ঢাকা: সদ্য শেষ হওয়া বাংলাদেশ চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির নির্বাচন নিয়ে এবার যা হলো, এর ছিঁটেফোটাও হয়নি আগের বারের নির্বাচনগুলোতে। সাদামাটাভাবেই শেষ হয়েছে প্রতিটি নির্বাচন। আনন্দ উল্লাসের সঙ্গে নির্বাচনে অংশ নিয়েছে সাধারণ শিল্পীরা। ভোটে যারা জয় লাভ করেছেন তাদেরকে নির্বাচন পরবর্তী সময়ে ফুলের মালা দিয়ে অভিনন্দন জানিয়ে ক্ষমতা হস্তান্তরও করতেন ক্ষমতায় থাকা দলটি। কিন্তু এবার শিল্পীদের নির্বাচনটি যেনো হার মানালো দেশের জাতীয় নির্বাচনকেও!
হ্যাঁ। এবারের শিল্পী সমিতির নির্বাচনকে চলচ্চিত্রের ইতিহাসে কলঙ্কজনক অধ্যায় বলে মনে করছেন চলচ্চিত্র সংশ্লিষ্টরা। কারণ, এবারের মতো ঘটনাবহুল নির্বাচন দেখেনি এফডিসি। যে বিতর্ক, আলোচনা সমালোচনা, একে অন্যের বিরুদ্ধে কাদা ছুড়ো্ছুড়ি আর সংঘাত দেখা গেছে তা শিল্পী সমিতির নির্বাচনকে ঘিরে কল্পনাও করেনি কেউ। ভলেন্টারি সংগঠনের ক্ষমতা হাতে পেতে এমন সংঘাতময় পরিস্থিতি সৃষ্টি হবে ভাবেননি সংগঠনটির দুই প্রতিষ্ঠাতা নায়ক রাজ রাজ্জাক ও ফারুকও! অথচ এমনটিই ঘটলো এই নির্বাচনে।
সদ্য সমাপ্ত বাংলাদেশ শিল্পী সমিতির নির্বাচন নিয়ে বিতর্ক থামছেই না। একের পর এক অভিযোগ আর বিশৃঙ্ক্ষলার অভিযোগ উঠছে এই নির্বাচনকে ঘিরে। আর এরমধ্যেই আদালতের নিষেধাজ্ঞা থাকার পরেও কিছুটা তড়িঘড়ি করেই শুক্রবার বিকালে শপথ নিয়ে আবারও এক বিতর্ক তৈরি করলো নবনির্বাচিত মিশা-জায়েদ প্যানেলটি! যে শপথ অনুষ্ঠান নিয়ে উঠেছে নানা বিতর্ক।
গেল ৫ তারিখে সম্পন্ন হয়েছে শিল্পী সমিতির নির্বাচন। যে নির্বাচনটি নানাভাবে প্রশ্নবিদ্ধ। ভোটাভুটি শুষ্ঠুভাবে হলেও ভোট গণনায় অসঙ্গতি, রাতে শিল্পী সমিতির সভাপতি শাকিব খানকে হেনস্তা, ফলাফল ঘোষণা ঝামেলা এসব মিলিয়ে শেষ পর্যন্ত বিষয়টি গড়ায় আদালত পর্যন্ত। ফলে নির্বাচনী ফলাফল স্থগিত ও শিল্পী সমিতির ক্ষমতা হস্তান্তর স্থগিত রাখতে নির্দেশ দেয় আদালত।
অথচ আদালতের নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে কিছুটা তড়িঘড়ি করেই গত শুক্রবার বিকেলে শপথ নিলেন মিশা-জায়েদরা। নির্বাচনের মতো এবার প্রশ্নবিদ্ধ হলো শপথ অনুষ্ঠানটিও। কারণ, এই শপথ অনুষ্ঠানেও নাকি ছিলো ব্যাপক পুলিশি পাহারা। শিল্পী সমিতি একটি অরাজনৈতিক সংগঠন, যারা শুধু শিল্পীদের অধিকার ও স্বার্থ নিয়ে কাজ করে। তাহলে তাদের শপথ অনুষ্ঠানে কেনো পুলিশ আসবে? মিশা-জায়েদদের শপথ অনুষ্ঠানকে ঘিরে এমন প্রশ্নই করছেন সাধারণ অভিনয় শিল্পী থেকে শুরু করে চলচ্চিত্রমোদিরা।
এমন প্রশ্নের উত্তর দিচ্ছেন তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল থানার সহযোগিতার জন্য ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবদুর রশীদ। তিনি সাফ জানিয়ে দিয়েছেন, শিল্পী সমিতির নতুন কমিটির সদস্যদের এবারের ক্ষমতা হস্তান্তরের বিষয় নিয়ে নাকি আদালতের নিষেধাজ্ঞা জারি হয়ে হয়েছে। এ বিষয়ে যদিও আমরা কিছুই জানতাম না। আমরা জানলে তো আদালতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল থাকতাম। আদালতের কাছ থেকে পাওয়া নিষেধাজ্ঞার কারণে নতুন কমিটির সদস্যরা আশঙ্কা করেছেন, শপথগ্রহণ অনুষ্ঠানে হামলা হতে পারে। শুধু তাই নয়, যে কোনো ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনাও ঘটতে পারে। তাই তাদের নিরাপত্তা দিতে তো আমরা বাধ্য।
ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার এমন মন্তব্যের পর এবার প্রশ্নবিদ্ধ হচ্ছেন চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির নব নির্বাচিত সভাপতি মিশা সওদাগর। কারণ তিনিই নাকি এই শপথ অনুষ্ঠানে হামলা হওয়ার আশঙ্কা প্রকাশ করেছিলেন। আর সেজন্যই শপথ অনুষ্ঠানে প্রচুর পুলিশকে প্রস্তুত রেখেছিলেন। অন্যদিকে শপথ অনুষ্ঠান বিষয়ে কিছুই জানেন না বলে গণমাধ্যমে জানিয়েছেন এফডিসির ব্যবস্থাপনা পরিচালক তপন কুমার ঘোষ। এমনকি এফডিসিতে কারা পুলিশ নিয়ে এসেছিলো, সেটাও নাকি তার জানা নেই।
নির্বাচনের দিনেও এফডিসি ঘিরে প্রচুর পুলিশি পাহারা দেখা গেছে এবার। যাদের হাতে সাধারণ মানুষ থেকে শিল্পী এবং সাংবাদিকরাও লাঞ্চিত হয়েছেন। আর সেই রেশ থেকেই অনেকে মিশা-জায়েদকে লক্ষ্য করে প্রশ্ন ছুড়ে মারছেন এই বলে যে, ওমর সানি অমিত হাসান নাকি শাকিব খান দলবল নিয়ে শপথ পাঠ অনুষ্ঠানে হামলা করতে পারে, এমন আশঙ্কা থেকে এফডিসিতে পুলিশ ডেকে আনলেন তারা?
সোনালীনিউজ/ঢাকা/এমটিএল
আপনার মতামত লিখুন :