• ঢাকা
  • শনিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

স্বপ্নের ঘর পেতে যাওয়ায় খুশি মরিয়ম বেগম


আখাউড়া (ব্রাহ্মণবাড়িয়া) প্রতিনিধি জুন ১৯, ২০২১, ০৩:০৮ পিএম
স্বপ্নের ঘর পেতে যাওয়ায় খুশি মরিয়ম বেগম

ব্রাহ্মণবাড়িয়া : রাত পোহালে স্বপ্নের আপন ঠিকানায় ঘর পেতে যাওয়ায় মরিয়ম বেগম এখন মহা খুশি। এখন যেন সে শুধু অপেক্ষা করছেন নতুন স্বপ্নের ঘরে উঠানিয়ে। এ যেন তার এক নতুন স্বপ্ন। আর এই স্বপ্নের নতুন ঘরে জীবন শুরু করতে তিনি যেন অধীর আগ্রহ নিয়ে বসে আছেন।

আখাউড়া উপজেলার দক্ষিণ ইউনিয়নের সাহেব নগর গ্রামের মৃত আবু তাহের মিয়ার স্ত্রী মরিয়ম বেগম বলেন, আমরা নিতান্তই একজন অসহায় ভূমিহীন গরিব মানুষ। আজ থেকে ১০ বছর আগে তার স্বামী অসুস্থ হয়ে মারা যায়। স্বামী মারা যাওয়ার পর সংসারে ৩ ছেলে ২ মেয়ে নিয়ে চারদিকে শুধু অন্ধকার দেখেছি। সামান্য আয়ের সংসারে ভাঙ্গাচুরা ভাড়া বাড়িতে খেয়ে না খেয়ে ছেলে মেয়ে নিয়ে কোন রকম দিনানিপাত করতে হয়েছে। তাছাড়া ভাড়া ঘরটি খুবই জড়াজীর্ণ, সামান্য বৃষ্টিতেই টিনের ছিদ্র দিয়ে ঘরে বৃষ্টির পানি পড়ায় আর শীতের সময় এই ভাঙ্গা ঘরে ছেলে সন্তান নিয়ে তাদের থাকতে খুবই কষ্ট করতে হয়। কখনো কল্পনা ও করতে পারেনি তার পাকা ঘর হবে। পাকা ঘরে থাকতে পারবে। সব কিছু যেন এখন তার স্বপ্নের মতো মনে হচ্ছে।

কিন্তু মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পাকাঘর তৈরী করে দিয়ে আমাদের দীর্ঘ দিনের কষ্ট দুর করেছেন। প্রধানমন্ত্রী যে কথা বলেন সে কথা রাখেন। কথা অনুযায়ী তিনি আমাদের মতো অসহায় গরিবদের দিকে তাকিয়েছেন। আল্লাহ তাকে সুস্থ ও ভালো রাখুক। আমরা মন থেকে দোয়া করি তিনি যেন অনেক দিন বেঁচে থাকেন। এভাবেই কথাগুলো বলেন দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের অধীনে মুজিববর্ষ উপলক্ষে গৃহহীনদের জন্য দুর্যোগসহনীয় প্রধানমন্ত্রীর উপহারের সেমিপাকা ঘর বরাদ্দ পেয়ে মুখে হাসির ঝিলিক নিয়ে মরিয়ম বেগম এভাবেই তার অনুভূতি প্রকাশ করেন। এখন শুধু অপেক্ষ ঘরে উঠা। আর এই স্বপ্নের নতুন ঘরে জীবন শুরু করতে যেন অধির আগ্রহ নিয়ে তিনি বসে আছেন।

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়ায় দ্বিতীয় ধাপে আশ্রয়ন-২ প্রকল্পের আওতায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপহার হিসেবে বাড়ি পাচ্ছেন আরো ৫০ ভূমিহীন ও গৃহহীন পরিবার। রোববার প্রধানমন্ত্রীর ভিডিও কনফারেন্সে মাধ্যমে উপকারভোগীদের মাঝে এসব ঘরের চাবি ও জমির দলিল হস্তান্তর করবেন।

এদিকে আব্দুল্লাহপুর গ্রামের আব্দুর রাজ্জাক, আনন্দপুর গ্রামের মো. হারুনহাওলাদার সহ সব গৃহহীন অসহায় পরিবারের সদস্যরা ঘর বরাদ্দ পেতে যাওয়ায় সবাই অনেক খুশি ও আনন্দ প্রকাশ করেছেন।

