• ঢাকা
  • বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ, ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০
বরিশালে সরকারি কর্মচারীদের সমাবেশ

‘বঙ্গবন্ধুর বাংলায় বৈষম্যের ঠাঁই নাই’


নিজস্ব প্রতিবেদক এপ্রিল ১৫, ২০২২, ০৪:২৮ পিএম
‘বঙ্গবন্ধুর বাংলায় বৈষম্যের ঠাঁই নাই’

ময়মনসিংহ: নতুন পে-স্কেলসহ ৭ দফা দাবি আদায়ে বিভাগীয় সমাবেশের অংশ হিসেবে বারিশালে সমাবেশ করেছেন সরকারি কর্মচারীরা। শুক্রবার (১৫ এপ্রিল) সকালে বরিশালের এ.কে ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে এ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। 

সমাবেশে বরিশাল বিভাগের সকল জেলা থেকে প্রজাতন্ত্রের ১১-২০ গ্রেডের সকল কর্মচারীরা অংশ নেন।

সমাবেশে কর্মচারি দাবি আদায় ঐক্য পরিষদের মুখ্য সমন্বয়ক মো. ওয়ারেছ আলী, ১১-২০ গ্রেডের সরকারি চাকুরিজীবীদের সম্মিলিত অধিকার আদায় ফোরাম-এর সভাপতি মো. লুৎফর রহমান, সাধারণ সম্পাদক মো. মাহমুদুল হাসান, সাংগঠনিক সম্পাদক এইচএম আব্দুর রাজ্জাকসহ কেন্দ্রীয় বিভিন্ন সংগঠনের নেতৃবৃন্দ ও বিভিন্ন জেলার কর্মচারী নেতারা উপস্থিত ছিলেন।

সমাবেশে দাবি আদায় ঐক্য পরিষদের মুখ্য সমন্বয়ক মো. ওয়ারেছ আলী বলেন, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্বাধীনতার ডাক দিয়েছিলেন শোষণ-নিপীড়ন ও নির্যাতিত মানুষের বৈষম্য নিরসনের জন্য। অথচ এই দীর্ঘসময় পরেও স্বাধীনতার সুফল পাচ্ছে না প্রজাতন্ত্রের কর্মচারীরা। তিনি বলেন, দেশে উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখতে প্রজাতন্ত্রের ১৪ লক্ষ কর্মচারী দিন-রাত পরিশ্রম করে যাচ্ছেন।বিশেষ করে ১১-২০ গ্রেডের কর্মচারীরা উন্নয়ন কাজের বড় অংশিদার। ২০১৩-১৪ সালে চারদলীয় ঐক্যজোটের পেট্রোল বোমা থেকে দেশকে বাঁচানোর জন্য নিম্ন গ্রেডের কর্মচারীরা সভা-সমাবেশ করেছি। আমরা শুধু প্রজাতন্ত্রের কর্মচারী না, দেশের জনগণের সেবক হিসেবে দেশের শান্তি-শৃঙ্খলা রক্ষায় বিভিন্ন সময় দায়িত্ব পালন করে আসছি।

তিনি বলেন, শিক্ষক-কর্মচারী, বিচার বিভাগীয় কর্মচারী, এলজিইডি, জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল, প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরসহ অন্যান্য দপ্তরের কর্মচারীরা গুরুত্বের সাথে তাদের দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছেন। 

