• ঢাকা
  • শনিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

হিজলায় গায়ের জোরে অন্যের জমিতে পুকুর কাটছে ভূমিদস্যু আলতাব!


বরিশাল প্রতিনিধি মে ২, ২০২১, ০৩:১৮ পিএম
হিজলায় গায়ের জোরে অন্যের জমিতে পুকুর কাটছে ভূমিদস্যু আলতাব!

বরিশাল: বরিশাল জেলার হিজলা উপজেলার ডিক্রিরচর গ্রামে জোরপূর্বক জমি দখল করে পুকুর খননের অভিযোগ পাওয়া গেছে। বৃহস্পতিবার (২৯ এপ্রিল) সকালে জমির মালিক মিযানুর রহমান বাঘা নিজে বাদী হয়ে হিজলা থানায় ভূমিদস্যু আলতাব আকনের বিরুদ্ধে এ অভিযোগ দায়ের করেন।

সূত্রে জানা যায়, উক্ত জমিটি শামসুল হক জমাদ্দারের রেকর্ডীয় সম্পত্তি। তিনি খোদাবক্স আকন থেকে ক্রয় সূত্রে দলীল মূলে ১৪২ নং খতিয়ানের ১০৪ শতাংশ জমির মালিক। তার থেকে ক্রয়সূত্রে পরবর্তীতে ২৪ শতাংশ জমির মালিক হন মিজানুর রহমান বাঘা এবং ১২ শতক জমির মালিক হন আব্দুস সাত্তার। এই ৩৬ শতক জমি বাদে মূল জমির বাকী অংশ দীর্ঘ ৪০ বছর যাবৎ ভোগ দখল করেন শামসুল হক জমদ্দার।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, উক্ত জমিতে পাশ্ববর্তী ছয়গাঁও গ্রামের বাসিন্দা আলতাব আকন জোর পূর্বক ১০ বছরের পুরনো গাছ কেটে ভেকুর সাহায্যে পুকুর খনন করতে থাকেন। এতে জমির মালিক শামসুল হক জমদ্দার, মিজানুর রহমান বাঘা, 

ও ছাত্তার বাধা দেয়ায় অভিযুক্ত আলতাব আকনসহ তার ছেলেরা এসব মালিকদের মারধর করে। সেই সাথে পাশ্ববর্তী জমির মালিক মিমাংসার জন্য গেলে তাকেও মারধর করে এই ভূমিদস্যু খ্যাত আলতাব। এর আগে জমি দখলের প্রতিবাদ করায় জমির মূল মালিক শামসুল হক জমাদার ও তার ছেলে ইউসুফকেও মারধর করে আলতাবের গ্যাং বাহিনী। তারা জমির পাশেই সবসময় রড, চাপাটি ও লাটিসোটা নিয়ে বসে থাকে কেউ বাধা দিতে গেলেই আক্রমন করে বসে বলে জানায় গ্রামবাসী। এদের এসব কর্মকান্ডে স্থানীয় কয়েকজন নেতার ইন্দন আছে বলেও জানায় তারা।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে ডিক্রিচরের এক বাসিন্দা বলেন, আলতাব আকনের এরকম বেপরোয়া আচরণ আজ থেকে নয়, তার প্রত্যেকটা ছেলেই গ্রামের চুরির সাথে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে জড়িত। কয়েক মাস আগে আলতাব ও তার ছেলে ছাগল চুরি করতে গিয়ে হাতেনাতে ধরা পড়ে। এরপর পাবলিকের হাতে গণপিটুনি খায়। শুধু তাই নয় তার বোনদের সম্পত্তি আত্মসাত করেন তিনি পরে মামলায় জেল খেটে সম্পত্তি দিতে বাধ্য হয়। তাছাড়া, তার চাচা মোহাম্মদ হোসেন আকনের সম্পত্তি জোর করে টিপসই দিয়ে দখল করে নেয় আলতাব। এজন্য আইনের সহায়তা নেয় তার চাচা মোহাম্মদ আলী আকন। আমরা চাই এই বেপরোয়া আচরণের লোকটিকে আইনের আওতায় এনে কঠোর শাস্তির ব্যবস্থা করা হোক।

ভূমিদস্যু আলতাবের অত্যাচারে অতিষ্ঠ ভুক্তভোগী মিজানুর রহমান বাঘা বলেন, প্রায় ৭-৮বছর আগে আমি এই ২৪ শতাংশ জমি শামসুল হক জমাদ্দারের কাছ থেকে কিনি। তারপর ওই জায়গায় কাচা কেটে গাছ লাগাই। এ জমির সকল কাগজ-পত্র আমার আছে। কিন্তু দখলদারদের কাছে এগুলো মামুলি ব্যাপার। তাদের দলিল-পত্র হলো নিজের ইচ্ছা, ক্ষমতা আর পেশিশক্তি। আলতাব আকন আমার ও আমার শরীকদের জমি নিজের মত করে মেপে সীমানা দিয়ে পুকুর খনন শুরু করে। পুকুর খনন করতে গিয়ে জমি দখল করেই ক্ষ্যান্ত হননি তিনি, কেটে বিনাশ করেছে আমার ১০ বছর বয়সী একাধিক গাছ।

