• ঢাকা
  • মঙ্গলবার, ১৬ এপ্রিল, ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

দারছিড়া নদীর বুকভরা কষ্ট!   


রাঙ্গাবালী (পটুয়াখালী) প্রতিনিধি ফেব্রুয়ারি ৮, ২০২১, ০৫:২০ পিএম
দারছিড়া নদীর বুকভরা কষ্ট!    

পটুয়াখালী : এক সময়ের প্রমত্তা নদী দারছিড়া। কোনো কূল-কিনারা ছিল না। এপাড়-ওপাড় পাড়ি দিতে নৌকার দার (বৈঠা) ভেঙে যেত। যে কারণে নদীটি দারছিড়া নামে পরিচিতি পেয়েছে। কিন্তু এখন সেই নদীর বুকভরা কষ্ট। নদী বলতে যা বোঝায় এখন আর তা নেই। জলবায়ু পরিবর্তন ও অপরিকল্পিত কর্মকাণ্ডে প্রতিনিয়ত নিঃশেষ হচ্ছে নদীটির প্রাণ।

পটুয়াখালীর রাঙ্গাবালী উপজেলার বড়বাইশদিয়া ও মৌডুবি ইউনিয়নের কোলঘেঁষে বয়ে গেছে নদীটি। জানা গেছে, এক সময় এ অঞ্চলের মানুষের যোগাযোগ মাধ্যম ছিল একমাত্র দারছিড়া নদী। শুধু তাই নয়, বেশির ভাগ মানুষ এ নদীতে মাছ ধরে জীবিকা নির্বাহ করতেন। 

নদীর সেই যৌবনে ভাটা লাগার সাথে সাথে জীবনযাত্রার মানেও এসছে পরিবর্তন। তবে যোগাযোগ ব্যবস্থার পরিবর্তন এলেও এখনো নদীর সাথেই অনেকের জীবন-জীবিকা জড়িয়ে আছে। কারণ এ অঞ্চলের অন্তত ৬০ ভাগ মানুষ মাছ ধরে জীবিকা নির্বাহ করে।

সরেজমিন দারছিড়া নদী ঘুরে দেখা গেছে নদীর ওপর নির্ভরশীল মানুষের কষ্ট। অপরিকল্পিত বেড়িবাঁধ, কালভার্ট ও মাছের ঘের দিন দিন গিলে খাচ্ছে নদীটিকে। এই তিন সমস্যায় ধুঁকে ধুঁকে মরছে নদীটি। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, মানবসৃষ্ট সমস্যার পাশাপাশি জলবায়ু পরিবর্তনেরও প্রভাব পড়েছে এ নদীতে।

দেখা গেছে, বড়বাইশদিয়া ইউনিয়নের গাব্বুনিয়া-চরইমারশন বেড়িবাঁধ এবং মধুখালী-চরগঙ্গায় আরেকটি বেড়িবাঁধের কারণে প্রায় ৮ কিলোমিটার নদীতে জোয়ার-ভাটার স্বাভাবিক পানিপ্রবাহ নেই। এতে নদীতে পলিমাটি জমে এক দিকে নাব্যতা সঙ্কট দেখা দিয়েছে অপর দিকে নদীর প্রশস্ততা সঙ্কীর্ণ হয়ে আসছে। 

শুধু এখানেই নয়, মৌডুবি ইউনিয়নের মাতবরকান্দা থেকে জাহাজমারা স্লুইসগেট পর্যন্ত বেড়িবাঁধের পূর্ব পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া নদীর অংশটি এখন নালায় পরিণত হয়েছে। যেই নদীতে এক থেকে দেড়শ’ ফুট গভীর পানি ছিল সেই নদী এখন হেঁটে পার হওয়া যায়। পুরো নদীতে এখন পলি জমে অসংখ্য ডুবোচর ও মারাত্মক নাব্যতা সঙ্কট দেখা দিয়েছে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ২০০৭ সালে বড়বাইশদিয়া ইউনিয়নের চরইমারশন-গাব্বুনিয়া ও চরগঙ্গা-মধুখালী দু’টি বন্যানিয়ন্ত্রণ বেড়িবাঁধ নির্মাণ করা হয়। এ বিষয়ে ওই ইউনিয়নের তক্তাবুনিয়া গ্রামের চারুশিল্পী শাহ আলম বলেন, বেড়িবাঁধ দু’টি অপরিকল্পিতভাবে নির্মাণ করা হয়েছিল। আমরা তখনই বলেছিলাম যে, চশমার ফ্রেমের মতো করে বাঁধে পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা রাখা হোক।

সরেজমিন দেখা গেছে, মাতবরকান্দা থেকে জাহাজমারা স্লুইসগেট পর্যন্ত নদীটিকে প্রভাবশালীরা নিজেদের কব্জায় নিয়ে নিয়েছে। এক যুগের ব্যবধানে নদীর বুকে যে যার মতো কমপক্ষে ১৫টি মাছের ঘের করেছে। যেখানে পানি থই থই করত সেখানে এখন আশাবাড়িয়া নামক একটি গ্রামও হয়ে গেছে। ঘেরের মাছ পাহারা দিতেই গ্রামটিতে মানুষের বসবাস।

জলবায়ু পরিবর্তন বিষয় নিয়ে কাজ করা বেসরকারি সংস্থা ভিলেজ এডুকেশন রিসোর্স সেন্টারের (ভার্ক) উপজেলা সমন্বয়কারী মোহসিন তালুকদার বলেন, এক সময়ের খরস্রোতা দারছিড়া নদী এখন মৃতপ্রায়। নদীটি এ অঞ্চলের মানুষের জীবন-জীবিকায় যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ ছিল। অগণিত মানুষ মাছ ধরে জীবিকা নির্মাণ করত। সেসব মানুষের পেশা পরিবর্তন হচ্ছে। এ কারণে এ অঞ্চলের মানুষের জীবনমানে প্রভাব পড়েছে। 

আমি মনে করি, বাংলাদেশের মৃতপ্রায় নদীগুলো খনন করা উচিত। তিনি আরো বলেন, মানবসৃষ্ট সমস্যা ও জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে পানির স্বাভাবিক প্রবাহ বাধাগ্রস্ত হলে নদীতে পলি জমে ডুবোচর ও নাব্যতা সঙ্কট সৃষ্টি হয়।

এ ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মাশফাকুর রহমান বলেন, নদী মাতৃক বাংলাদেশে নদী টিকিয়ে রাখতে হবে। নদী রক্ষায় আমাদের সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে। দারছিড়া নদী রক্ষায় সরকার সময়োপযোগী পদক্ষেপ নেবে বলে তিনি জানান।

 সোনালীনিউজ/এমটিআই

Wordbridge School
Link copied!