দুটি সন্ত্রাসী গ্রুপের বিরোধের জের ধরেই রাজধানীর উত্তরায় স্কুলছাত্র আদনান খুন হয়েছে। ডিসকো গ্রুপ ও নাইন স্টার গ্রুপ নামে এই দুই সন্ত্রাসী গ্রুপ উত্তরা এলাকায় আধিপত্য বিস্তারের চেষ্টা চালিয়ে আসছে দীর্ঘদিন ধরে। নিহত আদনান নাইন স্টার গ্রুপের সদস্য ছিল। গতকাল সোমবার (০৯ জানুয়ারি) পুলিশ ও সংশ্লিষ্ট এলাকার বিভিন্ন লোকজনের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য পাওয়া গেছে।
উত্তরা (পশ্চিম) থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আলী হোসেন বলেন, তারা জানতে পেরেছেন নাইন স্টার ও ডিসকো গ্রুপের দ্বন্দ্বেই আদনান খুন হয়েছে। দুটি গ্রুপই এলাকায় আধিপত্য বিস্তারের চেষ্টা করছিল। আসামিরা যে গ্রুপেরই হোক না কেন তাদের গ্রেফতার করে আইনের আওতায় আনা হবে। হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত কেউ রেহাই পাবে না।
আদনান হত্যা মামলার তদন্ত কর্মকর্তা সাব-ইন্সপেক্টর শাহিন মিয়া বলেন, এ হত্যাকাণ্ডে জড়িত সন্দেহে গত শুক্রবার রাতেই নাফিজ মো. আলাম ওরফে ডন (১৯) ও সাদাফ জাকির (১৬) নামে দুজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তারা ডিসকো গ্রুপের সঙ্গে সম্পৃক্ত বলে পুলিশ জানতে পেরেছে। গত শনিবার তাদের আদালতে হাজির করে সাত দিনের রিমান্ডের আবেদন জানানো হয়। আদালত এক দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। তাদের ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত অন্যদেরও গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে। মামলায় এজাহারভুক্ত আসামিরা হলো- নাঈমুর রহমান অনিক, রায়হান আহমেদ সেতু, রবিউল ইসলাম, আখতারুজ্জামান ছোটন, আহমেদ জিয়ান, খন্দকার শুভ ও নাজমুস সাকিব।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, এলাকায় ডিসকো গ্রুপ ও নাইন স্টার গ্রুপের মধ্যে ভেতরে ভেতরে আধিপত্য বিস্তারের চেষ্টা অনেক দিন ধরেই চলে আসছে। গত বছর এই বিরোধের অবনতি হয়। এরই জের ধরে গত বছর নাইন স্টার গ্রুপের তালাচাবি রাজুকে কুপিয়ে মারাত্মকভাবে জখম করে ডিসকো গ্রুপের সন্ত্রাসীরা। এর পর থেকে ওই দুই গ্রুপের মধ্যে দ্বন্দ্ব লেগেই রয়েছে। কিছুদিন পরপরই হামলা আর পাল্টা হামলার ঘটনা ঘটেই চলছে। এরই জের ধরে আদনানকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে হত্যা করা হয় বলে পুলিশ তদন্তে জানতে পেরেছে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে স্থানীয় এক ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী বলেন, এলাকার লোকজন আদনান হত্যাকাণ্ডের সবকিছুই জানে। কিন্তু পুলিশি ঝামেলা এড়াতে এখন আর কেউ মুখ খুলছে না। নাইন স্টার ও ডিসকো গ্রুপের সবাই উচ্চবিত্ত পরিবারের সন্তান। তারা বিভিন্ন নামিদামি স্কুল-কলেজে লেখাপড়া করেন। এ দুই গ্রুপের মধ্যে মারামারি, অস্ত্র প্রদর্শন ও এলাকায় প্রভাব বিস্তারের জন্য শো-ডাউন দেয়া নিত্যদিনের ঘটনা।
স্থানীয় একটি সূত্র জানায়, আদনান খুন হওয়ার তিন দিন আগেও নাইন স্টার ও ডিসকো গ্রুপের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। কিন্তু বিষয়টি তেমন আলোচনায় আসেনি। এভাবে গত তিন মাসে এই দুই গ্রুপের মধ্যে কমপক্ষে ১০ বার সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে।
মাইলস্টোন স্কুলের শিক্ষক রুহুল আমিন জানান, আদনান ছাত্র হিসেবে খুবই ভালো ছিল। কিন্তু সে স্থানীয় বখাটে ছেলেদের সঙ্গে জড়িয়ে পড়ে। এ কারণে স্কুল কর্তৃপক্ষ তাকে কয়েকবার সতর্ক করেও কোনো লাভ হয়নি। অবশেষে কর্তৃপক্ষ তাকে এ স্কুল থেকে টিসি দিয়ে দেয়। তবে আদনান হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় স্কুলের সবাই মর্মাহত। তারা খুনিদের দ্রুত গ্রেফতার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেন।
নিহত আদনানের বাবা কবির হোসেন বলেন, আদনান কোনো ধরনের অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে জড়িত ছিল না। গত শুক্রবার বিকেলে সে ব্যাডমিন্টন খেলতে বাসা থেকে বের হয়। সন্ধ্যার পর তিনি জানতে পারেন, কারা যেন আদনানকে কুপিয়ে চলে গেছে। তাকে স্থানীয় একটি হাসপাতালে নেয়া হয়েছে। তিনি দ্রুত হাসপাতালে গিয়ে আদনানকে আর জীবিত দেখতে পাননি।
প্রসঙ্গত, গত শুক্রবার সন্ধ্যায় উত্তরার ১৩ নম্বর সেক্টরের ১৭ নম্বর রোডে অজ্ঞাত সন্ত্রাসীরা কিশোর আদনানকে কুপিয়ে হত্যা করে। এ ঘটনায় আদনানের বাবা কবির হোসেন বাদী হয়ে উত্তরা পশ্চিম থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। মামলায় নয়জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাত আরো ১০-১২ জনকে আসামি করা হয়। নিহত আদনান স্থানীয় ট্রাস্ট স্কুল অ্যান্ড কলেজের নবম শ্রেণীর ছাত্র ছিল। এর আগে সে পার্শ্ববর্তী মাইলস্টোন স্কুলে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত লেখাপড়া করে। তার বাবা কবির হোসেন একজন ব্যবসায়ী। সে পরিবারের অন্যদের সঙ্গে উত্তরার ১২ নম্বর সেক্টরের ৫ নম্বর রোডের একটি বাসায় থাকত। তার গ্রামের বাড়ি চাঁদপুরে।
সোনালীনিউজ/ঢাকা/এমটিআই
আপনার মতামত লিখুন :