ঢাকা : ম্যাচটি আর্জেন্টিনার জন্য যতটা ছিল কোপা আমেরিকার ফাইনালে হারের প্রতিশোধের তার চেয়ে বেশি রাশিয়া বিশ্বকাপে জায়গা করে নেয়ার লড়াইয়ে টিকে থাকার। মেসির একমাত্র গোলে চিলিকে হারিয়ে দুটো লক্ষ্যই পূরণ করেছে এদগার্দো বাউজার শিষ্যরা।
পেনাল্টিটা নেওয়ার সময় কে জানে, গত বছর শতবার্ষিকী কোপা আমেরিকার ফাইনালে টাইব্রেকারের কথা মনে পড়ছিল কি না লিওনেল মেসির?
সেই ব্রাভোই গোলকিপার, বলটাও সেই পেনাল্টি স্পটেই। সেবার বলটা উড়িয়ে মেরেছিলেন বারের ওপর দিয়ে। আর্জেন্টিনাও টানা তৃতীয়বারের মতো কোনো টুর্নামেন্টের ফাইনালে উঠে হেরে যায়। কিন্তু এবার আর ভুল হলো না আর্জেন্টিনা অধিনায়কের। ধারাভাষ্যকারের মতো করে বললে, ওই সময় যেন স্টেডিয়ামের সবচেয়ে ঠান্ডা মাথার মানুষটিই ছিলেন মেসি।
পেনাল্টি থেকে মেসির ওই গোলেই আজ দক্ষিণ আমেরিকা অঞ্চলের বিশ্বকাপ বাছাইপর্বে চিলিকে ১-০ গোলে হারাল আর্জেন্টিনা।
এদগার্দো বাউজার সূত্র মেনেই তাহলে ম্যাচটা জিতলেন মেসিরা! ম্যাচের আগে আর্জেন্টিনা কোচ বলেছিলেন, জয় কীভাবে এল সেটি বড় ব্যাপার নয়, জয়টা এলেই হলো। তা চিলির বিপক্ষে আর্জেন্টিনা জিতল ঠিকই, তবে সেটি সুন্দর ফুটবল খেলে এসেছে, তা আর্জেন্টিনার পাঁড় ভক্তও দাবি করবেন না।
সত্যি বলতে, দুই দলের কেউই খুব একটা ভালো খেলেনি। চিলি তো বলতে গেলে ম্যাচে এসেছেই শেষ আধা ঘণ্টায়। আর মেসি-মাচেরানো ছাড়া আর্জেন্টিনার অন্য ফুটবলাররাও ঠিক নজর কাড়তে পারেননি। তবে শেষ পর্যন্ত স্বস্তি নিয়ে ফিরতে পারছেন তাঁরা, ম্যাচের শেষ দিকে চিলির একের পর এক আক্রমণ সামলে নিয়ে অন্তত জয় নিয়ে তো ফিরতে পারছেন।
১৬ মিনিটে পেনাল্টি থেকে মেসির করা গোলটিই ম্যাচে গড়ে দিল ব্যবধান। তবে শুধু এই ম্যাচ নয়, গোলটা আর্জেন্টিনার বিশ্বকাপ বাছাইপর্বেও কিছুটা রং চড়াল। ম্যাচের আগে আর্জেন্টিনা ছিল ১৯ পয়েন্ট নিয়ে তালিকার পাঁচে, আজকের ম্যাচে জয়ে তারা উঠে গেল তালিকার তিনে। পয়েন্ট ২২। সেরা চারের মধ্যে থেকে সরাসরি রাশিয়া বিশ্বকাপে খেলার আশার পালেও তাই লাগল জোর হাওয়া।
ম্যাচে তেমন বলার মতো কিছু অবশ্য ঘটেনি। মাঠের করুণ অবস্থাও অবশ্য সুন্দর ফুটবল না হওয়ার একটা কারণ। আর্জেন্টাইন ফুটবল অ্যাসোসিয়েশনে যে করুণ দশা চলছে, সেটির প্রতীকই হয়তো হয়ে থাকল মাঠের এই বেহাল অবস্থা।
