• ঢাকা
  • শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল, ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

রিকশাচালকের টাকা ছিনিয়ে নেয়া ৩ পুলিশ বরখাস্ত


নিজস্ব প্রতিবেদক মে ৮, ২০২১, ০৫:৪৭ পিএম
রিকশাচালকের টাকা ছিনিয়ে নেয়া ৩ পুলিশ বরখাস্ত

অটোরিকশাচালক শামীম।

ময়মনসিংহ: রিকশাচালকের কাছ থেকে টাকা ছিনিয়ে নেওয়ার অভিযোগে ৩ পুলিশ সদস্যকে বরখাস্ত করা হয়েছে।গঠন করা হয়েছে তদন্ত কমিটি। প্রতিবেদন পেলে নেওয়া হবে আরও কঠোর ব্যবস্থা। পুলিশ সদস্যরা হলেন- ভালুকা ভরাডোবা হাইওয়ে পুলিশ ফাঁড়ির একজন এটিএসআই ও দুইজন কনস্টেবল।

তাদেরকে গাজীপুর হাইওয়ে পুলিশের মাঠ পর্যায়ের সব কার্যক্রম থেকে অব্যাহতি দিয়ে হাইওয়ে পুলিশ লাইনসে সংযুক্ত করা হয়েছে।

শনিবার (৮ মে) দুপুরে ভরাডোবা হাইওয়ে পুলিশ ফাঁড়ির ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মশিউর রহমান বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

তিনি জানান, বুধবার মধ্যরাতে শামীম নামের এক রিকশাচালক ভালুকার সিডস্টোর বাসস্ট্যান্ড এলাকায় অটোরিকশা নিয়ে দাঁড়িয়ে ছিলেন। এ সময় উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান আবুল কালাম আজাদ তার প্রাইভেট কারের জন্য অপেক্ষা করছিলেন। শামীমের চেহারা মলিন দেখে কারণ জানতে চাইলে তিনি তার টাকা ছিনিয়ে নেয়ার কথা জানান।

শামীম ময়মনসিংহের ফুলবাড়িয়া উপজেলার গাড়াজান পন্ডিত বাড়ি এলাকার মৃত মহর আলীর ছেলে।

তার কাছ থেকে ঘটনা জানতে পেরে উপজেলা চেয়ারম্যান নিজের ফেসবুক আইডি থেকে শামীমের কাছ থেকে পুলিশ টাকা নেয়ার বিষয়টি তুলে ধরেন। এরপর থেকেই স্ট্যাটাসটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়।

তিনি সেদিন লেখেন, ‘আজ রাত ১.২০ মিনিটের সময় লোকটি সিডস্টোর বাসস্ট্যান্ডে একটি অটোরিকশা নিয়ে দাঁড়ানো। আমি একাই দাঁড়িয়ে আছি, আমার গাড়ি ড্রাইভার গাড়ি নিয়ে আসতে একটু দেরি করে। লোকটি এসে আমাকে জিজ্ঞেস করলো কোথায় যাবেন আমি বললাম, না এখানেই।

‘আমি যে ভালুকা যাব বলি নাই। আমি তাকে জিজ্ঞেস করলাম এত রাত্রে যাত্রী কি পাওয়া যায়? লোকটি বলল, রোজা থেকে সারাদিন পারি না রাতেই যা পাই তা দিয়ে সংসার চালাই আর গাড়ির কিস্তি দেই। তবে স্যার কী করব, গত রাত্রে ৬০০ টাকা ইনকাম হয়েছিল। থানার কয়েকজন পুলিশকে থানার সামনে নামিয়ে যখন ইউটার্ন নেই তখন হাইওয়ে পুলিশ বলে প্রথমে আমার গাড়িটি নিয়ে যাবে।

‘এক পর্যায়ে বলে এক হাজার টাকা লাগবে। আমি অনেক অনুরোধ করে বলি স্যার আমি সারাদিন রোজা থেকে কাজ করতে পারি নাই ইফতারের পর থেকে ৬০০ টাকা পেয়েছি চাল-ডাল কিনব। কিন্তু কোনো কথাই শুনল না, টাকাটা নিয়ে নিলো। শেষ পর্যন্ত আমার কাছে আগের ১০০ টাকা ছিল। না খেয়ে রোজা থেকে আজ আবার পেটের দায়ে এত রাত পর্যন্ত আছি। আমার প্রশ্ন আমরা কোথায় বসবাস করি?’

অভিযোগটি গুরুতর হওয়ায় মিডিয়া অ্যান্ড পাবলিক রিলেশন্স উইং তাৎক্ষণিকভাবে বার্তাটি সংশ্লিষ্ট ইউনিট কমান্ডারদের কাছে পাঠিয়ে অভিযুক্তদের দ্রুত শনাক্ত করে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য অনুরোধ করে। সং‌শ্লিষ্ট সকলের সা‌থে যোগা‌যোগ ক‌রে জানা যায়, উল্লিখিত ঘটনাস্থলে নিকটবর্তী হাইওয়ে ফাঁড়ির তিনজন সদস্য দায়িত্বরত ছিলেন। এই ঘটনায় পরবর্তীতে একাধিক জাতীয় পত্রিকায় সংবাদ প্রকাশিত হয়।

মিডিয়া অ্যান্ড পাবলিক রিলেশন্স উইংয়ের বার্তার প্রেক্ষিতে গাজীপুর হাইওয়ে রিজিয়নের কমান্ডার আলী আহমদ খান বিষয়টি তদন্তের জন্য তাৎক্ষণিকভাবে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেন। একইসাথে, অভিযুক্ত তিন সদস্যকে তাৎক্ষণিক এক অফিস আদেশে সাময়িক বরখাস্ত করে তাদেরকে হাইওয়ে পুলিশের মাঠ পর্যায়ের কার্যক্রম থেকে অব্যাহতি দিয়ে হাইওয়ে পুলিশ লাইনসে সংযুক্ত করা হয়।’

তিনি জানান, তদন্ত কমিটি এরই মধ্যে সংশ্লিষ্ট রিকশা চালককে খুঁজে বের করে তার সাথে যোগাযোগ করেছে। তাকে সকল প্রকার সহযোগিতা ও সুষ্ঠু তদন্তের আশ্বাস দেয়া হয়েছে। সকল সাক্ষ্য প্রমাণ, তথ্য উপাত্ত এবং প্রাসঙ্গিক বিষয়াদি বিবেচনায় অভিযোগের সত্যতা পাওয়া গেলে অভিযুক্ত সদস্যদের বিরুদ্ধে বিধান অনুযায়ী পরবর্তী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

সোনালীনিউজ/আইএ

Wordbridge School
Link copied!