• ঢাকা
  • বুধবার, ২৪ এপ্রিল, ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

হিমাগারে ৬ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে আলু


মুন্সীগঞ্জ প্রতিনিধি অক্টোবর ১২, ২০২১, ১১:০৫ এএম
হিমাগারে ৬ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে আলু

৬ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে আলু, ফাইল ছবি

মুন্সীগঞ্জ: কৃষক আলু বিক্রি করতে না আসলে হিমাগার মালিকরা একদিকে হিমাগার ভাড়ার টাকা পাবেননা অন্যদিকে বাড়তি শ্রমিক নিয়ে টাকা খরচ করে হিমাগারের আলু বাইরে ফেলতে হবে। এছাড়া অনেক কৃষককে অগ্রিম টাকা দাদন (ঋণ) হিসাবে দিয়ে হিমাগার মালিক তাদের হিমাগারে আলু সংরক্ষন করেছেন হিমাগার ভাড়া পাওয়ার আশায়। প্রতিবস্তা আলু রাখার জন্য অনেক কৃষক আলু পাইকারদের তারা ২/৩শত টাকা করে দাদন(ঋণ) দিয়েছেন। এখোন আলু বিক্রি করতে কৃষক হিমাগারে না আসলে একদিকে হিমাগার ভাড়া অন্যদিকে অগ্রিম দেওয়া টাকা দুইটা হতে বঞ্চিত হবেন হিমাগার মালিকরা। এনিয়ে অশ্বস্তিতে আছেন হিমাগার কর্তৃপক্ষ।  

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অফিস সূত্রে জানা গেছে, মুন্সিগঞ্জে এ বছর ৩৭ হাজার ৮৫০ হেক্টর জমিতে আলু চাষ করা হয়েছিলো। এতে উৎপাদন হয়েছিল প্রায় ১৩ লাখ টন। এর মধ্যে কৃষকরা সাড়ে ৫লাখ টন আলু হিমাগারে সংরক্ষণ করেছেন।

এক বস্তা (৫০ কেজি) আলু উৎপাদন খরচ ছাড়াই হিমাগারে জমি হতে পৌছাঁতে গাড়ি ভাড়া, প্রতি খালি বস্তা ক্রয় এবং হিমাগার ভাড়া নিয়ে কৃষকের খরচ ৩১০ টাকা। অথচ এখোন আলু বিক্রি হচ্ছে হিমাগারগুলোতে প্রতিবস্তা ৩০০ শত টাকা। এতে উৎপাদন খরচতো দূরের কথা হিমাগারগুলো আলু আনা এবং স্টোর ভাড়াই পাচ্ছেনা কৃষক। অনেক কৃষক দাম কম হওয়ায় তাদের হিমাগারে রক্ষিত আলুর খোজঁই নিচ্ছেন না। এখনো মুন্সিগঞ্জের হিমাগারগুলোতে ৮০ভাগ আলু অবিক্রিত রয়ে গেছে। অথচ নতুন আলু উৎপাদনের সময় এসে গেছে। কিছুদিনের মধ্যে হিমাগারগুলো খালি করে নতুন আলু সংরক্ষনের জন্য প্রস্তুতি নিতে হবে। এই বিপুল সংখ্যক আলু বিক্রি না হলে, হিমাগার মালিকদের এ সমস্ত আলু শ্রমিক নিয়ে বের করে ফেলে দিতে হবে। 

বর্তমানে হিমাগারে আলু পাইকারি বিক্রি হচ্ছে ৬-৭ টাকা কেজি দরে। অথচ আলু উৎপাদন ও হিমাগারে সংরক্ষণ খরচ মিলে কেজি প্রতি খরচ হয়েছে ১৮-২০ টাকা। অর্থাৎ পাইকারি পর্যায়ে কেজি প্রতি চাষিদের লোকসান গুনতে হচ্ছে ১২-১৩ টাকা। অথচ খুচরা বাজারে কেজি প্রতি আলু বিক্রি হচ্ছে ১৮-২০ টাকা দরে। পাইকারি বাজারের সঙ্গে খুচরা বাজারে পার্থক্য ১২-১৪ টাকা। মূলত মধ্যস্বত্বভোগীদের কারণে এ অবস্থা হচ্ছে বলে অভিযোগ কৃষকদের।

