দুদক তলব করলেই অধিকাংশ অভিযুক্তরা অসুস্থ হচ্ছেন!

  • বিশেষ প্রতিনিধি | সোনালী নিউজ
  • প্রকাশিত: অক্টোবর ৪, ২০১৮, ০৭:১৪ পিএম
দুদক তলব করলেই অধিকাংশ অভিযুক্তরা অসুস্থ হচ্ছেন!

ঢাকা : দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) তলব করলেই অধিকাংশ অভিযুক্ত ব্যক্তিরাই অসুস্থ হয়ে পড়ছেন। দুদকের তলবে যেদিন জিজ্ঞাসাবাদ থাকে, ঠিক তার আগের দিন বা তলবের দিনে লোক মারফত চিঠি দিয়ে অসুস্থতার কথা জানিয়ে দেওয়া রীতিমত রুটিনে পরিণত হয়েছে। দুদকের তলবে সর্বশেষ গত ১৫ দিনে দেখা গেছে, ১০ জন অসুস্থতার কথা বলে সময় আবেদন করেছেন। তবে দুদকের তলবে না এসে অসুস্থতার কথা বললেও এমন কয়েকজনকে দেখা গেছে, তারা রাজনৈতিক বা অন্যান্য কাজে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করছেন।

দুদকের এক কর্মকর্তা বলেন, সাধারণত কেউ না আসলে তার বিরুদ্ধে পরবর্তী পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়ে থাকে। তবে মেডিকেল সংশ্লিষ্ট বা অসুস্থতার কথা বললে তার ক্ষেত্রে পুনারয় বিবেচনা করা হয়ে থাকে, তাকে আবার সুযোগ দেওয়া হয়। এখন যদি বার বার অসুস্থতার একই অভিযোগ দেখানো হয়, সেক্ষেত্রে বিষয়টি খতিয়ে দেখা হবে এবং ব্যবস্থা নেওয়া হবে। দুদক সংশ্লিষ্টরা মনে করেন, দুদকের জিজ্ঞাসাবাদে হাজির না হতেই কালবিলম্ব করে থাকেন অনেকে।

সম্প্রতি নিজেদেরকে অসুস্থ দাবি করে দুদকের তলবে যারা আসেনি।

ডিআইজি মিজান ও তার স্ত্রী : গত রবিবার দুদকে তলব করা হয়েছিল পুলিশের উপ-মহাপরিদর্শক (ডিআইজি) মিজানুর রহমান ও তার স্ত্রী সোহেলিয়া আনার রত্নাকে। কিন্তু তারা নিজেদেরকে অসুস্থ দাবি করে সময় আবেদন করেছেন দুদকের কাছে। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন দুদকের জনসংযোগ কর্মকর্তা প্রণব কুমার ভট্টাচার্য্য।

অসুস্থ তিতাস কর্মকর্তারাও : গত ২০ সেপ্টেম্বর দুদকের উপ-পরিচালক এ কে এম মাহবুবুর রহমানের পাঠানো চিঠিতে গতকাল রোববার তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেডের দুইজনকে তলব করা হয়েছিল। তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ হচ্ছে, সাংকেতিক ভাষায় ঘুষ লেনেদেন। তবে তারা না এসে চিঠি মারফত নিজেদেরকে অসুস্থ দাবি করে সময় চেয়েছেন।

তারা হলেন- তিতাসের পাইপলাইন ডিজাইন বিভাগের ব্যবস্থাপক প্রকৌশলী সাব্বের আহমেদ চৌধুরী এবং ইলেক্ট্রিক্যাল কোরেশন কন্ট্রোল (ইসিসি) বিভাগের ব্যবস্থাপক প্রকৌশলী মো. আবু বকর সিদ্দিকুর রহমান।

লা-মেরিডিয়ানের আমিন : হোটেল লা-মেরিডিয়ানের স্বত্ত্বাধিকারী আমিন আহম্মেদ ভ‚ইঁয়াকে দুদক তলব করা হয়েছিল গত ২৭ সেপ্টেম্বর। কিন্তু তিনি না এসে এক মাসের সময় আবেদন করেন। দুদকে আমিন আহম্মেদ ভ‚ইঁয়ার বিরুদ্ধে অভিযোগ হচ্ছে, তিনি হোটেল ব্যবসার আড়ালে বিভিন্ন ব্যবসা ও সরকারি সম্পত্তি আত্মসাতের মাধ্যমে শত শত কোটি টাকার মালিক হয়েছেন।

পারটেক্স গ্রুপের হাসেম : গত ১৯ সেপ্টেম্বর দুদকের উপ-পরিচালক মোশারফ হোসেইন মৃধা স্বাক্ষরিত নোটিসে পারটেক্স গ্রুপের চেয়ারম্যান এম এ হাসেমকে গত ২৬ সেপ্টেম্বর তলব করা হয়েছিল। কিন্তু নিজেকে অসুস্থ দাবি করে দুদকের কাছে এক মাসের সময় আবেদন করেন তিনি। দুদক সূত্র জানা গেছে, এম এ হাসেমের বিরুদ্ধে রাজস্ব ফাঁকি, বৈধ ব্যবসার আড়ালে অবৈধ ব্যবসা পরিচালনা ও সরকারের বিপুল পরিমাণ সরকারি সম্পত্তি দখলসহ শত শত কোটি টাকার মালিক হওয়ার অভিযোগ রয়েছে।

