ঢাকা : লন্ডন থেকে দেশে ফিরেই রোহিঙ্গা শরণার্থীদের দেখতে যাবেন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। অক্টোবরের প্রথম সপ্তাহে তার দেশে ফেরার কথা রয়েছে। নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে সংলাপে অংশ নিতেও প্রস্তুতি নিচ্ছে বিএনপি। সংলাপে ইসির প্রতি আস্থা ফিরলে আর রাজনৈতিক সংলাপের প্রয়োজন হবে না বলে বিএনপি নেতারা মনে করছেন।
প্রায় দু’মাস ধরে চিকিৎসার জন্য লন্ডনে অবস্থান করছেন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। দলের নেতারা জানিয়েছেন, অক্টোবরের প্রথম সপ্তাহে দেশে ফিরে তিনি উখিয়ায় রোহিঙ্গা শরণার্থী ক্যাম্পে যাবেন। তার আগে রাজনৈতিক দূরত্ব ভুলে ১৯৭৮ এবং ১৯৯২ সালে রোহিঙ্গা ইস্যুতে বিএনপির সফল দুই চুক্তিকে সামনে রেখে বিশ্ব জনমত গড়ে তোলার কাজ করবেন বিএনপির দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা।
দলীয় একাধিক সূত্র আরো জানিয়েছে, দেশে ফিরে নির্বাচনকালীন সরকারের রূপরেখাও ঘোষণা করবেন খালেদা জিয়া। ওই প্রস্তুতির পাশাপাশি ১৫ অক্টোবর নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে সংলাপের জন্যও প্রস্তুত হচ্ছে বিএনপি। এদিকে, আগামী একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের জন্য নিজেদের ঘর গোছানো আছে। এখন শুধু মাঠে নামার অপেক্ষা বলে জানিয়েছেন বিএনপির শীর্ষস্থানীয় নেতারা।
লন্ডনে যোগাযোগ রাখছেন বিএনপির এমন একজন নেতা জানান, দলীয় প্রধানের দেশে ফেরা কিছুটা বিলম্বিত হতে পারে। কারণ পায়ের চিকিৎসা সময় সাপেক্ষ। চিকিৎসা শুরু হলেই সাথে সাথে তিনি আসতে পারবেন না। চোখের চিকিৎসা সফল হয়েছে। গত ঈদে লন্ডন প্রবাসী নেতা-কর্মীদের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময়ের সম্ভাবনার কথা শোনা গেলেও তা হয়নি।
২০১৫ সালে যখন খালেদা জিয়া চিকিৎসার জন্য লন্ডনে ছিলেন তখন ঈদের দিন শুভেচ্ছা বিনিময় করেছিলেন। বিলম্বের আরেকটি কারণ হলো- বিএনপি চেয়ারপারসন দেশে ফিরে সহায়ক সরকারের রূপরেখা ঘোষণা করবেন। রূপরেখা ঘোষণা করে সরকারের সঙ্গে এ নিয়ে সংলাপ করতে চান তিনি। সরকার নাকচ করে দিলে তখন আন্দোলন ছাড়া কোন বিকল্প থাকবে না। তখন আন্দোলনের জন্য জনমত গঠন করতে মাঠে নামতে হবে তাকে। এই সময়ে বৃষ্টি-বাদল এবং রোহিঙ্গা ইস্যুর কারণে তা সম্ভব হবে না। জাতীয় নির্বাচনেরও এক বছরের বেশি বাকি। তাই সম্পূর্ণ চিকিৎসা ছাড়া দেশে ফেরার তাড়া নেই।
দলীয় অপর একটি সূত্র জানিয়েছে, খালেদা জিয়ার দেশে ফিরতে বিলম্বের আরো একটি কারণ হতে পারে আদালতের মামলা। তার বিরুদ্ধে দুটি মামলার শুনানি চ‚ড়ান্ত পর্যায়ে। তিনি বিদেশে থাকার কারণে মামলাগুলোর কার্যক্রম বন্ধ আছে। ১ ডিসেম্বর থেকে দেশের নিম্ন আদালত এক মাসের ছুটিতে যাবে। কাজেই ছুটির আগে মামলা ঝুলিয়ে রাখলে, বিএনপি চেয়ারপারসনের রায়ের সময় বাড়বে। এছাড়া লন্ডনে তার বড় ছেলে তারেক রহমান ও নাতনিরা চাচ্ছেন না তাড়াতাড়ি খালেদা জিয়া দেশে চলে যাক। তারেক রহমান তার মাকে পরিপূর্ণ চিকিৎসা না করিয়ে ছাড়তে চাচ্ছেন না। পারিবারিক আবহে সুখকর সময় কাটছে তাদের দিন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক দলের স্থায়ী কমিটির একজন সদস্য বলেন, খালেদা জিয়া দেশে ফেরার জন্য খুবই উদগ্রীব। ষোড়শ সংশোধনী রায়ের পর এখন তত্ত্বাবধায়ক সরকার ফিরিয়ে আনতে ত্রয়োদশ সংশোধনীর রিভিউ করবেন কিনা, সে বিষয়ে দেশে ফিরেই সিদ্ধান্ত নেবেন তিনি। বিএনপি প্রধান দেশে ফিরেই সারাদেশে দল গোছানোর কাজ শেষ দেখতে চান। দল গোছানো হওয়ার পরই সহায়ক সরকারের রূপরেখা প্রকাশ করবেন। রূপরেখা প্রকাশের পর বিভিন্ন মহলের প্রতিক্রিয়া এবং সরকারের মনোভাব পর্যবেক্ষণ করবেন কিছুদিন। তারপর প্রয়োজন মতো আন্দোলনের ডাক দেবেন তিনি।
প্রসঙ্গত, ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন বর্জন করে বিএনপি। এরপর নির্বাচনকালীন সহায়ক সরকারের দাবিতে দেশে গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠার আন্দোলনে অনড় রয়েছে দলটি।
সোনালীনিউজ/এমটিআই
আপনার মতামত লিখুন :