ঢাকা: নিশুতি রাতে হঠাৎ করে যেন কেউ আকাশজুড়ে ছড়িয়ে দিয়েছে বেগুনি রঙের কুয়াশা। ভোরের আলো ফোটার আগেই সেই কুয়াশা জমে ফুল হয়ে ফুটেছে গাছে গাছে। যেন কোনো অলক্ষ্য শিল্পী ব্রাশের একটুখানি টানে, রাঙিয়ে তুলেছে তিতুমীর কলেজ ক্যাম্পাস; জারুলের বেগুনি সৌন্দর্যে।
গ্রীষ্মের খরতাপে যখন পিচঢালা পথ গরমে ধুঁকতে থাকে, তখন জারুল গাছের ডালভর্তি ঝাঁকড়া ফুল শীতল করে তোলে চোখ আর মন। হঠাৎ বৃষ্টির ছাঁট গায়ে লাগতেই যেন চারপাশ আরও সতেজ হয়ে ওঠে, জারুলের রঙ যেন আরও উজ্জ্বল হয়ে ঝলমল করে। বসন্তের বিদায়ে গ্রীষ্মের এই ফুলের সমারোহ আর সেই আকস্মিক বৃষ্টির পরশ এক আশ্চর্য কাব্য রচনা করে।
তিতুমীর কলেজের প্রশাসনিক ভবনের নিচতলার সামনে লাগানো গাছগুলোর ছায়া, হাটার পথ যেন মুখরিত করে তুলেছে জারুলের রঙে ও গন্ধে।
বিষয়টা কেবল ফুল নয়, তারচেয়েও বেশি কিছু। ক্যাম্পাসে হাঁটতে হাঁটতে শিক্ষার্থীরা হঠাৎ থেমে যায়। কেননা কেউ মোবাইলে বন্দি করে জারুলের সৌন্দর্য, কেউ আবার চুপিচুপি তুলে নেয় একগুচ্ছ, হয়তো প্রিয়জনের হাতে তুলে দেওয়ার আশায়। চুলে গুঁজে নেয় কেউ কেউ, কেউ আবার খেয়ালই না করে হারিয়ে যায় এই বেগুনি ফুলের ছায়ায়, বন্ধুদের আড্ডায় কিংবা একাকী হেঁটে যাওয়ার মুহূর্তে।
তিতুমীর কলেজের মূল ভবনের সামনে, প্রশাসনিক ব্লকের পাশে, কিংবা লাইব্রেরি করিডোরে জারুলের ঘন গুচ্ছ ঝুলে থাকে, মনে হয় যেন বেগুনি স্নেহে মাথা নিচু করে অভ্যর্থনা জানাচ্ছে। ক্লান্ত দুপুরে এই ফুলের ছায়া যেন এক শান্তির প্রতীক।
জারুল কেবল সৌন্দর্যের উৎস নয়, এর রয়েছে নানান গুণাগুণ। ‘বাংলার চেরি’ নামে পরিচিত এই গাছটি ঔষধি গুণে পরিপূর্ণ। এর বীজ, ছাল ও পাতা ডায়াবেটিস চিকিৎসায় ব্যবহৃত হয়। তাছাড়া জ্বর, অনিদ্রা, কাশি ও হজম সমস্যার প্রতিকারেও জারুলের ব্যবহার রয়েছে।
অপরূপ এই ফুলটি যেমন মনোহর, তেমনি এর উপস্থিতি পরিবেশকে করে তোলে জীবন্ত ও প্রাণবন্ত। নগরের কংক্রিটের ভিড়ে জারুল যেন একান্ত এক প্রাকৃতিক আশ্রয়, যেখানে হৃদয়ের জড়তা গলে যায়।
তবে একটি দুঃখের কথাও থেকে যায়। ক্যাম্পাসের কিছু অংশে দেখা গেছে, সঠিক পরিচর্যার অভাবে কয়েকটি গাছ শুকিয়ে গেছে বা ধীরে ধীরে মরে যাচ্ছে। বিশেষত যেসব গাছ নতুন করে রোপণ করা হয়েছিল, তাদের অনেকেই টিকে থাকতে পারেনি সময়ের অবহেলায়। অথচ একটু যত্ন, নিয়মিত পানি দেওয়া ও পর্যাপ্ত রক্ষণাবেক্ষণই পারে এই সবুজ সম্পদকে টিকিয়ে রাখতে। গাছের এই জীবনরক্ষা শুধু প্রকৃতিকে নয়, আমাদের মনকেও করে তুলবে সজীব।
জারুল ফুলের মায়ায় আচ্ছন্ন হয়ে কেউ হয়তো একাকী হেঁটে চলে যায়, কেউবা বন্ধুর সঙ্গে ভাগ করে নেয় এই সৌন্দর্য। গ্রীষ্মের এই চেনা দুপুরগুলো তাই হয়ে ওঠে কিছুটা রঙিন, কিছুটা স্বপ্নময়। আর জারুল যেন সেই স্বপ্নের ঠিকানা। যেখানে প্রতিটি পাপড়ি বলে, 'প্রকৃতি এখনো রঙিন আছে।'
আইএ