ঘর হাতে পেতে আর মাত্র এক দিন সময় যেন তাদের অপেক্ষা করতে হচ্ছে । এই অপেক্ষা যেন অধীর আগ্রহে কাটাচ্ছেন ভূমিহীন অসহায় পরিবারের লোকজন। তাদের স্বপ্ন ভরা দুচোখে শুধু ভেসে উঠছে রঙ্গীন স্বপ্ন। যে লোকগুলো এতদিন পথে ঘাটে, ভাঙ্গাচুরা ঘরে কষ্ট করে থাকতো এখন যেন দু:খের দিন শেষ হতে চলেছে।

খোঁজ নিয়ে জানা যায় মুজিব শতবর্ষ উপলক্ষ্যে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়া উপজেলায় প্রধানমন্ত্রীর আশ্রয়ণ প্রকল্পের আওতায় ভূমি ও গৃহহীন ৬০৬টি পরিবারের জন্য নির্মাণ করা হচ্ছে।

ইতিমধ্যে উপজেলার চরনারায়পুর কেন্দুয়াই, রুটি ,চানপুর এলাকায় সরকারি খাস জমিতে ৫০টি ঘর নির্মাণ করা হয়। উপকারভোগীরা পাবেন সম্পূর্ণ বিনামূল্যে দুই শতাংশ জমির মালিকানা। সেই সঙ্গে দুই কক্ষবিশিষ্ট নির্দিষ্ট ডিজাইন ও সুদৃশ্য রঙিন টিনশেডের দুর্যোগ সহনীয় বাড়ি। এতে থাকছে বারান্দা, রান্নাঘর, সংযুক্ত টয়লেটসহ অন্যান্য সুবিধা।

সরকারি খাস জমিতে নির্মিত প্রতিটি ঘরে ব্যয় হয়েছে ১ লাখ ৯০ হাজার টাকা। সবগুলো ঘর একই নকশায় হচ্ছে। জেলা প্রশাসন, উপজেলা প্রশাসন ,জনপ্রতিনিধি এসব কাজের তদারকি করছে।

এদিকে দিনের বেলা ঘরনির্মাণ কাজ চলা অবস্থায় বরাদ্দ পাওয়া ভূমিহীন পরিবারের সদস্যরা এসে তীর্থের কাকের মতো বসে থাকেন প্রকল্প এলাকায়। তাদের চোখেমুখে একটাই স্বপ্ন, তারা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপহার নতুন ঘরের মালিক হতে যাচ্ছেন। শুরু করতে যাচ্ছেন শান্তিতে বসবাসের নতুন জীবন।

উপজেলা সহকারী কমিশনার ভূমি মো. সাইফুল ইসলাম বলেন, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অসহায় পরিবারের জন্য উপহার স্বরূপ এসব স্বপ্ননীড় তৈরি করে দিচ্ছেন। সরকারের এই কর্মসূচির মূল উদ্দেশ্য মানুষের জীবনমানের উন্নয়ন এবং কোনো মানুষ যেন গৃহহীন না থাকেন। তিনি আরো বলেন দ্বিতীয় ধাপে এই উপজেলায় ৫০টি ঘর ভূমিহীনদের দেওয়া হবে। পর্যায়ক্রমে এ উপজেলার সব ভূমি ও গৃহহীনদের এ কর্মসুচির আওতায় আনা হবে।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ নুরে-এ আলম বলেন, প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা ও গৃহনির্মাণ নীতিমালা অনুযায়ী সরকারি খাস জমিতে ভূমিহীন ও গৃহহীন পরিবারের জন্য গৃহ নির্মাণ করা হচ্ছে। প্রতিটি ঘরের নির্মাণকাজের গুণগতমান যাতে বজায় থাকে এরজন্য সংশ্লিষ্ট সবাইকে নিয়ে সার্বক্ষণিক নজরদারি করছি। সবগুলো বাড়ি সরকার নির্ধারিত একই নকশায় করা হচ্ছে। রান্নাঘর, সংযুক্ত টয়লেটসহ অন্যান্য সুবিধা থাকছে এসব বাড়িতে।

সোনালীনিউজ/এমটিআই

Wordbridge School
Link copied!