• ঢাকা
  • শনিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

বনের ভেতরে লাশের মাংস ছাড়াতো বাপ্পী


ময়মনসিংহ প্রতিনিধি নভেম্বর ১৮, ২০২০, ০১:১৬ পিএম
বনের ভেতরে লাশের মাংস ছাড়াতো বাপ্পী

ময়মনসিংহ : মানুষ মারা গেলে বাড়িসহ এলাকায় এবং পরিচিতজনদের মধ্যে শোকের ছায়া বিরাজ করে। কিন্তু বাপ্পী হতো খুশি! অবাক হলেও এটাই সত্য। এলাকায় কোনো মানুষ মরলেই তার মধ্যে এক ধরনের খুশি বিরাজ করত। তাদের জানাজাতেও অংশ নিত সে। জানাজা শেষে মুচকি হেসে বাসায় ফিরে যেত। আর রাত নামলেই নতুন কবরের লাশ তুলে নিজের বাসায় নিয়ে আসত। এরপর লাশে কেমিক্যাল মেশাতো। বাপ্পী সম্পর্কে এমনই ভয়ংকর তথ্য দিয়েছে স্থানীয়রা।

বাপ্পী ময়মনসিংহ নগরীর আর কে মিশন রোড এলাকায় ‘আশানীড়’ নামে একটি তিনতলা ভবনের দোতলায় থাকত। সে নগরীর কালিবাড়ি কবরখানা এলাকার আবুল হোসেনের ছেলে। কাইয়ুম নামে একজন বলেন, বাপ্পীর বাসার দোতলার বারান্দা সব সময় একটা পর্দা দিয়ে ঢাকা থাকত। বাসার জানালাও কখনো খোলা থাকতে দেখা যায়নি।

আবুল কালাম নামে আরেক ব্যক্তি বলেন, বাপ্পীকে ঘরের বাইরে খুব একটা বের হতেও দেখিনি। তবে সে অনেক রাত জাগত। রাত ৩টা বা ৪টা পর্যন্ত তার বাসার লাইট জ্বলত।  ভেতরে এত কিছু হতো তা আমাদের ধারণাতেই ছিল না।

কোতোয়ালি মডেল থানার ওসি ফিরোজ তালুকদার বলেন, কঙ্কাল চুরি চক্রের সদস্যরা কবর থেকে লাশ তুলে কঙ্কাল সংগ্রহ করে চড়া দামে বিক্রি করে আসছিল-এমন সংবাদ পেয়ে গত শনিবার গভীর রাতে নগরীর আর কে মিশন রোড এলাকার একটি বাসায় অভিযান চালিয়ে ১২টি মাথার খুলি, দুই বস্তা হাড়সহ বাপ্পীকে আটক করা হয়। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে বাপ্পী জানান, ওই বাসাতেই কঙ্কাল মজুত করা হতো। সেখান থেকে পাচার করা হতো বিভিন্ন স্থানে।

কঙ্কাল চুরি চক্রের সদস্যরা জেলা-উপজেলার বিভিন্ন গোরস্তানের কবর খুঁড়ে লাশ চুরি করে বাপ্পীর কাছে পাঠাত। বাপ্পী মরদেহে নির্জন স্থান, গভীর অরণ্য বা পাহাড়ি জনপদে নিয়ে কেমিক্যাল ব্যবহারের মাধ্যমে পচিয়ে মাংস থেকে হাড় আলাদা করতেন। মাংস ছাড়ানোর পর গরম পানি দিয়ে ধুয়ে মুছে পরিষ্কারও করতেন। পরে তুলে দিতেন পাচারকারীর হাতে। তাদের মাধ্যমে এ কঙ্কাল চলে যেত মেডিক্যাল শিক্ষার্থী-শিক্ষক, চিকিৎসকসহ পার্শ্ববর্তী দেশ নেপাল ও ভারতে।

বাপ্পীকে জিজ্ঞাসাবাদে সাতজনের নাম পাওয়া গেছে। তাদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে। কীভাবে এত মাথার খুলি ও হাড়গোড় আটককৃত ব্যক্তি সংগ্রহ করেছে জানতে চাইলে ওসি ফিরোজ বলেন, এদের একটা চক্র আছে। আমরা আরো কিছু নাম পেয়েছি। দেশের বিভিন্ন জায়গায় কবরস্থান থেকে এসব সংগ্রহ করা হয়। আমাদের কাছে প্রায়শই অভিযোগ আসে কবর থেকে হাড়গোড় চুরির। এর আগে কবর থেকে কঙ্কাল চুরির দায়ে বেশ কিছু গ্রেপ্তারের ঘটনাও রয়েছে। হাসপাতালের বেওয়ারিশ মরদেহ চুরির ঘটনাও রয়েছে।

সোনালীনিউজ/এমটিআই

Wordbridge School
Link copied!