ঢাকা : একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রার্থী হতে ৩০০ আসনেই দলীয় মনোনয়ন চূড়ান্ত করেছে বিএনপি। বিএনপির নেতা-কর্মীদের সবার চোখ গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসন কার্যালয়ের দিকে। সম্ভাব্য সব প্রার্থীই এখন ঢাকায় অবস্থান করছেন। টেনশনে ঘুম হারাম তাদের। প্রার্থী তালিকায় নিজের নাম আছে কিনা জানতে চেয়ে ছোটাছুটি করছেন তারা।
ব্যারিস্টার রফিকুল ইসলাম মিয়া। ঢাকা-১৬ ও কুমিল্লা-৩ আসনে নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। মনোনয়নপত্র দাখিল করে দলীয় সাক্ষাৎকার পর্বও শেষ হয়েছে। এরই মধ্যে সম্পদের হিসাব দাখিল না করার এক মামলায় তাকে তিন বছরের সাজা দেয় আদালত। বর্তমানে তিনি কারাগারে। তার সাজা বাতিল চেয়ে উচ্চ আদালতে আবেদনের প্রস্তুতি চলছে। দলীয় প্রার্থী হিসেবে তাকে চিঠি দেবে বিএনপি।
পাশাপাশি তার সহধর্মিণী অধ্যাপক শাহিদা রফিককেও পৃথক চিঠি দেওয়া হবে। শেষ পর্যন্ত ব্যারিস্টার রফিক নির্বাচন করতে না পারলে ঢাকা-১৬ বা কুমিল্লা-৩ আসনে শাহিদা রফিকই হবেন বিএনপির দলীয় প্রার্থী। এক্ষেত্রে কৌশলী অবস্থান নিয়েছে দলটি। বিএনপির আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক সাবেক শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী এহছানুল হক মিলনের পাশাপাশি তার সহধর্মিণী নাজমুন্নাহার বেবিও মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। কোনো কারণে এহছানুল হক মিলন নির্বাচন না করলে চাঁদপুর-১ আসনে নাজমুন্নাহার বেবিই হবেন বিএনপির প্রার্থী।
বিএনপিতে শুধু এই দুই নেতাই নন, বেশ কিছু আসনেই একই অবস্থা। সেখানে বিকল্প বা ডামি প্রার্থীও রাখা হচ্ছে। এক্ষেত্রে কৌশলী সিদ্ধান্ত নেবে বিএনপি। আওয়ামী লীগের মনোনয়ন ঘোষণার পর বিএনপি ও ২০-দলীয় জোট-ঐক্যফ্রন্টের প্রার্থী ঘোষণা করা হবে। তিন দিন ধরে টানা বিএনপির স্থায়ী কমিটির দফায় দফায় বৈঠক চলছে। দিনের পর মধ্যরাত পর্যন্ত গড়াচ্ছে বৈঠক। তবুও দলীয় প্রার্থী চূড়ান্ত করতে হিমশিম খাচ্ছে বিএনপি। আবার জোটের জন্যও নিজেদের আসন থেকে অন্তত ৫০টি ছেড়ে দিতে হচ্ছে।
শনিবার (২৪ নভেম্বর) সকাল ১০টা থেকে গভীর রাত পর্যন্ত বৈঠক করে ৩০০ আসনেই দলীয় মনোনয়ন চূড়ান্ত করে বিএনপি।
বিএনপি সর্বশেষ ২০০৮ সালের নবম সংসদ নির্বাচনে অংশ নিয়েছিল। ওই সময় ২৫৯টি আসনে বিএনপি এককভাবে দলীয় প্রার্থী দিয়েছিল। ওই নির্বাচনে জামায়াতে ইসলামীসহ জোটের অন্য শরিকদের ৪১টি আসন ছেড়েছিল বিএনপি। এবারও বিএনপি ২০ দল ও ঐক্যফ্রন্টের জন্য সর্বোচ্চ ৫০টি আসন ছাড়ার কথা ভাবছে।
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘আমরা এখনো দলীয় প্রার্থী চূড়ান্ত করছি। এ নিয়ে স্থায়ী কমিটির বৈঠক চলছে। ২০-দলীয় জোট ও জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের সঙ্গে এখনো আসন বণ্টন চূড়ান্ত হয়নি। তবে এ নিয়ে কোনো জটিলতা হবে না। খুব শিগগিরই ৩০০ আসনে দল ও দুই জোটের প্রার্থী চূড়ান্ত করা হবে।’
সূত্র জানায়, ধানের শীষ প্রতীকে বিএনপির পক্ষ থেকে আসনপ্রতি একাধিক প্রার্থীকে দলীয় মনোনয়নের চিঠি দেওয়া হচ্ছে। আগামী মঙ্গলবার বিকালের মধ্যেই গুলশান কার্যালয় থেকে তাদের আনুষ্ঠানিকভাবে এই চিঠি দেওয়া হতে পারে। পরদিন বুধবার সকালে সম্ভাব্য প্রার্থীরা ওই চিঠিসহ মনোনয়নপত্র দাখিল করবেন। ওইদিন বিকালেই দলের পক্ষ থেকে আরেকটি চূড়ান্ত চিঠি দেওয়া হবে ধানের শীষের প্রার্থীকে। দলীয় প্রার্থীর প্রতীক সংক্রান্ত চিঠির একটি কপি ঢাকায় নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ে জমা দেওয়া হবে। আরেকটি কপি ফ্যাক্সে বা বিশেষ বার্তা বাহকের মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট প্রার্থীকে পাঠানো হবে। তিনি ওই চিঠি নিয়ে জেলা নির্বাচন কমিশন কার্যালয়ে জমা দেবেন।