এই এবড়ো থেবড়ো মাঠেও শুরু থেকে আলো ছড়াচ্ছিলেন মেসি। একবার ডি মারিয়াকে দুর্দান্ত একটা থ্রু দিলেন, এরপর মাঝমাঠে বল কেড়ে নিয়ে সার্জিও আগুয়েরোর সঙ্গে ওয়ান-টু খেলে আক্রমণে ওঠার চেষ্টা করেছিলেন। দুটি আক্রমণই ব্যর্থ হলো। কিন্তু ১৬ মিনিটে পেনাল্টি থেকে গোল করে দলকে ঠিকই এগিয়ে নিয়ে যান আর্জেন্টিনা অধিনায়ক। বক্সে ডি মারিয়াকে ফাউল করায় পেনাল্টি পায় আর্জেন্টিনা। সেটি থেকে আর্জেন্টিনার জার্সিতে নিজের ৫৮ তম গোল করলেন মেসি।
প্রথমার্ধে এরপরও আর্জেন্টিনা বেশ কয়েকটি আক্রমণ চালিয়েছিল। ৪৪ মিনিটে ডিফেন্ডার নিকোলাস ওটামেন্ডির সামনে তো দুর্দান্ত সুযোগ এসেছিল দলকে আরেকটু এগিয়ে নেওয়ার। কিন্তু পোস্টের দু-তিন গজ দূর থেকেও বলটাকে পোস্টে রাখতে পারলেন না ম্যানচেস্টার সিটির আর্জেন্টাইন ডিফেন্ডার।
দ্বিতীয়ার্ধে মিডফিল্ডার হোর্হে ভালদিভিয়াকে নামানোর পর অবশ্য বেশ ভালোভাবেই ম্যাচে ফেরে চিলি। একের পর এক আক্রমণ করতে থাকে। অ্যালেক্সিস সানচেজের একটি ফ্রি কিক ফেরে বারে লেগে। তার কিছুক্ষণ পর গোলকিপার সার্জিও রোমেরো বাঁচান আর্জেন্টিনাকে।
তবে শেষ পর্যন্ত রিভারপ্লেট স্টেডিয়ামে আসা স্বাগতিক দর্শকদের আর হতাশ হয়ে ফিরতে হয়নি। শেষ দিকে ঝাঁজালো হয়ে ওঠা চিলিকে দমিয়ে রেখে আর্জেন্টিনাই স্টেডিয়াম ছাড়ল হাসিমুখে।
আগের ম্যাচে পাওলিনিয়োর হ্যাটট্রিকে উরুগুয়েকে ৪-১ গোলে উড়িয়ে দেওয়া ব্রাজিল ৩০ পয়েন্ট নিয়ে বিশ্বকাপের টিকেট প্রায় নিশ্চিত করে ফেলেছে। উরুগুয়ে ২৩ পয়েন্ট নিয়ে আছে দ্বিতীয় স্থানে।
দিনের অন্য ম্যাচে হামেস রদ্রিগেসের একমাত্র গোলে বলিভিয়াকে হারিয়েছে কলম্বিয়া। ২১ পয়েন্ট নিয়ে চতুর্থ স্থানে আছে দলটি। প্যারাগুয়ের কাছে ২-১ গোলে হেরে যাওয়া একুয়েডর ২০ পয়েন্ট নিয়ে আছে পঞ্চম স্থানে।
আর্জেন্টিনাকে গত দুই কোপা আমেরিকাতেই টাইব্রেকারে হারানো চিলি এখন ২০ পয়েন্ট নিয়ে ষষ্ঠ স্থানে নেমে গিয়ে আছে শঙ্কায়। দক্ষিণ আমেরিকা অঞ্চলের ১০টি দেশের মধ্যে শীর্ষ চারটি দল সরাসরি রাশিয়া বিশ্বকাপের মূল পর্বে খেলবে। পঞ্চম দলটিতে প্লে-অফ খেলতে হবে ওশিয়ানিয়া অঞ্চলের চ্যাম্পিয়নদের সঙ্গে।
সোনালীনিউজ/এমটিআই
আপনার মতামত লিখুন :