• ঢাকা
  • শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

সাগরে মাছের লকডাউন!


কক্সবাজার প্রতিনিধি এপ্রিল ২৪, ২০২১, ১১:১৮ পিএম
সাগরে মাছের লকডাউন!

ঢাকা : করোনাভাইরাস মহামারীর দ্বিতীয় ঢেউয়ে সারা বিশ্বে মৃত্যুর মিছিল চলছে। দেশে সংক্রমণ রোধে চলছে কঠোর লকডাউন। সাগরেও যেন মাছের কঠোর লকডাউন চলছে! লাখ টাকা খরচ করে জেলেরা সাগরে গেলেও জালে ধরা পড়ছে না কাঙ্ক্ষিত মাছ। এখানে-সেখানে সপ্তাহখানেক জাল ফেলেও মাছের দেখা না পেয়ে খালি ট্রলার নিয়েও তীরে ফিরেন অনেকে। এতে রমজানের কারণে বাড়তি চাহিদা থাকলেও বাজারে মাছের দেখা নেই। কোনো কোনো ট্রলারের ভাগ্যে যা জুটছে, সেই যৎসামান্য মাছ বিক্রি হয় আগুন লাগা দামে।

জেলেদের দাবি, গত কয়েক মাস ধরে সাগরে মাছের আকাল চলছে। ব্যবসায়ীরা বলছেন, মাছ সংকটে বাড়তি দামে লোক হয়রানি যেমন হচ্ছে তেমনি লোকসানও গুনতে হচ্ছে তাদের। কক্সবাজার মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, সাগরে যাওয়া ট্রলারগুলো বাঁকখালী নদীর তীরে ফিরে। কিছু কিছু ট্রলারে মাছের পরিমাণ একেবারেই কম। আবার অনেকে ফিরেন খালি ট্রলার নিয়েই। জেলেরা বলছেন, জাল ফেলেও মিলছে না মাছের দেখা। ফলে ট্রলারে খাবার শেষ হয়ে যাওয়ায় যা পাওয়া যাচ্ছে তা নিয়ে বা খালি হাতে ঘাটে ফিরতে বাধ্য হচ্ছেন।

এফবি আল্লাহর দান ট্রলারের মাঝি ইমরান বলেন, ‘গতবছর এই সময় সাগরে মাছ শিকারে গিয়ে পাঁচ হাজার ইলিশ পেয়েছিলাম। কিন্তু গত ১২ দিন সাগরে মাছ শিকার করে পেয়েছি মাত্র ৩০০ ইলিশ। অবশেষে খাদ্য শেষ হয়ে যাওয়ায় বাধ্য হয়ে ফিরতে হয়েছে ফিশারি ঘাটে।’

মোহাম্মদ নয়ন নামে আরেক জেলে বলেন, ‘ট্রলার মালিক দুই লাখ টাকার রসদে ১৫ জন জেলে দিয়ে সাগরে মাছ শিকারে পাঠিয়েছিলেন। কিন্তু ১৫ দিন সাগরে জাল ফেলে আশানুরূপ মাছ ভাগ্যে জুটল না। অল্প পরিমাণ মাছ পেয়েছিলাম, যা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে এনে বিক্রি করে মাত্র ৪০ হাজার টাকা পেয়েছি। এতে ট্রলার মালিকের লোকসান হয়েছে এক লাখ ৬০ হাজার টাকা। এখন আর ট্রলার মালিক সাগরে পাঠাচ্ছেন না।’

নুনিয়ারছড়া এলাকার মৎস্য ব্যবসায়ী নাঈম উদ্দিন বলেন, ‘কক্সবাজার মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র প্রায় প্রতিদিন সকাল-বিকাল ভরা থাকে সামুদ্রিক মাছে। কিন্তু এখন অবতরণ কেন্দ্রে মাছের আকাল।’

মৎস্য ব্যবসায়ী জয়নাল আবেদীন হাজারী বলেন, ‘মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে মাছের অবতরণ কম হলে দাম বেড়ে যায়। ট্রলারগুলো যেভাবে খালি ফিরে আসছে তাতে মনে হচ্ছে সাগরে ‘মাছের লকডাউন’ চলছে। যৎসামান্য যা মাছ মিলছে তা হয়তো লকডাউনের কঠোরতা না মেনে বের হয়ে জালে আটকা পড়ছে।’

আরেক ব্যবসায়ী শামসুল আলম বলেন, ‘একে তো মাছের পরিমাণ কম, তার ওপর কঠোর লকডাউন। সবমিলিয়ে মহাবিপদে রয়েছি।’

ব্যবসায়ী সিরাজুল ইসলাম বলেন, ‘এক কেজি ইলিশের দাম পড়ছে এক হাজার টাকা, রিটা (গুইজ্জা মাছ) বিক্রি হচ্ছে ৪০০ টাকা, সুরমা সাড়ে ৫০০ টাকা, চাপা ৩০০ টাকা ও টুনা ২০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। সব ধরনের মাছে ৫০ থেকে ১০০-১৫০ টাকা দাম বাড়তি।’

মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের মার্কেটিং কর্মকর্তা মো. দেলোয়ার হোসেন জানান, সাগরে মাছের আকাল চলায় জেলেদের মাছ শিকারে পাঠাচ্ছেন না অনেক ট্রলার মালিক। ফলে রাজস্ব আদায় কম হচ্ছে।

গতবছর কক্সবাজার মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে ফেব্রুয়ারি, মার্চ ও ১৪ এপ্রিল পর্যন্ত প্রায় দুই হাজার ৭০০ মেট্রিক টন সামুদ্রিক মাছ অবতরণ হয়েছিল। সে হিসাবে গতবছরের এ সময়ে সরকারি রাজস্ব আয় হয়েছে প্রায় সাড়ে ২৪ লাখ টাকা। কিন্তু এ বছর একই সময়ে গত রোববার (১৮ এপ্রিল) পর্যন্ত মাছ অবতরণ হয়েছে এক হাজার ৬০১ মেট্রিক টন। আর রাজস্ব আয় হয়েছে সাড়ে ১৪ লাখ টাকা।

সোনালীনিউজ/এমটিআই

Wordbridge School
Link copied!