• ঢাকা
  • শনিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

দুর্গম দ্বীপে ক্ষতিগ্রস্তদের পাশে জাতিসংঘের ‘রিয়েল লাইফ হিরো’ সৈকত


ভোলা প্রতিনিধি জুন ৫, ২০২১, ০৪:১১ পিএম
দুর্গম দ্বীপে ক্ষতিগ্রস্তদের পাশে জাতিসংঘের ‘রিয়েল লাইফ হিরো’ সৈকত

প্রতিনিধি

ভোলা : ঘূর্ণিঝড় ইয়াসের প্রভাবে দেশের উপকূলীয় এলাকা ভোলা জেলার চরফ্যাশন উপজেলার দুর্গম ও বিচ্ছিন্ন দ্বীপ ঢালচরে সাধারণ মানুষের পাশে দাড়িয়েছে  ছাত্রলীগের উপ-সমাজসেবা সম্পাদক ও ডাকসুর সাবেক সদস্য তানভীর হাসান সৈকত।

দেশের দক্ষিণ অঞ্চলের উপকূলীয় এলাকাগুলো চরম ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে ঘূর্ণিঝড় ইয়াসের কারণে। অতিমাত্রায় জোয়ারের পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় ভোলা জেলার চরফ্যাশন উপজেলার দুর্গম ও বিচ্ছিন্ন দ্বীপ ঢালচরে অসংখ্য পরিবার হারিয়েছে তাদের গৃহ। সংকটে রয়েছে নিরাপদ পানি ও খাদ্যের। আর এসব মানুষের পাশে দাঁড়াতেই তানভীর হাসান সৈকত ও তাঁর বন্ধুরা মিলে ঢালচরে সাধারণ মানুষের পাশে দাড়িয়েছে। 

গত শনিবার সৈকত ও তাঁর বন্ধুরা মিলে ঢালচরে উদ্দেশ্যে রোয়ানা দেয়। পরেরদিনর রোববার বিকালে তারা ঢালচরে পৌছায়। এর পর ঘুরের পুরো চরঅঞ্চলটি দেখে এক এক করে অসহায় পরিবার গুলোর পাশে দাড়াচ্ছে। সৈইকতের সাথে যোগ দিয়েছে স্থানীয় ছাত্রলীগসহ যুব সমাজের একটি অংশ।

সৈকত প্রতিদিন সকালে তার দল নিয়ে বেড়িয়ে পরে বন্যায় ভেসে যাওয় অসহায় মানুষ গুলের ঘর তুলে দিচ্ছে । এছাড়াও শিশু খাদ্য সহ অসহায় পরিবার গুলোর মধ্যে ছাল ডাল সহ নিত্যপন্য বিতারন করছেন। চালু করেছেন একটি ফ্রি ডাইনিং টেবিল।

তানভীর হাসান সৈকত

অসহায় মানুষদের নিয়ে সৈকত তার ফেজবুকে লিখেন  ‘উপরে অবারিত আকাশ আর পাশে গর্জন করতে থাকা দুর্বোধ্য সাগরের দিকে তাকিয়ে থাকা নিরুপায় কিছু মানুষের নীরব চাহনির সাক্ষী হতে চাইনি। সত্যি বলতে আজ থেকে ৭/৮ দিন আগেও ঢালচর বলে কোনো স্থানের অস্তিত্ব নিয়ে অবগত ছিলাম না। আর আজ সারাদিন আশপাশ ঘুরে দেখার পর মনে হচ্ছে আমি যেন এই জনপদেরই সন্তান।

মূল দ্বীপের দুই-তৃতীয়াংশ ইতিমধ্যেই বিলীন হয়ে গেছে গত দুই দশকে। ইউনিয়নের ৯টি ওয়ার্ডের মধ্যে ৬টি সম্পূর্ণ ও ২টি আংশিক তলিয়ে গিয়েছে। বাকি জেগে থাকা অংশকে ঘিরেই এখানকার মানুষের জীবন সংগ্রাম আবর্তিত হয়।

