ঢাকা : প্রতি বছর দেশে গড়ে ১০ হাজারের বেশি মানুষ আত্মহত্যা করছে। এই সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। পুলিশ সদর দপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, গত চার বছরের মধ্যে ২০১৭ সালে আত্মহত্যার সংখ্যা সবচেয়ে বেশি। বিশেষ করে উচ্চ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের আত্মহত্যায় বাড়ছে উদ্বেগ। সমাজবিজ্ঞানী ও মনোবিজ্ঞানীরা মনে করেন, মানবিক সমাজ গঠনই, পারে আত্মহত্যার প্রবণতা কমিয়ে আনতে।
‘আত্মহননের পথ বেছে নেয়া জীবনের কি কোনো সমাধান হতে পারে? এমন প্রশ্ন ছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের কাছে। অবশ্য উত্তর এসেছে জীবনের জয়গানের।
তারা জানায়, মানুষ অনেক কারণেই হতাশ হতে পারে, তাই বলে আত্মহত্যা করাটা কোন সমাধান হতে পারে না। জীবন অনেক সুন্দর, হতাশা জীবনেরই অংশ। আমরা যদি আমাদের জীবন শুরু হওয়ার আগেই শেষ করে ফেলি তাহলে তো জীবনের মজাটাই পেলাম না। আমাদের কাছে জীবন হচ্ছে বন্ধুদের সাথে আড্ডা দেয়া, গান গাওয়া আর সুন্দর মুহুর্তগুলো উপভোগ করা।
কণ্ঠশিল্পী ফকির আলমগীর বলেন, ‘এই জীবন অসাধারণ সুন্দর। শিল্পীরাও তাদের গানে গানে বলে গিয়েছেন আজ জীবন খুঁজে পাবি, ছুটে ছুটে আয়। আত্মহত্যা কখনোই কোন সমাধান হতে পারে না।’
গত চার বছরের হিসাবে ২০১৭ সালে আত্মহত্যার সংখ্যা সব থেকে বেশি। অর্থাৎ গড়ে প্রতিদিন ৩০ জন স্বেচ্ছায় মৃত্যু বেছে নিয়েছেন। এ বছর শুধু উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ১৩ জনের আত্মহত্যার খবর গণমাধ্যমে এসেছে। এর মাঝে ৯ জন শিক্ষার্থী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের। গেল সোমবার ভিকারুন নিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজের শিক্ষার্থী অরিত্রী অধিকারী আত্মহত্যা করেন। এ নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমসহ দেশজুড়ে আলোচনা-সমালোচনার ঝড় বয়ে যাচ্ছে।
পুলিশ সদর দপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, ২০১৭ সালে সারাদেশে ১১ হাজার ৯৫ জন আত্মহত্যা করেছেন। ২০১৬ সালে ১০ হাজার ৬০০ জন, ২০১৫ সালে ১০ হাজার ৫০০ এবং ২০১৪ সালে ১০ হাজার ২০০ জন আত্মহত্যা করেন।
মাজবিজ্ঞানী ও মনোবিদরা বলছেন, মানবিক সমাজ গঠণের কথা। তারা বলছেন, একটি মানবিক সমাজব্যবস্থা গড়ে তুলতে পারলেই কমে আসবে আত্মহননের প্রবণতা।
জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের মনোরোগ বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডা. তাজুল ইসলাম বলেন, ‘আমরা যদি সবার সাথে মানবিক এবং সহানুভুতি দেখাতাম, সমাজ অনেক বেশি আনন্দদায়ক ও সহনীয় হতো। তাহলে আত্মহননের প্রবণতাও কমে আসতো।’
সমাজবিজ্ঞানী অধ্যাপক নেহাল করিম বলেন, ‘শুধু বড় বড় ডিগ্রী থাকলেই একজন মানুষ ভালো চরিত্রের বা মার্জিত স্বভাবের লোক হবে এমনটা নয়। আগামী সুন্দর ভবিষ্যতের জন্য মানবিক সমাজ গঠণের চর্চাটা আমাদের বাড়ানো উচিত।’
এছাড়া তারা বলছেন, সুস্থ সংস্কৃতির চর্চাও বদলে দেয় জীবনের গতিপথ। শেখায় মানবিক সমাজ গঠন। আত্মহত্যাই কি জীবনের সমাধান? মানবিক সমাজ গঠনে এগিয়ে যাওয়াই হোক জীবনের প্রত্যয়।
সোনালীনিউজ/এমটিআই
আপনার মতামত লিখুন :