• ঢাকা
  • শনিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

‘স্কুল পানিত ডুবি গেইছে ক্যাংকরি ক্লাস শুরু হইবে’


নীলফামারী প্রতিনিধি সেপ্টেম্বর ৮, ২০২১, ০১:৩৩ পিএম
‘স্কুল পানিত ডুবি গেইছে ক্যাংকরি ক্লাস শুরু হইবে’

নীলফামারী : জেরার ডিমলা উপজেলার টেপাখড়িবাড়ি ইউনিয়নের টাবুরচর এলাকার পঞ্চম শ্রেণির ছাত্র জাকির হোসেন বলল, ‘স্কুলের মাঠোত বড় বড় খাইল (গর্ত) আর পানি জমিছে। কাহো পড়ি গেইলে খবর আছে। স্কুলটাক ভালো করার দরকার হামার জন্যে।’

আল আমিন বলল, ‘অনেকদিন থাকি ক্লাস নাই, স্কুলোত যাবার পাও নাই। বন্যা হয়া এ্যালা স্কুল পানিত ডুবি গেইছে, ক্যাংকরি ফির ক্লাস শুরু হইবে। দেড় বছর বাড়িত থাকিয়া ভালো মতন বইপড়া হইল না।’ সে টেপাখড়িবাড়ি দুই নম্বর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের চতুর্থ শ্রেণির ছাত্র।

সরেজমিনে দেখা গেছে, তিস্তানদী বেষ্টিত উপজেলার টেপাখড়িবাড়ি ইউনিয়নের ৫নং ওয়ার্ডের টাবুরচর এলাকায় অবস্থিত টেপাখড়িবাড়ি দুই নম্বর সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়টি। ২০০৯ সালে স্থাপিত বিদ্যালয়টির এখন শিক্ষার্থীর সংখ্যা ১৭০ জন।

বিদ্যালয়ের অভিভাবকরা বলছেন, তিস্তা নদী সংলগ্ন হওয়ায় ২০১৬ সালের বন্যায় এলাকাটি ডুবে গেলে তৈরি হয় বড় বড় খানা খন্দক। যার কারণে বছরের প্রায় সব সময় পানি জমে থাকে এসব জায়গায়।

চলতি বছরের বৈশাখ মাস থেকে ভাদ্র মাস পর্যন্ত চার দফায় তিস্তা নদীতে পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় ফের পানিতে হাবুডুবু খাচ্ছে চরখড়িবাড়ি গ্রামের বিভিন্ন জায়গা। বিদ্যালয়টির অবস্থান সেখানে হওয়ায় পানিতে ডুবে আছে স্কুলের পুরো এলাকা। পানিতে ডুবে থাকায় কোনো রকমে বোঝা যাচ্ছে শহীদ মিনারটি।

এছাড়া জরাজীর্ণ বিদ্যালয়টি ঝুঁকিতে পড়েছে। দ্বিতল ভবনের ওয়ালে দেখা গেছে ফাটল আর ভাঙনের দৃশ্য। যে কোনো মুহূর্তে ধসে পড়তে পারে ।

ওই ইউনিয়নের পাঁচ নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য মুসামিয়া বলেন, বিদ্যালয়টির অবস্থা অত্যন্ত নাজুক। অবকাঠামো সংস্কার ও মাঠে মাটি ভরাট করে খানা খন্দক সমতল করতে হবে। বর্তমানে বিদ্যালয়ে শিক্ষার পরিবেশ নাই। বিশেষ করে ১২ সেপ্টেম্বর তারিখ থেকে স্কুল খোলার যে প্রস্তুতি চলছে তাতে শিক্ষার্থীরা এসে এই অবস্থা দেখলে আর আসতে চাইবে না।

ওই বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক খাদিজা বেগম বলেন, এখন পানি বন্দি আমরা। বন্যার কারণে বিদ্যালয়টির অবকাঠামো নষ্ট হয়ে গেছে। মাঠ ও রাস্তাঘাট, সবকিছু বন্যা খেয়ে ফেলেছে। ভেঙ্গে পড়ার ভয়ে কেউ দোতলায় উঠতে চায় না। কীভাবে ১২ তারিখ বিদ্যালয় শুরু হবে তানিয়ে শঙ্কায় আছি।

তবে বিদ্যালয়ের পাশে একটি জায়গায় টিনশেড চালা দিয়ে ক্লাস শুরু করার জন্য এসএমসি, ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান এবং শিক্ষা কর্মকর্তাদের সাথে আলোচনা চলছে।

এদিকে, টেপাখড়িবাড়ি ইউপি চেয়ারম্যান ময়নুল হক জানান, চরখড়িবাড়ি এলাকায় আটটি প্রাথমিক ও একটি মাধ্যমিক বিদ্যালয় রয়েছে। ২০১৬ সালের বন্যায় সব গুলো বিদ্যালয় ক্ষতিগ্রস্ত হয়। বিশেষ করে টাবুরচরে টেপাখড়িবাড়ি দুই নম্বর সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়টি এখনও পানির তলে। পানি না শুকা পর্যন্ত স্বাভাবিক অবস্থায় আসবে না। এনিয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করছি।

উপজেলা সহকারী প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা রাশেদুজ্জামান বলেন, উপজেলার আটটি বিদ্যালয়ের মধ্যে দুই নম্বর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়টি এখন নাজুক অবস্থায় আছে। তিনি বলেন, বিদ্যালয়টি ঝুঁকিপূর্ণ হওয়ায় সেটি পরিত্যক্ত দেখিয়ে নিলামে দেওয়ার জন্য প্রক্রিয়া চলছে।

এ নিয়ে এসএমসি, ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ, স্থানীয় চেয়ারম্যানের সঙ্গে সমন্বয় করা হচ্ছে। সরকারিভাবে বরাদ্দ এলে দ্রুত কাজ শুরু করা হবে। তবে স্থানীয়ভাবেও সমাধানের উদ্যোগ নেয়া হবে।

জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা নবেজ উদ্দিন বলেন, পানিতে তলিয়ে থাকা বিদ্যালয়টিকে স্বাভাবিক করার জন্য কাজ করা হচ্ছে। এক্ষেত্রে বিকল্প পদ্ধতিতে পাঠদান করার ব্যবস্থা করা হবে।

এছাড়া বিদ্যালয়টি ঝুকিঁপূর্ণ হওয়ায় ঊর্ধ্বত কর্তৃপক্ষের কাছে চিঠি দেয়া হয়েছে। বরাদ্দ আসলে নতুন ভবনের কাজ শুরু হবে। এক্ষেত্রে বিকল্প পদ্ধতি গ্রহণে সংশ্লিষ্ঠদের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। ১২ তারিখের আগে বিদ্যালয়গুলোকে প্রস্তুত করা হবে।

সোনালীনিউজ/এমটিআই

Wordbridge School
Link copied!