ঢাকা: স্বাধীনতার ৪০ বছরের বেশি সময় পেরিয়ে পাকিস্তান হানাদার বাহিনীর দোসর আলবদর-রাজাকারদের বিচার কার্যকর করা সম্ভব হয়েছে। সেই প্রক্রিয়া ১৯৭২ সালেই শুরু হয়েছিল। ১৯৭২ সালের ২৩ জানুয়ারি ছিল রোববার। মুক্তি সংগ্রাম শেষ হয়েছে, তবে সমৃদ্ধি ও অগ্রগতির পথে দেশকে এগিয়ে নেওয়ার জন্য পুনর্গঠন সংগ্রাম চালিয়ে যেতে হবে, এরইমধ্যে একাধিকবার এ কথা উল্লেখ করেছেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। এইদিনে প্রথমবারের মতো দালালদের বিচারে প্রয়োজনীয় আইন প্রণয়নের বিষয়ে সুস্পষ্ট মন্তব্য করা হয়। দৈনিক বাংলার ২৪ তারিখের পত্রিকা থেকে ২৩ জানুয়ারির সংবাদ বিষয়ে জানা যায়। সেই দিন লিড স্টোরি ছিল ‘প্রয়োজনীয় আইন তৈরি করা হচ্ছে: ন্যায্য বিচার ছাড়া কাউকে শাস্তি দেওয়া হবে না, বিশেষ ট্রাইব্যুনালে দালালদের বিচার।’
কৃষিমন্ত্রী শেখ আব্দুল আজিজের বরাত দিয়ে সংবাদে বলা হয়— তিনি ঘোষণা করেন যে, দালালদের বিচার করার জন্য বিশেষ ট্রাইব্যুনাল গঠন করা হবে। স্থানীয় সার্কিট হাউজ ময়দানে এক জনসমাবেশের বক্তৃতায় তিনি বলেন, ‘এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় আইন তৈরি করা হচ্ছে, ন্যায্য বিচার ছাড়া কাউকে শাস্তি দেওয়া হবে না।’ মন্ত্রী বলেন, ‘দেশে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা করা এই মুহূর্তের প্রয়োজন।’ এজন্য তিনি জনগণের সর্বাধিক সহযোগিতা কামনা করেন। তিনি মুক্তি বাহিনী ও অন্যদের প্রতি অস্ত্র সমর্পণের জন্য বঙ্গবন্ধুর ডাকে সাড়া দেওয়ার আহ্বান জানান।
মওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানী এদিন (২৩ জানুয়ারি) জাতির উদ্দেশে প্রদত্ত এক বাণীতে শোষণমুক্ত সমাজ গড়ে তুলতে সরকারি প্রচেষ্টায় সহযোগিতা করার জন্য সবার প্রতি আহ্বান জানান। এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, দেশে সমাজতন্ত্রের লক্ষ্য অর্জনে তিনি ও তার দল সরকারকে সর্বাত্মক সাহায্য করবেন। গত নির্বাচনে সমাজতন্ত্রের জন্য আওয়ামী লীগের প্রতিশ্রুতির কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘সুখী ও সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ে তোলার জন্য সমাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করতে হবে।’ ২৪ জানুয়ারি বাংলাদেশ অবজারভার পত্রিকাতেও গুরুত্বের সঙ্গে এ প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়, যেখানে ভাসানী আহ্বান জানাচ্ছেন— বঙ্গবন্ধুকে সহযোগিতা করতে। তিনি বলেন, রাজনৈতিক মতাদর্শ নির্বিশেষে সমাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠার কাজে সবারই সমর্থন দেওয়া উচিত। দেশ ও স্বাধীনতা সংগ্রামের বিরুদ্ধে যারা কাজ করেছে, তাদের শাস্তি দেওয়ার জন্য মওলানা ভাসানী আবেদন জানান। তবে গণতন্ত্রের খাতিরে তাদের আদালতে সোপর্দ করা উচিত বলেও তিনি মন্তব্য করেন। কোনও দালালকে ছেড়ে দেওয়া ঠিক হবে না বলেও উল্লেখ করেন। বার্তা সংস্থা এনার সঙ্গে এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, ‘কোনও কোনও বৃহৎ শক্তি পাকিস্তান ও বাংলাদেশের মধ্যে একটা যোগসূত্র স্থাপনের চেষ্টা করছে। বাংলাদেশের জনগণ এই ষড়যন্ত্র প্রতিহত করবে।’ তিনি বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সভাপতি হতে পারেন এই গুজবকে জল্পনা-কল্পনা বলে নাকচ করে দেন। ভাসানী জানান, আওয়ামী লীগের ভেতরে বা বাইরে কারও সঙ্গে তার এব্যাপারে আলোচনা হয়নি। তিনি কারও নাম উল্লেখ না করে বলেন, ‘কারা এই গুজব ছড়াচ্ছে আমি জানি।’
এদিকে নেতাজি সুভাষ চন্দ্র বসুর ধাত্রী পুত্র অমিয় নাথ বসু ২৩ জানুয়ারি প্রধানমন্ত্রী শেখ মুজিবুর রহমানের সঙ্গে তার সরকারি বাসভবনে সাক্ষাৎ করেন এবং নেতাজির ৭৫তম জন্মবার্ষিকীর দিনে বঙ্গবন্ধুকে নেতাজির একটি প্রতিকৃতি উপহার দেন। এনা পরিবেশিত খবরে বলা হয় যে, প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাতের সময় ভারতীয় পার্লামেন্ট সদস্য ও সোশালিস্ট পার্টি প্রধানও অমিয় বসুর সঙ্গে উপস্থিত ছিলেন।
এছাড়া ২৩ জানুয়ারি প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ঈদুল আজহার কারণে অস্ত্রশস্ত্র জমা দেওয়ার সময়সীমা ৩১ জানুয়ারি পর্যন্ত বাড়িয়ে দেন। অস্ত্র সমর্পণের শেষ তারিখ ছিল ২৭ জানুয়ারি। এইদিনে প্রধানমন্ত্রীর অফিস থেকে অস্ত্র জমা দেওয়ার তারিখ বাড়িয়ে দেওয়ার কথা ঘোষণা করা হয়। বাসস-এর খবরে বলা হয় যে, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৭ জানুয়ারি নির্দেশ দিয়েছিলেন— ১০ দিনের মধ্যে মুক্তি সংগ্রামে অংশগ্রহণকারী সব মুক্তিযোদ্ধাকে অস্ত্রশস্ত্র জমা দেওয়ার। ঈদের দিনে মুক্তিযোদ্ধাদের যেন কোনও রকম অসুবিধা না হয়, তার জন্যই অস্ত্রশস্ত্র জমা দেওয়ার সময়সীমা বাড়িয়ে দেওয়া হয়েছে।
সোনালীনিউজ/আইএ
আপনার মতামত লিখুন :