• ঢাকা
  • শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল, ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

কারাগারে ধর্ষণ মামলার আসামির সাথে বাদি তরুণীর বিয়ে


ফেনী প্রতিনিধি নভেম্বর ১৯, ২০২০, ০৪:২৭ পিএম
কারাগারে ধর্ষণ মামলার আসামির সাথে বাদি তরুণীর বিয়ে

ছবি: সংগৃহীত

ফেনী : ফেনী জেলা কারাগারের সামনে জাকঁজমক আয়োজনে অনুষ্ঠিত হলো ধর্ষক ও ধর্ষণের শিকার তরুণীর বিয়ে। এ সময় বর-কনেসহ দুপক্ষের লোকজন উপস্থিত ছিলেন। কারাগারের সামনে বিয়ে হয় জিয়া ও তার প্রেমিকার। বিয়ে করার শর্তে ধর্ষণ মামলার আসামিকে জামিন দেওয়া হবে- আশ্বাস দিয়েছিলেন হাইকোর্ট। গত ১ নভেম্বর আদালতের আশ্বাসের ওপর আস্থা রেখে ধর্ষণ মামলার বাদীকে বিয়ে করেন ফেনীর সোনাগাজীর বাসিন্দা জহিরুল ইসলাম জিয়া।

বৃহস্পতিবার (১৯ নভেম্বর) দুপুর ১২টার দিকে ফেনী জেলা কারাগারের সামনে জাকঁজমক আয়োজনে এ বিয়ে অনুষ্ঠিত হয়। এ সময় বর-কনেসহ দুপক্ষের লোকজন উপস্থিত ছিলেন।

জানা গেছে, সকালে দুই পক্ষের লোকজন মিষ্টি নিয়ে জেলা কারাগারের সামনে আসেন। পরে জিয়া ও ভুক্তভোগীর আইনজীবীরা সেখানে আসেন। বিয়ে পড়াতে আসেন জেলার নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মনিরুজ্জামানসহ কাজী আবদুর রহিম। ৬ লাখ টাকা দেনমোহর ধার্য করে বিয়ের আনুষ্ঠানিকতা শেষ করেন তিনি।

বিষয়টি নিশ্চিত করে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মনিরুজ্জামান বলেন, গত ১ নভেম্বর বিয়ে করার শর্তে প্রেমিকাকে ধর্ষণের ঘটনায় কারাবন্দী জহিরুল ইসলাম জিয়াকে জামিন দেওয়া হবে বলে আশ্বাস দেন হাইকোর্ট। সে লক্ষ্যে আজ ওই তরুণীর সঙ্গে জিয়ার বিয়ে হলো। বিয়ের দেনমোহর ধার্য করা হয়েছে ৬ লাখ টাকা।

গত ২৭ মে জেলার সোনাগাজীর চরদরবেশ এলাকার এক তরুণীকে ধর্ষণ করেন তার প্রেমিক জহিরুল ইসলাম জিয়া। তার বাবা ইউনিয়ন পরিষদ সদস্য। ঘটনার দিনই ভুক্তভোগী জিয়ার বিরুদ্ধে ধর্ষণ মামলা দায়ের করেন। গত ২৯ মে জিয়াকে গ্রেপ্তার করে সোনাগাজী মডেল থানা পুলিশ।

পরে জামিনে মুক্তি পেলে ভুক্তভোগীকে জিয়া বিয়ে করবেন, তার পরিবার এ আবেদন পূর্বক আদালতের কাছে জামিন চেয়ে আপিল করে। পরে হাইকোর্ট জিয়ার জামিন না দিয়ে কারা ফটকেই ভুক্তভোগীর সঙ্গে তার বিয়ের আয়োজনের জন্য ফেনী কারাগারের তত্ত্বাবধায়ককে নির্দেশ দেন।

একই সঙ্গে বিয়ের বিষয়ে আগামী ৩০ দিনের মধ্যে আদালতে প্রতিবেদন দাখিল করতে বলেন। তারই ধারাবাহিতায় আজ জিয়া ও তার প্রেমিকার বিয়ে অনুষ্ঠিত হলো। বিয়ের অনুষ্ঠানে দুই পক্ষের ২০-৩০ উপস্থিত ছিলেন। 

