• ঢাকা
  • শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

কেউ মনে রাখেনি মাস্টার্স করা প্রতিবন্ধী শাহিদাকে


যশোর প্রতিনিধি অক্টোবর ২৭, ২০২১, ০১:২১ পিএম
কেউ মনে রাখেনি মাস্টার্স করা প্রতিবন্ধী শাহিদাকে

ছবি : শাহিদা খাতুন

যশোর : দু’পা ও একটি হাত বাদেই জন্ম নেয় প্রতিবন্ধী বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বোচ্চ ডিগ্রি (অনার্স-মাস্টার্স) অর্জন করা শাহিদা খাতুন। তবুও ভাগ্যে জোটেনি বিশেষ কোটায় কোনো চাকুরির সুবিধা। তবে থেমে থাকেনি নানান প্রতিবন্ধকতাকে পেছনে ফেলে সমাজ উন্নয়নে বিভিন্ন সেবামূলক কাজকর্মের জন্য একাধিকবার ‘জয়িতা’ সম্মাননা পেলেও আজো আলোর দিশা পায়নি।

যশোরের ঝিকরগাছা উপজেলার শিমুলিয়া গোপিনাথপুর গ্রামের রফি উদ্দিনের কন্য শাহিদা খাতুন (৩০)। জন্মগতভাবেই তার দুটি পা ও বাম হাত নেই। একটি মাত্র হাত (বাম হাত) দিয়েই করতে হয় তার সমস্ত কাজ।

এক প্রশ্নের জবাবে গণমাধ্যমকে শাহিদা খাতুন বলেন, আমরা ছয় ভাই বোন। আমি ভাই বোনের মধ্যে চতুর্থ। আমার আব্বা মুদির ব্যবসা করেন। প্রতিবন্ধী হিসেবে নিজেকে সমাজের বোঝা হিসেবে বাঁচতে চাইনি। তাই পড়ালেখা শুরু করি। ‘প্রতিবন্ধী ভাতা’ ছাড়া সরকারি বেসরকারি কোনো সহায়তা পাইনি। এরপরও কঠিন প্রতিবন্ধকতাকে জয় করে দেখিয়ে দিয়েছি ‘আমরাও পারি’। আমি যশোর সরকারি এমএম বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ থেকে ২০১৫ সালে এমএ পাশ করেছি।

শাহিদার বাবা রফিউদ্দিন বলেন, শাহিদা ছোট বেলায় সবসময় হতাশ থাকত। তার কোনো খেলার সঙ্গী ছিলো না। শুধু প্রতিবন্ধী হওয়ায় অন্য বাচ্চারা তার কাছ থেকে দূরে থাকতো। সে এক নিঃসঙ্গ জীবন অতিবাহিত করত। তার সহপাঠী ও সমবয়সিরা পায়ে ভর দিয়ে দৌড়াত, খেলত, নাচত, ছুটত, সাঁতার কাটত। কিন্তু এর কোনো কিছুই যখন সে করতে পারত না, তখন সে মনস্থির করল এই জীবন যখন অন্য জীবনের মতো চলবে না, তখন এই জীবনকে অন্যভাবে গড়তে হবে। তখন সে পড়ালেখা শুরু করল। যেহেতু সে নিজে চলাফেরা করতে পারে না তাই উদ্ভাবক মিজান তাকে একটা হুইল চেয়ার দেওয়ায় এখন সে মুটামুটি চলাফেরা করতে পারে।

শাহিদা বলেন, অনার্স-মাস্টার্স শেষ করে বেকার জীবনের অভিশাপ থেকে মুক্তি পেতে শিখেছি হস্তশিল্প ও কুটিরশিল্পের নানা কাজ। কিন্তু ভাগ্যের নির্মমতায় হয়নি কোনো সুযোগ-সুবিধা। এমনকি সরকারি কোটায় চাকরির আশা থাকলেও তা ভাগ্যে জোটেনি। বয়সসীমাও পার হতে আর মাত্র একটি বছর বাকি তাই হতাশাগ্রস্ত হয়ে পড়েছি। দিনের পর দিন যখন সকল আশা ভরসা ব্যর্থ হতে চলল ঠিক তখনই নিজ গ্রামে একটি ‘প্রতিবন্ধী স্কুল’ গড়ে তুলতে সহযোগিতা চেয়েছিলাম সমাজের বিত্তশালী ও বিবেকবান মানুষের কাছে। কিন্তু কেউ এগিয়ে আসেনি। সর্বশেষ শার্শার উদ্ভাবক মিজানুর রহমান প্রতিবন্ধী স্কুল গড়ার উদ্যোগ নিয়ে প্রাথমিক কাজটি শেষ করেছেন।

উদ্ভাবক মিজানুর রহমান বলেন, শাহিদা একজন প্রতিবন্ধী হলেও একটি মাত্র হাতে ভর করে লেখাপড়ার সর্বোচ্চ ডিগ্রি অর্জন করেছে। চাকরি-বাকরি না পেয়ে যখন সে হতাশ হয়ে পড়ে, তখন এটা আমার নজরে আসে। তার স্কুল তৈরির কথা আমি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচার করলে অনেকেই সহায়তা দিতি চায়। সবার সহায়তায় কাজটি আমি এগিয়ে নিয়েছি। শাহিদার স্কুল তৈরির স্বপ্নকে যারা বাস্তবায়ন করতে অর্থায়ন করেছেন তাদের প্রতি আমি চির কৃতজ্ঞ। বাঁশ খুঁটি টিন দিয়ে ঘরটি তৈরি করা হয়েছে।

শাহিদার ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এই স্কুলে শুধু প্রতিবন্ধী শিশুরাই নয়, বয়স্ক ও বিধবা নারীদের শিক্ষার ব্যবস্থা করবো। শিক্ষিত প্রতিবন্ধী নারী-পুরুষের কর্মসংস্থানের শতভাগ সুযোগ থাকবে। লেখাপড়ার পাশাপাশি এখানে প্রতিবন্ধীরা হস্তশিল্প ও কুঠির শিল্পের নানা কাজ শিখে স্বাবলম্বী হওয়ার স্বপ্ন দেখবে।

সোনালীনিউজ/এসএন

Wordbridge School
Link copied!