এখানে অসংখ্য বাড়ি সর্বশেষ ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে জাস্ট ধ্বসে পড়েছে, অনেকগুলো বাড়ির কাঠামো টিকে গেলেও টিনের চাল-দেয়াল সব উড়ে গেছে নয়তো পানিতে ভেসে গেছে। অনেকেই পরিবারের নারীদের নিয়ে নৌকায় ভাসছেন। বেশিরভাগের গৃহপালিত গরু-মহিষ হয় ভেসে গেছে নয়তো লবণাক্ত পানি পান করে মারা যাচ্ছে।  নিজের চোখের সামনেই অসংখ্য অবলা প্রাণির ছটফট করে মারা যাওয়া দেখতে হলো।

কেউ কারো দু:খ আসলে লাঘব করতে পারে না। আমরা সেই চেষ্টা করছিও না। আমরা শুধু প্রচন্ড অতিথিপরায়ণ এই মানুষগুলোর কষ্টটা একটু অনুভব করতে চাচ্ছি। এই কারণে গতানুগতিক ত্রাণ/খাদ্য সামগ্রী বিতরণের মধ্যেই শুধু সীমাবদ্ধ থাকছি না আমরা। আমরা সম্মিলিত প্রয়াসে এই মানুষগুলোর মাথার উপরে যেন খোলা আকাশ না থাকে কিংবা যাযাবরের মতো নৌকায় ভেসে বেড়াতে না হয় সে চেষ্টা করবো। দিশেহারা বোধ করা স্থানীয় তরুণরাও উদ্দীপ্ত, উজ্জীবিত আমাদের পরিকল্পনায়। তারাও আমাদের সাথে যুক্ত হচ্ছে সোৎসাহে। সকল ভিন্নতা ছাপিয়ে একান্নবর্তী বিরাট একটি দল হয়ে গেছি যেন আমরা।

আপনাদের যেকোনো সহায়তা আমাদের এই চেষ্টাকে আরেকটু সহজ করবে। যোগাযোগের নম্বর : ০১‌৭৫৯৫৯৫৭৮৬, ০১৬৮৪০২৩৪১১।

এ বিষয়ে সৈকত বলেন, চরফ্যাশনের দুর্গম ও বিচ্ছিন্ন দ্বীপে ঘূর্ণিঝড় ইয়াসের ফলে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি সাধিত হয়েছে। অতিমাত্রায় জোয়ারের পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় অসংখ্য পরিবার গৃহহীন হয়ে পড়েছে পানিবন্দি জীবনযাপন করছে অনেকেই। দেশের উপকূলীয় অঞ্চলগুলোর মানুষের এমন দুর্ভোগের সময় তাদের পাশে দাঁড়ানো অত্যন্ত জরুরি।

‘তাই দেশের মানুষের এমন দুর্দিনে তাদের পাশে দাঁড়ানোর চিন্তা থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এক ঝাঁক তরুণ মিলে আজ বেরিয়ে পড়ছি ভোলার চরফ্যাশন উপজেলার ঢালচর ইউনিয়নের উদ্দেশে। সামর্থ্য অনুযায়ী সহায়তা এবং কায়িক শ্রম দিয়ে ভেঙে যাওয়া ঘরগুলো পুননির্মাণ করব। ছাত্র হিসেবে আমাদের সামর্থ্য কম, কিন্তু চেষ্টা অনেক। আমাদের এই চেষ্টার পাশে যদি কেউ দাঁড়াতে চান, অবশ্যই আমাদের সাথে যোগাযোগ করবেন’, যোগ করেন সৈকত।

গত বছর করোনা মহামারির শুরুতে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ছিন্নমূল মানুষকে টানা ১২১ দিন দুবেলা খাবার তুলে দেন তানভীর হাসান সৈকত ও তাঁর বন্ধুরা। শুধু তাই নয়, ওই সময়ে বন্যা পরিস্থিতিতেও তিনি উত্তরাঞ্চলের বন্যা কবলিত মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছিলেন, দিয়েছিলেন খাদ্য সহায়তা। এসববের স্বীকৃতিস্বরূপ পেয়েছেন জাতিসংঘ থেকে ‘রিয়েল লাইফ হিরো’।

এরপর চলিত বছরে লকডাউনের শুরু থেকে ঢাকার শহরের ১০ হাজার শিশুখাদ্য বিতরণ করেন। ছাত্রলীগের সহায়তায় রমজান মাসে টিএসসির আশপাশে সেহেরি বিতরণ করেন।

সোনালীনিউজ/এমএএইচ

Wordbridge School
Link copied!