• ঢাকা
  • মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল, ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

নবজাতক সন্তান বিক্রি করে হাসপাতালের বিল দিলেন মা


চাঁদপুর প্রতিনিধি: ফেব্রুয়ারি ৩, ২০২২, ০৮:২০ পিএম
নবজাতক সন্তান বিক্রি করে হাসপাতালের বিল দিলেন মা

চাঁদপুর: চাঁদপুরের মতলব উত্তর উপজেলার ছেংগারচর পৌরসভার বারোআনি গ্রামের তামান্না বেগম গত ২৬ জানুয়ারি উপজেলার পালস-এইড জেনারেল হাসপাতাল অ্যান্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টারে ভর্তি হন। সিজারিয়ান অপারেশনের মাধ্যমে ছেলে সন্তানের জন্ম দেন তিনি।

হাসপাতাল ছাড়ার সময় বিল দিতে যান তামান্নার স্বজনরা। কর্তৃপক্ষ বিল করে ৪০ হাজার টাকা।

তামান্না জানান, সে টাকা দেয়ার সামর্থ্য ছিল না তাদের। তাই ৫০ হাজার টাকায় সন্তান বিক্রি করেন এলাকার এক নিঃসন্তান দম্পত্তির কাছে। সে টাকায় শোধ করেন বিল।

ওই নারী জানান, প্রসব বেদনা ওঠার পর ঘর ছাড়েন স্বামী। নবজাতক বিক্রির খবর শুনে ফিরে এসে এখন তিনি সন্তান চাইছেন।সন্তানকে ফিরে পেতে বিত্তবান মানুষের সহায়তা চেয়েছেন সেই মা।

তামান্না সাংবাদিকদের জানান, প্রেম করে ৫ বছর আগে স্থানীয় হানিরপাড় গ্রামের তৈয়ব আলীর ছেলে আলমকে বিয়ে করেন। শ্বশুর বাড়ি মেনে না নেয়ায় তারা আলাদা বাসায় ভাড়ায় ওঠেন। আগেও দুই সন্তান হয়েছে এই দম্পতির। তৃতীয় সন্তানের জন্মের সময় ঘনিয়ে আসলে স্বামী আলম টাকা না দিয়ে বাড়ি থেকে চলে যান।

তামান্না বলেন, ‘প্রসববেদনা উঠলে আমার স্বামী টাকা জোগাড় করতে না পেরে মোবাইল বন্ধ করে ঘর থেকে চলে যায়। আমার খালা তার জিনিসপত্র ৫ হাজার টাকায় বন্ধক রেখে হাসপাতালে ভর্তি করায়।

‘আমি গরিব মানুষ টাকা দেব কোথা থেকে? আরেক জনে আমাকে বিনামূল্যে রক্ত দিলেও হাসপাতালে রক্তের বিল দুই হাজার টাকা নেয়া হয়েছে। সব মিলিয়ে অপারেশন, ওষুধপত্র এবং আনুষাঙ্গিক খরচ নিয়ে প্রায় ৪০ হাজার টাকা খরচ হয়।’

তিনি বলেন, ‘কারও কথায় আমি সন্তান দেইনি। তবে যখন হাসপাতালের বিল পরিশোধ করতে এবং নিজের চিকিৎসার খরচ বহন করতে পারছিলাম না, তখনই সন্তান বিক্রি সিদ্ধান্ত নেই।

‘এর আগে কাউসার নামে একজন সন্তান বিক্রি করব কিনা আমার কাছে জানতে চায়। পরে হাসপাতালে একজনের সঙ্গে কথা বলে ৫০ হাজার টাকায় আমার বাচ্চাকে বিক্রি করে দেই।’

তামান্না জানান, হাসপাতালে ভর্তির আগে উধাও হয়ে গেলেও তার স্বামী এখন সন্তানের জন্য চাপ দিচ্ছে। তা না হলে তার সঙ্গে আর সংসার করবেন না বলেও হুমকি দিয়েছেন।

তিনি বলেন, ‘আমার বুকের ধন হারিয়েছি। আমার মানিককে আমার বুকে ফিরিয়ে দেয়ার ব্যবস্থা করতে সরকার ও সমাজের মানুষের কাছে আবেদন করছি।

‘জানি না আমি আমার সন্তানকে পাব কি না। কারণ, তারা আমার কাছ থেকে স্ট্যাম্প করেছে, এ সন্তান আমি আর কোনোদিন দাবি করতে পারব না। তার উপর ৫০ হাজার টাকা আমার মতো গরিব মানুষ কীভাবে তাদেরকে দেব।’

তামান্নার মা সেফালী বেগম বলেন, ‘টাকার অভাবে আমার নাতিকে বিক্রি করতে হয়েছে। এই টাকা ফিরিয়ে দেয়ার ক্ষমতা আমাদের নেই। কেউ যদি দয়া করে আমাদের, তবেই আমার মেয়ে তার সন্তান ফিরে পাবে।’

হাসপাতালের মালিক প্রতিনিধি লিমন সরকার বলেন, ‘বাচ্চা বিক্রির বিষয়ে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ কিছুই জানে না। দুই দিন আগে যখন তিনি অপারেশনের সেলাই কাটতে আসেন, তখনও আমরা তার বাচ্চা কেমন আছে জিজ্ঞাসা করলে জানান, বাচ্চা ভালো আছে।’

এ বিষয়ে মতলব উত্তর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা গাজী শরিফুল হাসান বলেন, ‘এ বিষয়ে এখন পর্যন্ত আমাদের কাছে কেউ কোনো অভিযোগ বা আবেদন করেনি। তবে আমি খোঁজ নিচ্ছি। বিস্তারিত জেনে পরবর্তী ব্যবস্থা গ্রহণ করব।’

সোনালীনিউজ/আইএ

Wordbridge School
Link copied!