ফেনী জেলা কারাগারের জেল সুপার আনোয়ারুল করিম জানান, হাইকোর্টের নির্দেশনা পেয়ে দুই পরিবারের মধ্যে আলোচনাক্রমে আজ তাদের বিয়ের তারিখ ধার্য করা হয়েছিল। সেই মোতাবেক আজ কনেসহ দুই পরিবারের সদস্যদের উপস্থিতিতে বিয়ে পড়ানো হয়েছে। এ সংক্রান্ত প্রতিবেদন হাইকোর্টে পাঠানো হবে।

জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. মনিরুজ্জামান বলেন, হাইকোর্টের নির্দেশনা মতে জেল সুপারের তত্ত্বাবধানে আইনজীবী, স্থানীয় জনপ্রতিনিধি এবং দুই পরিবারের লোকজন উপস্থিত ছিলেন। তিনি বলেন, এটি নতুন একটি অভিজ্ঞতা।

মামলার বিবাদী পক্ষের আইনজীবী ফারুক আলমগীর বলেন, নিম্ম আদালতে জামিন না হলে আমি জিয়ার জামিন চেয়ে হাইকোর্টে মিস মামলা দায়ের করেছিলাম। গত ১ নভেম্বর আদালত বিয়ের শর্তে আমার মক্কেলকে জামিন দেবার অভিমত ব্যক্ত করে এ আদেশ দেন। এ ব্যাপারে ব্যবস্থা নিতে কারা কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দেয়া হয়।

বাদী পক্ষের আইনজীবী এডভোকেট নুরুল ইসলাম মজুমদার বলেন, মহামান্য হাইকোর্টের নির্দেশনা মোতাবেক ফেনী কারাগারের জেলারের তত্ত্ববধানে দুই পরিবারের উপস্থিতিতে আজকে বিয়ের আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন হয়েছে। এর মাধ্যমে ন্যায় বিচার পেয়েছেন বলে মতামত ব্যক্ত করেন তিনি। 

ছেলের বাবা আবু সুফিয়ান বলেন, আইনের প্রতি আমি শ্রদ্ধাশীল। হাইকোর্টের নির্দেশনা মেনে নিয়ে আজকে বিয়ে সম্পন্ন হয়েছে। সংশ্লিষ্ট দপ্তরে তথ্য পাঠানোর পর আশা করি দ্রুত আমার ছেলের মুক্তি মিলবে। জহির মুক্তি পেলে বাড়িতে বড় করে অনুষ্ঠান করে ছেলের বউকে ঘরে তুলে নেব।

নানা ঘাত প্রতিঘাতের পর প্রেমের এমন পরিণতিতে কনে নিজের অনুভূতি ব্যক্ত করে বলেন, এমন আয়োজনে এবং হাইকোর্টের রায়ে আমি খুশি। দ্রুত স্বামীকে মুক্তি দেয়ার অনুরোধ জানান তিনি।

কনের মামা আবু সুফিয়ান বলেন, হাইকোর্টের রায়ে আমরা সন্তুষ্ট। রায়ের শর্তানুযায়ী জিয়া দ্রুত জামিন লাভ করবে এটিই আমাদের পরিবারের প্রত্যাশা। তিনি বলেন, আমরা চাই ছেলে ও মেয়ে দুজনের ভবিষ্যত জীবন সুখ ও শান্তিময় হোক। 

বিয়ে পড়ানো শেষে কারাগারে উপস্থিত সকলকে মিষ্টিমুখ করানো হয় এবং নব দম্পত্তির সুখ শান্তি কামনায় মোনাজাত করা হয়।

ধর্ষণ মামলার ক্ষেত্রে ফেনীতে এটি একটি নজিরবিহীন ঘটনা বলছেন আইনজীবীরা। তবে এ ধরনের ঘটনা ধর্ষণকে আরো উৎসাহিত করতে পারে বলে মনে করছেন বাংলাদেশ নারী মুক্তি কেন্দ্র ফেনীর আহ্বায়ক জোবেদা আক্তার কচি।

তিনি বলেন, ধর্ষকরা মনে করতে পারে বিয়ে করলেই তারা পার পেয়ে যাবে। তবে আদালত কোন দৃষ্টিকোণ থেকে রায়টি দিয়েছেন সেটিও বিবেচ্য বিষয়।

সোনালীনিউজ/এমএএইচ

Wordbridge School
Link copied!