ঢাকা: জাতীয় সংসদে ৬০টি সংরক্ষিত আসন চায় হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের নেতারা। এছাড়া তাদের সাত দফা দাবির মধ্যে অন্যতম আরও দুটি দাবি হল সংখ্যালঘুবিষয়ক পৃথক মন্ত্রণালয় ও সংখ্যালঘু কমিশন গঠন।
শুক্রবার ও শনিবার দু’দিনব্যাপী হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের নবম জাতীয় সম্মেলন থেকে এসব দাবি জানানো হয়। রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইন্সটিটিউশন মিলনায়তনে দু’দিনব্যাপী এই ত্রিবার্ষিক জাতীয় সম্মেলন থেকে রাজনীতিবিদ ও নাগরিক সমাজের নেতারা বলেন, জাতি-ধর্মের রোষানলে দেশ প্রায় ধ্বংসের পথে।
আজ কেবল সংখ্যালঘুই আক্রান্ত নয়, মুক্তিযুদ্ধ ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনা আক্রান্ত, ধর্মনিরপেক্ষতা ও অসাম্প্রদায়িকতাও আক্রান্ত। সার্বিকভাবে গোটা বাংলাদেশই আক্রান্ত। এর বিরুদ্ধে সবাইকে একসঙ্গে লড়াইয়ে নামতে হবে। মুক্তিযুদ্ধের বাংলাদেশ রক্ষায় সংখ্যালঘুদের ন্যায্য অধিকার কড়ায় গণ্ডায় বুঝিয়ে দিতে হবে।
সম্মেলন উদ্বোধন করে অধ্যাপক রেহমান সোবহান বলেন, জাতি-ধর্মের রোষানলে দেশ প্রায় ধ্বংসের পথে। বর্তমানে জাতি-ধর্ম নিয়েই সবচেয়ে বেশি বিভেদ দেখা দিয়েছে। এ অবস্থা থেকে ফিরে আসতে হবে। বিভিন্ন ক্ষেত্রে বিভেদ ও পার্থক্য দূর না হলে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা করা যাবে না।
সংখ্যালঘু নির্যাতনের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ আন্দোলন গড়ে তোলার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, দেশকে নিয়ে কোনো ষড়যন্ত্র মেনে নেয়া হবে না। কোনো ধর্মের ওপর আক্রমণও গ্রহণযোগ্য নয়। তাই দেশের স্বার্থে কিংবা ন্যায্য অধিকার আদায়ে সবাইকে এক হয়ে লড়াই করতে হবে।
হাসানুল হক ইনু বলেন, এ দেশের মাটি অসাম্প্রদায়িকতার। এখানে কোনো জঙ্গি-দানবের জায়গা নেই। কিন্তু জঙ্গির সঙ্গী ও সিন্ডিকেটের প্রধান খালেদা জিয়া জামায়াত ও যুদ্ধাপরাধীদের নিয়ে দেশকে ধ্বংস করার পাঁয়তারা করছেন। তাই অসাম্প্রদায়িক সমাজ গড়ে তুলতে হলে খালেদা জিয়াকে রাজনীতি থেকে বিতারণ ও বয়কট করতে হবে।
সরকার ও ক্ষমতাসীন দলের ‘হেফাজত তোষণ নীতির’ কঠোর সমালোচনা করে মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম বলেন, জামায়াতিকরণের বিরুদ্ধে হেফাজতিকরণের অপপ্রয়োগ করা হচ্ছে। কিন্তু মনে রাখতে হবে, আগুন দিয়ে আগুন নেভানো যায় না। বরং আগুনের বিরুদ্ধে প্রতিরোধের সংগ্রাম গড়ে তুলতে হবে। যার অস্ত্র হচ্ছে ধর্মনিরপেক্ষতা। সমাধান হচ্ছে মুক্তিযুদ্ধের চার মূলনীতির ধারায় দেশকে এগিয়ে নেয়া।
পংকজ ভট্টাচার্য বলেন, ২০১৩ সালের ৫ মে হেফাজত পরাজিত হয়ে ফিরে গেল। আজ সেই হেফাজতই বিনাযুদ্ধে জয়ী হয়ে গেল পাঠ্যপুস্তকে, নারীনীতিতে। প্রশাসনেও পাকিস্তানিরা ঢুকে গেছে। তাই প্রশাসন, সরকার ও দলেও আত্মশুদ্ধি চাই।
বীরেন শিকদার বলেন, বর্তমান সরকার মুক্তিযুদ্ধের সরকার। একে টিকিয়ে রাখতে হবে। আর সংখ্যালঘুরা দেশত্যাগ করবেন না। নির্যাতনের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াবেন, প্রতিরোধ গড়ে তুলবেন।
শাহরিয়ার কবির বলেন, দেশে এখন সবচেয়ে বেশি সংকট চলছে। একদিকে আওয়ামী লীগকে জামায়াতমুক্ত করতে হবে, ধর্মনিরপেক্ষতার ধারায় রাখতে হবে। আরেক দিকে মৌলবাদী সাম্প্রদায়িক অপশক্তি নির্মূল করতে হবে।
সংখ্যালঘুদের ব্যাপক সংখ্যায় দেশত্যাগের কথা তুলে ধরে কামাল লোহানী বলেন, আমরা ব্যর্থ হয়েছি, যারা মুক্তিযুদ্ধে আমাদের সহযোদ্ধা ও সাথী ছিলেন, তাদের ধরে রাখতে পারিনি। এ দেশে তাদের সংখ্যা ৩০ ভাগ থেকে আট ভাগে নেমে এসেছে। সংবিধানে রাষ্ট্রধর্ম ও বিসমিল্লাহ রেখে দিয়ে বঙ্গবন্ধুর আদর্শ ও নীতিকেই অমান্য করা হয়েছে।
সম্মেলনে সারা দেশ থেকে আসা ঐক্য পরিষদের প্রতিনিধিরা যোগ দিয়েছেন। শেষদিন শনিবার (৮ এপ্রিল) সকাল ১০টা থেকে কাউন্সিল অধিবেশন এবং বিকাল ৫টায় সমাপনী অধিবেশন অনুষ্ঠিত হবে।
সোনালীনিউজ/ঢাকা/জেডআরসি/এইচএআর
আপনার মতামত লিখুন :