মিজানুর রহমান বাঘা আরও বলেন, 'দখলদারিত্বের বিরুদ্ধে বাধা প্রদান করতে গেলে, আলতাব আকন তার লোকদের দ্বারা আমাদের মারধর করেন। তখন আমি স্থানীয় হিজলা থানায় মামলা দায়ের করি।

আলতাবের কর্মকান্ড সম্পর্কে জমির মূল মালিক শামসুল হক জমাদ্দার বলেন, 'আমি বিগত ৪০ বছর যাবৎ এ জমি কিনে দলিলমূলে ভোগ করছি। এতোদিন কোন সমস্যা ছিল না। গত ৬ মাস আগে আলতাব আকন একাই জমি মাপজোক করে আমার জমি দখল করে বসে। এবং গত এক সপ্তাহ যাবত স্থানীয় নেতাদের ইন্দনে ভেকু দিয়ে পুকুর খনন করছে। আমি ও আমার সন্তানরা বাধা দিতে গেলেই মারধর করে। এর আগে আমার মেঝো ছেলে ইউসুফকে ও আমাকে মারধর করে আলতাব বাহিনী।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, আলতাবের এসব বেপরোয়া কর্মকান্ডে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে সহায়তা করে থাকেন বারেক আকন নামের আরেক ভূমিদস্যু। তিনি অন্যের জমি দখলসহ ওয়ারিশদের সম্পত্তি লোপাট করে একাই ভোগ করেন বলেও অভিযোগ পাওয়া যায়।

এদিকে তাদের জমি দখলের খবর পেয়ে স্থানীয় কয়েকজন সাংবাদিক ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। তারা দুপক্ষের কাগজপত্র ও বক্তব্য শোনেন। এসময় আলতাফ আকনের বক্তব্য ছিল উদ্ধত্যপূর্ণ ও অস্পষ্ট। তার কাছে সাংবাদিকরা কেন এলো এজন্য হুমকি ধামকি দিয়ে গালিগালাজ করতে থাকেন। 

তাছাড়া ২৪ এপ্রিল অভিযোগের প্রেক্ষিতে পুলিশ ঘটনাস্থলে এলে তাদেরকেও অস্পষ্ট ও খোড়া যুক্তি দিতে থাকেন আলতাব। পরে ২৫ এপ্রিল উপজেলার ডাকবাংলাতে দুপক্ষকে ডাকেন পুলিশ। এসময়  আলতাব আকন কোন প্রকার দলিলপত্র দেখাতে পারেনি। তার দাবি জমি দখল করতে কাগজপত্রের দরকার নেই, পেশী শক্তিই যথেষ্ট। আমি সবাইকে দেখে নেব বলেও থানার এসআই মনিরুজ্জামানের সামনে সবাইকে হুমকি দেন।

জানতে চাইলে স্থানীয় ইউপি সদস্য জাহাঙ্গীর জমাদ্দার বলেন, 'বিরোধপূর্ণ জমিতে আলতাফ আকন গাছ কেটে পুকুর খনন করেছিল পরে এনিয়ে  মারামারির হয়েছে শুনেছি। মিজান বাঘা থানায় মামলা করলে পুলিশ উভয় পক্ষকে উপজেলার ডাক বাংলো যেতে বলছে। আলতাফ আকন নাকি তার কাগজ-পত্র সব দেখাতে পারেনি। কারো কাগজ-পত্র না থাকলে, সে তো জমি ভোগ করতে পারবে না।

এ সম্পর্কে হিজলা থানার ওসি অসীম কুমার তালুকদার বলেন, 'জমি দখল করে পুকুর খনন এবং মারামারির বিষয়টা শুনেছি। আমরা দ্রুত বিষয়টার সমাধান করার চেষ্টা করছি।

এ সম্পর্কে মামলার দায়িত্ব প্রাপ্ত এসআই মনিরুজ্জামান তালুকদার বলেন, 'আমরা সরেজমিনে সব দেখে আলতাব আকনের বিরোধপূর্ণ জমিতে পুকুর খননের কাজ বন্ধ রাখার নির্দেশ দেই। এবং উপজেলার ডাক বাংলোতে গত ২৫ এপ্রিল আসতে বলি। তারা কিছু কাগজপত্র আনেন। তবে, মামলার বিবাদী আলতাব আকন কোন প্রকার শক্ত প্রমাণ উপস্থাপন করতে পারেন নি। পরে দুপক্ষের প্রনাণাদী দেখতে চাইলে বিবাদী আলতাব সময় চান এবং আগামী ৩০এপ্রিল (শুক্রবার) আবার তাদেরকে আসতে বলি।'

সোনালীনিউজ/এসএস/এসআই

Wordbridge School
Link copied!