিউজ
  • প্রকাশিত: মে ২৯, ২০১৬, ০২:৩২ পিএম
বিআরটিসির বাস বন্ধ ৫০ রুটে!

বেসরকারি বাস মালিকদের চাপে দিন দিন সঙ্কুচিত হয়ে পড়েছে সরকারি সড়ক পরিবহন কর্পোরেশনের (বিআরটিসি) কার্যক্রম। বন্ধ হয়ে যাচ্ছে গুরুত্বপূর্ণ রুটে বাস চলাচল। গত দেড় দশকে দেশের অন্তত ৫০টি রুটে বিআরটিসির বাস চলাচল বন্ধ হয়ে গেছে। বর্তমানে সংস্থাটির বাস এখন সেবা ও প্রতিযোগিতার বদলে রাজধানীতে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের কর্মীদের বহনের স্টাফ বাস হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে।

তাছাড়া বেসরকারি মালিক-শ্রমিকদের পরিবহন চাপের মুখে খুলনা ও পাবনা জলায় বিআরটিসি বাস চলাচল বন্ধ রয়েছে। এমনকি নতুন বিভাগীয় শহর ময়মনসিংহে সরকারি পরিবহন সংস্থাটি বাস ডিপোও নির্মাণ করতে পারছে না। বিআরটিসি সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।

সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, বিগত ১৫ বছরে বিভিন্ন মহলের যোগসাজশে বিআরটিসির পরিবহন সেবা কার্যক্রম ক্রমাগত সঙ্কুচিত করা হয়েছে। ২০০১ সালে সারাদেশে বিআরটিসি'র যাত্রীবাহী বাস চলাচল করতো ১৯৩টি রুটে। কিন্তু বেসরকারি বাস মালিক-শ্রমিকদের বিরোধিতার কারণে বর্তমানে মাত্র দেড়শ রুটে ৪১৯টি বাস চলাচল করছে।

বর্তমান সরকারের আমলে ঢাকা-নরসিংদী রুটে বাস চলাচল বন্ধ হয়ে গেছে। আগে ওই রুটে ১০টি বাস চলতো। চট্টগ্রাম-রাঙ্গামাটি রুটে চলতো ৯টি বাস। এখন চলছে ৬টি। তাছাড়া স্থানীয় বেসরকারি বাস মালিক-শ্রমিকদের চাপে খুলনা-রায়েন্দা, খুলনা-বরিশাল ও খুলনা-আমুয়া রুটে বিআরটিসির নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় চলাচল করা অন্তত ৪০টি বাস বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। পাবনা জেলায় ১০টি বাস চলাচল বন্ধ রয়েছে। তাছাড়া রাজশাহীসহ পুরো উত্তরাঞ্চলে বিআরটিসি'র কোনো দ্বিতল বাস চলাচল করতে পারে না। একইভাবে ঢাকা-লক্ষ্মীপুরসহ দেশের ৫০টি রুটে বিআরটিসি বাস চলাচল বন্ধ আছে।

সূত্র জানায়, বিগত ২০০৪ সালে তৎকালীন যোগাযোগমন্ত্রী নাজমুল হুদা বেসরকারি বাস মালিকদের সাথে চুক্তি করে ঢাকার বাইরে চলাচলরত বিআরটিসির ১শ’ বাস তুলে নেয়। তখন বিআরটিসির সবচেয়ে জনপ্রিয় ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ ও ঢাকা-টঙ্গী বাস সেবাও বন্ধ হয়ে যায়। যদিও ১৯৬১ সালের অধ্যাদেশ অনুযায়ী বিআরটিসি কোনো কর্তৃপক্ষের অনুমোদন ছাড়াই যে কোনো রুটে নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় বা ইজারায় বাস চালু করতে পারে। কিন্তু বেসরকারি বাস মালিক-শ্রমিকদের কাছে নতিস্বীকার করে বিআরটিসি নতুন রুট চালু না করে বরং পুরোনো রুট গুটিয়ে ফেলা হচ্ছে।

