• ঢাকা
  • বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ, ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

ধর্ষণে জন্ম নেয়া সন্তানের সামনে কারাফটকে বিয়ে


নিজস্ব প্রতিবেদক ডিসেম্বর ৫, ২০২০, ০৮:৫৭ পিএম
ধর্ষণে জন্ম নেয়া সন্তানের সামনে কারাফটকে বিয়ে

রাজশাহী: রাজশাহী কেন্দ্রীয় কারাগারে ধর্ষণ মামলায় আট বছর বন্দী কয়েদির সঙ্গেই আদালতের নির্দেশে ভুক্তভোগীর বিয়ে সম্পন্ন হয়েছে। কয়েদির বাড়ি রাজশাহীর গোদাগাড়ীতে।

শনিবার (৫ ডিসেম্বর) দুপুরে বিয়ের জন্য কনেসহ দুই পরিবারের অন্তত ১৪ জন কারাগারে আসেন। এ সময় উপস্থিত ছিলেন স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) সদস্য। তাদের সঙ্গে এসেছিল ধর্ষণের ফলে জন্ম নেওয়া ভিকটিম নারীর আট বছরের ছেলেও।

আগেই উপস্থিত ছিলেন হিন্দু বিবাহ রেজিস্ট্রার কৃষ্ণা দেবী এবং পুরহিত পরিমল চক্রবর্তী। কনেপক্ষ আসার পর কারাগার থেকে বরকে আনা হয়। তারপর কারাগারের সিনিয়র জেল সুপার সুব্রত কুমার বালার উপস্থিতিতে দুপুরে বিয়ের আনুষ্ঠানিকতা শুরু হয়। বিয়ের আনুষ্ঠানিকতা শেষে সিনিয়র জেল সুপার কনেকে একটি নতুন শাড়ি উপহার দেন। দুই পরিবারের সবাইকে মিষ্টিমুখ করান।

ধর্ষণ মামলায় আট বছর ধরে কারাগারে বন্দী রয়েছেন ওই যুবক (৩০)। ২০১২ সালে আদালত তাকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেন। সম্প্রতি উচ্চ আদালতে আসামীর আইনজীবী তার জামিনের আবেদন করেন। ধর্ষণের শিকার ওই নারী (২২) আদালতে বলেন, তারা বিয়ে করবেন। আসামিকে জামিন দিলে তার আপত্তি নেই। এরপর আদালত কারাফটকেই তাদের বিয়ের আদেশ দেন।

সিনিয়র জেল সুপার সুব্রত কুমার বালা বলেন, উচ্চ আদালত আমাদের আসামির বিয়ে সম্পন্ন করার নির্দেশ দিয়েছেন। তিন দিন আগে আদেশের কপি পাওয়ার পরই দুপক্ষকে ডাকি। সুষ্ঠুভাবে বিয়েও সম্পন্ন হলো। এখন যত দ্রুত সম্ভব বিয়ের কাগজপত্র উচ্চ আদালতে পাঠানো হবে।

মামলা সূত্রে জানা গেছে, ওই আসামি এবং ভিকটিম সম্পর্কে খালাতো ভাই-বোন। তাদের ভালোবাসার সম্পর্ক ছিল। এর সূত্র ধরে ভিকটিমকে বিয়ের প্রতিশ্রুতি দিয়ে তার সঙ্গে ২০১১ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারি দৈহিক মেলামেশা করেন ওই যুবক। এতে ভিকটিম গর্ভবতী হয়ে পড়েন। কিন্তু এরপর থেকে আর বিয়ে করতে রাজি হননি আসামি। বিষয়টি নিয়ে সালিশ করার কথা বলে সময়ক্ষেপণ করা হয়। শেষ পর্যন্ত সালিশ বৈঠক না হওয়ায় ভিকটিম ওই বছরের ২৩ অক্টোবর প্রেগন্যান্সি পরীক্ষা করেন। এরপর ২৫ অক্টোবর গোদাগাড়ী থানায় হাজির হয়ে প্রেমিকের বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগে মামলা করেন।

মামলায় আসামির বিরুদ্ধে ২০১২ সালের ২৯ জানুয়ারি রাজশাহীর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে অভিযোগ গঠন করা হয়। এরপর বিচার শেষে ওই বছরের ১২ জুন এক রায়ে তাকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড, ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করেন আদালত।

যখন ভিকটিম ধর্ষণের শিকার হন তখন তার বয়স ছিল ১৪ বছর। কিন্তু সেই বয়সেই তার কোলে আসে পুত্র সন্তান। মেয়েটির আর পড়াশোনা করা হয়নি। সপ্তম শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশোনা করা ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর এ মেয়েটি কৃষিশ্রমিক হিসেবে নতুন জীবন শুরু করেন। দিনে দিনে বড় হতে থাকে তার সন্তান। তার সন্তানের বয়স এখন আট বছর। আসামিরও আট বছর জেল খাটা হয়ে গেছে। এতদিন পর দুই পরিবারের মধ্যে সমঝোতা হয়েছে। কনের সম্মতিতেই আদালত তাদের বিয়ের আদেশ দেন। 

সোনালীনিউজ/আই

Wordbridge School
Link copied!