জানা যায়, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপির অন্তত অর্ধশত আসনে আসছে নতুন মুখ। কোথাও কোথাও নেতারা মারা যাওয়া কিংবা বার্ধক্যজনিত কারণে ওইসব আসনে পরিবারের পক্ষ থেকে কিংবা বিএনপির যোগ্য কোনো নেতাকেই মনোনয়ন দেওয়া হবে। দু-এক দিনের মধ্যে ২০-দলীয় জোট ও জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের প্রার্থী তালিকাও চূড়ান্ত হতে পারে।
জানা যায়, বার্ধক্যের কারণে স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার জমির উদ্দিন সরকার নির্বাচন করছেন না। পঞ্চগড়-১ আসনে নতুন মুখ হিসেবে জমির উদ্দিন সরকারের ছেলে তরুণ ব্যারিস্টার নওশাদ জমিরই বিএনপির সম্ভাব্য প্রার্থী। পঞ্চগড়-২ আসনেও এবার নতুন মুখ দেখা যাবে। সেখানে বিএনপির প্রার্থী হিসেবে দলের নির্বাহী কমিটির সদস্য ফরহাদ হোসেন আজাদ চূড়ান্ত। কিন্তু ২০ দলের শরিক জাগপাকে ছেড়ে দিতে হলে ওই আসনে জাগপা প্রধান মরহুম শফিউল আলম প্রধানের মেয়ে ব্যারিস্টার তাসমিয়া প্রধান নির্বাচন করতে পারেন।
দিনাজপুর-২ আসনেও এবার নির্বাচনে লড়ছেন না বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য লে. জেনারেল (অব.) মাহবুবুর রহমান। ওই আসনে বিএনপির স্থানীয় নেতা মঞ্জুরুল ইসলাম দলীয় মনোনয়নপত্র নিয়েছেন। বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য তরিকুল ইসলাম মারা যাওয়ায় যশোর-৩ আসনে অনিন্দ্য ইসলাম অমিত নির্বাচন করতে পারেন।
এ ছাড়া বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আ স ম হান্নান শাহ, এম কে আনোয়ার, খোন্দকার দেলোয়ার হোসেন, এম শামসুল ইসলাম ও ড. আর এ গণিও মারা গেছেন। আরেক সদস্য সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর যুদ্ধাপরাধী হিসেবে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হয়েছে। এক্ষেত্রে খোন্দকার দেলোয়ারের মানিকগঞ্জ-১ আসনে খোন্দকার আখতার হামিদ ডাবলু বা জেলার সাংগঠনিক সম্পাদক এস এম জিন্নাহ কবীরের নির্বাচন করার সম্ভাবনা রয়েছে।
সাকা চৌধুরীর চট্টগ্রাম-৭ আসনে তার ছেলে হুম্মাম কাদের চৌধুরী বা স্ত্রী ফারহাত কাদের চৌধুরী, হান্নান শাহর গাজীপুর-৪ আসনে ছেলে রিয়াজুল হান্নান নির্বাচন করতে পারেন। আর এম শামসুল ইসলামের মুন্সীগঞ্জ-৩ আসনে সাবেক ছাত্রনেতা জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক কামরুজ্জামান রতন, জেলা বিএনপির সভাপতি আবদুল হাই ও শামসুল ইসলামের ছেলে সাইফুল ইসলাম মনোনয়ন চেয়েছেন।
মানিকগঞ্জ-২ আসনে সাবেক মন্ত্রী শামসুল ইসলাম খানের ছেলে মঈনুল ইসলাম শান্ত, মানিকগঞ্জ-৩ আসনে মরহুম হারুন অর রশীদ খান মুন্নুর আসনে তার মেয়ে আফরোজা খান রিতা নির্বাচন করতে পারেন। নওগাঁ-৩ আসনে সাবেক ডেপুটি স্পিকার আখতার হামিদ সিদ্দিকীর ছেলে পারভেজ হামিদ সিদ্দিকী মনোনয়ন পেতে পারেন।
ফজলুর রহমানের (পটল) নাটোর-১ আসনে তার স্ত্রী কামরুন্নাহার শিরিন বা বিএনপির কেন্দ্রীয় সহ-দফতর সম্পাদক তাইফুল ইসলাম টিপু, জয়পুরহাট-১ ফয়সল আলীম, চাঁদপুর-২ এ নূরুল হুদার আসনে জালাল উদ্দিন অথবা আতাউর রহমান ঢালী নির্বাচন করতে পারেন। এ ছাড়া বগুড়া-২ (শিবগঞ্জ) আসনে প্রার্থী হতে পারেন ঐক্যফ্রন্টের মাহমুদুর রহমান মান্না।
কক্সবাজার-১ (চকরিয়া) আসনে এবারও প্রার্থী হতে পারছেন না বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ। অনুপ্রবেশ আইনের মামলায় তিনি এখনো ভারতের মেঘালয়ের রাজধানী শিলংয়ে অবস্থান করছেন। মামলায় তিনি বেকসুর খালাস পেলেও আইনি জটিলতায় তার দেশে ফিরতে দেরি হচ্ছে। ২০০৮ সালের মতো এবারের নির্বাচনেও ওই আসনে বিএনপির প্রার্থী হচ্ছেন সালাহউদ্দিন আহমেদের সহধর্মিণী হাসিনা আহমেদ।
এ প্রসঙ্গে গতকাল সন্ধ্যায় শিলং থেকে সালাহউদ্দিন আহমেদ জানান, ‘অনুপ্রবেশ মামলায় আমি খালাস পেলেও আইনি জটিলতায় এখনো আমি ভারতে। এ জন্য আমি দলীয় মনোনয়ন ফরমও সংগ্রহ করিনি।
সোনালীনিউজ/এমটিআই
আপনার মতামত লিখুন :