সূত্র আারো জানায়, বিআরটিসি'র বাস সারাদেশের ২২টি ডিপো দ্বারা পরিচালিত হয়। তাতে মোট ১ হাজার ৫৩৮টি বাসের মধ্যে সচল রয়েছে ১ হাজার ৪৩টি বাস। তারমধ্যে ঢাকায় ১ হাজার ২টি বাসের মধ্যে চলাচল করছে ৬২৮টি। ঢাকার বাইরে ৫৩৬টি বাসের মধ্যে সচল রয়েছে ২৯৯টি। ঢাকাসহ সারাদেশের ৬১১টি গাড়ি অচল হয়ে পড়ে আছে। আর তার বেশিরভাগ বাসই বেসরকারি বাসের চালক ও শ্রমিকদের হামলায় নষ্ট হয়ে গেছে।

রাজধানীতে বেসরকারি বাসের শ্রমিকদের অত্যাচারের শিকার হতে হয় বিআরটিসি বাসগুলোকে। চলার পথে বিআরটিসি বাসের উপর হামলা করে বেসরকারি শ্রমিক ও চালকরা। ফলে বিআরটিসির নতুন বাস নামানোর কয়েক মাসের মধ্যে বিভিন্ন যন্ত্র নষ্ট হয়ে যায়। তাছাড়া বিআরটিসি বাসের বডিতে আঘাত গায়ের রং ও আস্তর নষ্ট করে দেয়া হচ্ছে। বর্তমানে ভলভো দ্বিতলসহ বিআরটিসির অন্তত দেড়শ বাস অকেজো হয়ে পড়ে আছে। অর্থের অভাবে সেগুলো মেরামত করা যাচ্ছে না। মতিঝিল থেকে মিরপুর ও টঙ্গী পথে বিআরটিসির ৫০টি ভলভো বাস চলাচল করতো। এই রুটগুলো খুব জনপ্রিয় ছিল। 

২০০১ সালে চালু হওয়ার পর প্রথম দিকে ৫০টি ভলভো বাসে দৈনিক সর্বোচ্চ ৫ লাখ টাকা পর্যন্ত আয় হয়েছে। ১০ মিনিট পরপর বাস ছাড়া হতো স্ট্যান্ড থেকে। ফলে যাত্রীদের দীর্ঘক্ষণ লাইনে দাঁড়িয়ে থেকে বাসের জন্য অপেক্ষা করতে হতো না। কিন্তু বর্তমানে বাসের সংখ্যা কমে যাওয়ায় ট্রিপও কমে গেছে। এই সুযোগ পুরোটা কাজে লাগাচ্ছে বেসরকারি বাস কোম্পানিগুলো। বিআরটিসির অকেজো বাসের মধ্যে অশোক লেল্যান্ড দ্বিতল বাস, টাটা কামিনস এবং চীনের তৈরি বাসও রয়েছে। অকেজো বাসগুলোর মধ্যে চীনের তৈরি বাসগুলো প্রগতির মাধ্যমে ২০০৬ সালে কেনা হয়েছিল।

এ প্রসঙ্গে বিআরটিসি'র চেয়ারম্যান মো. মিজানুর রহমান জানান, বেসরকারি বাস মালিকরা অনেক শক্তিশালী। তাদের চাপের কারণে অনেক জেলায় বিআরটিসি বাস চলাচল করতে পারে না। তাছাড়া ময়মনসিংহ শহরে একটি ডিপো নির্মাণের পরিকল্পনা রয়েছে কিন্তু বাস মালিকদের চাপের করাণে তা করা যাচ্ছে না। বেসরকারি বাস মালিক-শ্রমিকদের চাপের বিষয়টি সরকারের উচ্চ পর্যায়ে জানানো হলেও কোনো প্রতিকার পাওয়া যাচ্ছে না। কারণ বিআরটিসি বাসের জন্য মালিক-শ্রমিকরা পরিবহন ধর্মঘট ডাক দেয়।

সোনালীনিউজ/ঢাকা/আমা

সোনালী বিশেষ বিভাগের সাম্প্রতিক খবর

Link copied!