• ঢাকা
  • মঙ্গলবার, ১৬ এপ্রিল, ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

১৪৮ কেজি ওজন নিয়ে জীবন যুদ্ধে স্নাতক পাস মাসুদ


নিজস্ব প্রতিনিধি নভেম্বর ১, ২০২০, ০৫:৩৯ পিএম
১৪৮ কেজি ওজন নিয়ে জীবন যুদ্ধে স্নাতক পাস মাসুদ

ঢাকা: পঞ্চগড়ের বোদা উপজেলার বেংহারি বনগ্রাম ইউনিয়নের কেরামতপাড়া গ্রামের কৃষক আইনুল হকের ছেলে মাসুদ রানা। বয়সে আঠাশ হলেও তিনি এলাকায় তার অস্বাভাবিক ওজনের কারণে অধিক পরিচিত। বয়স যত বাড়ছে ততই ভবিষ্যৎ জীবন অনিশ্চয়তার দিকে যাচ্ছে। মাসুদও ধীরে ধীরে পরিবারের বোঝা হয়ে দাঁড়িয়েছেন। কারণ ছোট বেলা থেকেই তার শরীরের ওজন অস্বাভাবিক ভাবে বেড়ে যায়। পঞ্চম শ্রেণিতে পড়ার সময়ই মাসুদের ওজন ছিল ৬২ কেজি। এখন তার ওজন ১৪৮ কেজি। উচ্চতায় ৫ ফিট ৬ ইঞ্চির উপরে। নিজের দেহের এই অতিরিক্ত ওজন নিয়ে দিশেহারা তিনি। নিজের প্রয়োজনে হাঁটা চলা করতেও বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে তার নিজের শরীর। 

২০১৮ সালে এমন মোটা শরীর নিয়েও পড়ালেখার প্রতি অদম্য ইচ্ছা শক্তির জোরে মাসুদ ছাত্রজীবন শেষ করেছেন স্নাতক পাস করে। তবুও বর্তমানে সে সমাজের বোঝা। এপর্যন্ত একাধিক চাকরির ইন্টারভিউতে অংশ নিলেও চাকরি নামক সোনার হারিণটা অধরাই থেকে গেছে তার। সেখানে মূল প্রতিবন্ধকতা হয়ে দাড়িয়েছে মাসুদের দীর্ঘ স্থুলকায় শরীর।

মাসুদ রানারা দুই ভাই হলেও বড় ভাই ঢাকায় পৃথক থাকেন। বৃদ্ধ মা ও বাবা কৃষক আইনুল হকের কৃষি কাজ থেকে উপার্জিত আয়ে চলে মাসুদের সংসার। বয়সের ভারে আইনুল হক এখন ন্যুব্জ। 

একদিকে অতিরিক্ত মোটা দেহের কারণে মাসুদ রানা কোন কাজেই বাবাকে সাহায্য করতে পারছেনা। বাড়িতেই এখন অসহায় হয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছেন মাসুদ রানা। চিকিৎসার খরচও আর যোগাতে পারছেনা তার পরিবার। শরীরের ওজনও দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে তার। 

চিকিৎসকরা জানান, শরীরের ওজন নিয়ন্ত্রণের জন্য বর্তমানে দেশে রেরিয়াট্রিক সার্জারি শুরু হয়েছে। তবে এটা ব্যয়বহুল। 

মাসুদ রানা জানান, ছোট বেলা শরীরের ওজন বাড়তে থাকে। তখন সবাই ভেবেছিল এমনিতেই একসময় কমে যাবে। কিন্তু ক্লাস এইটে যখন তার শরীর অস্বাভাবিক হয়ে যায় তখন চিকিৎসা নিতে শুরু করেন। বন্ধুদের সাথে আড্ডা, এমনকি ক্লাসে যেতেই বিব্রত হতে হয় সব সময়। যে বেঞ্চে সে বসতো সেখানে কোন বন্ধুই তার পাশে বসেনি। 

সেজন্য স্কুলে মাঠের একপাশে বসে থাকলেও সেখানেও তাকে দেখে ঠাট্টা বিদ্রুপ করেছিল সহপাঠিরা। সেজন্য বেশিরভাগ সময় স্কুলে উপস্থিত ছিলনা। সে সময় ১০৯ কেজি ওজন নিয়ে এভাবেই ২০০৮ সালে এসএসসি পাশের পর পড়ালেখাতে মন বসেনি। মাঝখানে দুই বছর পড়াশুনা থেকে বিরতি রেখেছিল নিজেকে। সে সময় হরমোন বিশেষজ্ঞ ডা. লায়েক আহম্মেদ খানের পরামর্শে চিকিৎসা নিয়েছিল বেশ কিছু দিন। তবে চিকিৎসায় তার শরীরের ওজন কমেনি। তবুও প্রবল ইচ্ছা নিয়ে আবারও পড়াশুনা শুরু করে। পরে ২০১২ সালে বোদা পাথরাজ মহাবিদ্যালয় (বোদা পাথরাজ কলেজ) কলেজ থেকে ১২৮ কেজি ওজনের শরীর নিয়ে উচ্চ মাধ্যমিক পাশ করে। পরে ২০১২ সালে একই কলেজ থেকে স্নাতক পাশ করেছে। কিন্তু তার শরীর নিয়ে অসহায় হয়ে পড়েছে।

মাসুদ রানা সোনালীনিউজকে বলেন, পরিবার আমার চিকিৎসা নিয়ে অনিহা জানিয়েছে। অপরদিকে চিকিৎসাতেও কাজ হচ্ছেনা, কিন্তু ডাক্তারদের কাছ থেকে আমি শুনেছি বিদেশে এর চিকিৎসা রয়েছে। কিন্তু আমাদের সেই সামর্থ নেই। হ্রদরোগ বিশেষজ্ঞ, হরমোন বিশেষজ্ঞদের কাছে রংপুরের এবং ঢাকায় চিকিৎসা নিয়েছি। হাটাচলা শুরু করলেই পায়ের হাটুতে অতিরিক্ত ব্যাথা হয়। এজন্য বেশি হাটতেও পারিনা। বাজারে আমার মাপের কোনো পোশাক পাওয়া যায়না। কোন সুন্দর পোশাক পছন্দ হলেও পড়তে পারিনা মোটা শরীরের কারণে।

২০১৬ সালে স্বাস্থ্য সহকারি পদে চাকরিতে আবেদনের পর শারীরিক অসুস্থ্যতার কারণে যেতে পারিনি। এখন আমি পরিবারের বোঝা হয়ে গেছি। স্নাতক পাস করেও আমি অসহায়। কাজ করে সমাজের দশজন শিক্ষিত ছেলেদের মত আমারও বাঁচতে ইচ্ছা হয়। কিন্তু এই ১৪৮ কেজি শরীরের ওজন আমার স্বাভাবিক জীবন অনিশ্চিত করেছে। জানিনা আর কত মোটা হবো আমি। দ্রুত বিদেশে গিয়ে চিকিৎসা না গ্রহন করলে আমি হয়তোবা মরে যাবো। সরকার ও বিত্তবানদের কাছে একটি চাকরি ও সুচিকিৎসার আবেদন জানাই। 

সোনালীনিউজ/এএস/টিআই

Wordbridge School
Link copied!