জাপা মহাসচিব রুহুল আমিন হাওলাদার : গত ১৩ সেপ্টেম্বর দুদকের উপ-পরিচালক সৈয়দ আহমেদের পাঠানো এক নোটিসে ১৮ সেপ্টেম্বর দুদকে হাজির হওয়ার কথা বলা হয় জাতীয় পার্টির মহাসচিব রুহুল আমিন হাওলাদারকে। তবে তলবের দিন সকালে লোক-মারফত চিঠিতে নিজেকে অসুস্থ দাবি করে দুদকের কাছে পাঠানো চিঠিতে দুদকের জিজ্ঞাসাবাদকে নিজের স্বাস্থ্যের জন্য ‘ঝুঁকিপূর্ণ’ ও ‘উত্তেজক’ উল্লেখ করে হাজিরা ও অভিযোগ থেকে অব্যাহতি চেয়ে আবেদন করেন তিনি।

রুহুল আমিন হাওলাদারের বিরুদ্ধে দুদকের অভিযোগ, তিনি বিভিন্ন অনিয়ম-দুর্নীতির মাধ্যমে সরকারি আমলা ও আদালতে উৎকোচ প্রদান করেছেন। সরকারি সম্পদ আত্মসাতের মাধ্যমে শত কোটি টাকার জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জন করেছেন। ক্ষমতার অপব্যবহারের মাধ্যমে রাজউকের একাধিক প্লটের মালিক হয়েছেন। এমনকি, জাতীয় পার্টি সরকারের অংশীদার হওয়ার সুযোগ নিয়ে হাওলাদার বিভিন্ন অবৈধ সুবিধা গ্রহণ করেছেন বলেও অভিযোগ এনেছে দুদক।

তবে দুদকের তলবে না আসলেও নিয়মিতভাবে দলীয় রাজনৈতিক কর্মসূচিতে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করতে দেখা যায় তাকে।

বিকল্প ধারার মহাসচিব মান্নান : দুদকের উপ-পরিচালক এস এম সাহিদুর রহমান স্বাক্ষরিত গত ২৪ তারিখ পাঠানো এক চিঠিতে গত ২৭ তারিখ জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তলব করা হয় বিকল্পধারা বাংলাদেশের মহাসচিব ও বাংলাদেশ ইন্ডাস্ট্রিয়াল ফাইন্যান্স কোম্পানি লিমিটেডের (বি আইএফসি) সাবেক চেয়ারম্যান মেজর (অব.) এম এ মান্নানকে। কিন্তু তিনি দুদকে এক ব্যক্তির মাধ্যমে পাঠানো চিঠিতে জানান, তিনি বর্তমানে সিঙ্গাপুরের ডাক্তারের অধীনে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। চিকিৎসা শেষ হতে ২০ থেকে ২৫ দিন সময় লাগবে। তাই তিনি এক মাস সময় চান। তবে নিজেকে অসুস্থ দাবি করলেও দলীয় কর্মসূচিতে বা জাতীয় ঐক্যের কর্মসূচিতে সক্রিয়ভাবে অংশ গ্রহণ করতে দেখা যাচ্ছে তাকে।

দুদক সূত্রে জানা গেছে, বি আইএফসির সাবেক চেয়ারম্যান মেজর (অব.) এম এ মান্নান কর্তৃক বিভিন্ন লোনকেস এর মাধ্যমে ঋণ নিয়ে ঋণের আড়ালে বি আইএফসি হতে ৫১৮ কোটি টাকা উত্তোলনপূর্বক উক্ত অর্থ আত্মসাৎ করার অভিযোগ রয়েছে। ২০১৬ সাল থেকে তার বিরুদ্ধে অনুসন্ধান চলছে।

বিএনপি নেতা এম মোরশেদ খান ও তার স্ত্রী : গত ১৩ সেপ্টেম্বর এক নোটিসে প্রাক্তন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও বিএনপি নেতা এম মোরশেদ খান এবং তার স্ত্রী নাছরিন খানকে ১৮ সেপ্টেম্বর দুদকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তলব করা হয়। কিন্তু তারা অসুস্থ দাবি করে ডাক্তারের সার্টিফিকেট সংযুক্ত করে দুদকের কাছে সময় আবেদন করেন।

জানা যায়, গত বছরের ২৮ জুন রাজধানীর বনানী থানায় করা মামলায় বিএনপির ভাইস-চেয়ারম্যান মোরশেদ খান, তার স্ত্রী, সিটিসেলের এমডি মেহবুব চৌধুরীসহ মোট ১৬ জনকে আসামি করা হয়। মোবাইল ফোন অপারেটর সিটিসেলের মূল কোম্পানির নাম প্যাসিফিক টেলিকম বাংলাদেশ লিমিটেড (পিবিটিএল)। এম মোরশেদ খান এর চেয়ারম্যান, তার স্ত্রী নাছরিন খানও একজন পরিচালক।

এ মামলায় আসামিদের বিরুদ্ধে সিটিসেলের নামে এবি ব্যাংক থেকে অনিয়মের মাধ্যমে সাড়ে তিন শ কোটি টাকা ঋণ নিয়ে আত্মসাতের অভিযোগ রয়েছে। কেউ না আসা প্রসঙ্গে জানতে চাইলে সম্প্রতি দুদক চেয়ারম্যান ইকবাল মাহমুদ সাংবাদিকদের বলেন, দুদকের তলবে কেউ না আসলে তিনি আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ হারাবেন। আইন অনুযায়ী তাদের বিরুদ্ধে পরবর্তী পদক্ষেপ নেয়া হবে।

সোনালীনিউজ/এমটিআই

সোনালী বিশেষ বিভাগের সাম্প্রতিক খবর

Link copied!