ইউনুছ কোল্ড স্টোরের আলুর পাইকার ফারুক খান বলেন, মুন্সিগঞ্জে হিমাগারে রক্ষিত আলুর মাত্র ১৫ ভাগ আলু বিক্রি হয়েছে। যদি সরকার কোন পদক্ষেপ না নেয় তাহলে এই বিপুল সংখ্যাক হিমাগারে রক্ষিত আলু বিক্রি হওয়ার কোন সম্ভবনা নাই। এগুলো হিমাগার মালিকদের লেবার নিয়ে হিমাগার হতে বাইরে ফেলে দিতে হবে।

টঙ্গিবাড়ী উপজেলার কম্বাইন কোল্ডস্টোরের সুপাইরভাইজার মো. ফরিদ আহম্মেদ বলেন, তাদের হিমাগারে আলু ধারণ ক্ষমত্বা ১ লক্ষ ২০ হাজার বস্তা এ পর্যন্ত আলু বিক্রি হয়েছে মাত্র ২১ হাজার বস্তা। অবশিষ্ট আলু এখনো হিমাগারে রয়েছে।

শিলিমপুর হিমাগারের, আলু পাইকার ও কৃষক মো. রাজু বেপারী বলেন, হিমাগারে এক বস্তা আলু জমি হতে আনতে গাড়ি ভাড়া প্রায় ৫০টাকা, একটি খালি বস্তার দাম ৫০টাকা, হিমাগার ভাড়া ২০০ টাকা অন্যান্য আরো ১০/২০ টাকা সব মিলিয়ে ৩শত থেকে ৩২০টাক প্রতিবস্তায় উৎপাদন খরচ ছাড়াই হিমাগারে আলু রাখতে খরচ। আর বর্তমানে আলু বিক্রি হচ্ছে ৩ শত টাকা । সরকার গত বছর ৩৫টাকা কেজি একটা দর বেধে দিয়েছিলো আজকে আমাদের এই দুরাবস্থা সরকার কেন আমাদের দিকে তাকাচ্ছেনা। আমরা যদি আলু বিক্রি করতে না পারি তবে আমরা আগামী বছর কেমনে আলু চাষ করবো। আমরা শেষ আমাদের দিকে একটু তাকান।

কৃষক শাহ-আলম বলেন, আলু উৎপাদন করে স্টোর পর্যন্ত পৌঁছাতে আমাদের খরচ হয়েছে ৯ শত টাকা বস্তা। অথচ আলু বিক্রি হইতেছে ৩ শত টাকা বস্তা। এতো লোকসান হলে আমরা কৃষকরাতো বৌ পোলাপাইন লইয়া মইরা যামু। ঋণ করে চাষ করছি ঋনের টাকা কোথা হতে দিমু।

শিলিমপুর কোল্ডষ্টোরের ম্যানেজার মমিনুল ইসলাম বলেন, অন্যান্য বছরের তুলনায় এবার আলু উৎপাদন বেশি হইছে। তারপরেও স্টোর খোলার প্রথম দিক দিয়ে কয়েকদিন ভালো দামেই আলু বিক্রি হয়েছে । কিন্তু সম্প্রতি হঠাৎ করে ১৫০ থেকে ২০০ টাকা করে প্রতি বস্তায় আলুর দাম কমে গেছে। বিভন্ন হিমাগারগুলো কৃষকদের আলু রাখার শর্তে ঋণ দিয়েছে। ঋন এবং ভাড়া নিয়ে প্রতিবস্তা আলুতে কৃষকের নিকট হিমাগার পায় ৫শত থেকে সাড়ে ৫ শত টাকা। অথচ আলু বিক্রি হতেছে ৩শত থেকে সাড়ে ৩ শত টাকা। এজন্য কৃষকরা হিমাগারে আলু বিক্রিতো দূরের কথা খোজ নিতেও আসছেননা।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপতরের উপ-পরিচালক মো. খুরশীদ আলম বলেন, এ বছর চাহিদার তুলনায় আলু উৎপাদন অনেক বেশি হয়েছে। কিন্তু আলুর বিকল্প ব্যবহার বারে নাই। বিকল্প ব্যবহার না বাড়লে এই বিপুল সংখ্যক আলুর দাম পড়ে যাবে এটাই স্বাভাবিক।

সোনালীনিউজ/এমএস/এসআই

Wordbridge School
Link copied!