প্রধানমন্ত্রীর শেখ হাসিনার কাছে প্রশ্ন রেখে তিনি বলেন, স্বাধীনতার ৫১ বছর পরেও সরকারি কর্মচারীদের তাদের দাবি আদায়ে কেন সমাবেশ করতে হচ্ছে। আপনি জানেন, নিম্ন গ্রেডের কর্মচারীদের সর্বনিম্ন স্কেল ৮২৫০ টাকা। সর্বসাকুল্যে পান ১৪ থেকে ১৫ হাজার টাকা। এই টাকায় জেলা-উপজেলা শহরেও বাসা ভাড়া পাওয়া যায় না। অন্যদিকে পরিবার পরিজনের ভরণপোষণের ব্যয় বৃদ্ধি পেয়েছে, চিকিৎসা ব্যয় বৃদ্ধি পেয়েছে।প্রজাতন্ত্রের কর্মচারীরা আজকে টিসিবির লাইনে। এই অবস্থায় বরিশাল সমাবেশের পর সরকারের প্রতিনিধিরা কর্মচারীদের ডেকে সমস্যা সমাধানের উদ্যোগ নেবেন বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি।সেইসঙ্গে ২৭ মে’র ঢাকায় মহাসমাবেশ সফল করতে বরিশালের কর্মচারীরে প্রতি আহ্বান জানান ওয়ারেছ আলী।

সমাবেশে ১১-২০ গ্রেডের সরকারি চাকুরিজীবীদের সম্মিলিত অধিকার আদায় ফোরামের সভাপতি মো. লুৎফর রহমান বলেন, ‘দেশ স্বাধীন হয়েছে দীর্ঘ ৫০ বছরের বেশি হলো। এখনও কেন সরকারি কর্মচারীরা বৈষম্যমুক্ত হতে পারেনি, বঙ্গবন্ধু কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে আজকে বরিশাল সমাবেশের মাধ্যমে আমার প্রশ্ন।’

তিনি বলেন, সবাই বলে থাকেন আমরা বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন বাস্তাবায়ন করতে চাই। আসলে কি কথাটা সত্য? আমি বলবো, বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন না, বঙ্গবন্ধু বাস্তবে যা চেয়েছিলেন সেটি বাস্তবায়ন করতে হবে। বঙ্গবন্ধু চেয়েছিলেন কর্মচারীরা দুধে-ভাতে খাকবে। যার জন্য উনি (বঙ্গবন্ধু) কর্মচারীদের পক্ষে কথা বলতে গিয়ে ছাত্রত্ব হারিয়েছিলেন। তিনি কর্মচারীদের ১০টি ধাপ চেয়েছিলেন, প্রস্তাবও করেছিলেন কিন্তু বাস্তবায়ন করে যেতে পারেননি। অতএব বঙ্গবন্ধুর সেই চাওয়া বাস্তবায়ন করুন। কর্মচারীদের সমস্যা সমাধান করুন। তিনি এই সমাবেশের মাধ্যমে কর্মচারীদের ৭ দফা দাবি আদায় না করে ঘরে ফিরবেন না বলে প্রত্যয় ব্যক্ত করেন।      

উল্লেখ্য, গত ১৯ মার্চ জাতীয় প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলনে দেশের বিভাগীয় শহরগুলোতে পর্যায়ক্রমে সমাবেশের ঘোষণা দেন বাংলাদেশ সরকারি কর্মচারি দাবি আদায় ঐক্য পরিষদের মুখ্য সমন্বয়ক মো. ওয়ারেছ আলী।

ঘোষণা অনুযায়ী বরিশালের পর ১৬ এপ্রিল খুলনায় সমাবেশ হওয়ার কথা থাকলেও তা স্থগিত করা হয়েছে। এছাড়া আগামী ১৩ মে রংপুরে বিভাগীয় সমাবেশ করা হবে। আগামী ২০ মের মধ্যে ৭ দফা দাবি বাস্তবায়নে যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ করা না হলে ২৭ মে ঢাকায় মহাসমাবেশ অনুষ্ঠিত হবে।

‘বাংলাদেশ সরকারি কর্মচারী দাবি আদায়ে ঐক্য পরিষদ’-এর ৭ দফা দাবিসমূহ:

১। পে-কমিশন গঠন পূর্বক ৯ম পে স্কেল বাস্তবায়ন করতে হবে। পে-স্কেল বাস্তবায়নের পূর্বে অন্তর্বতীকালীন কর্মচারীদের জন্য ৫০% মহার্ঘ্য ভাতা প্রদান করতে হবে।

২। ১৯৭৩ সালে বঙ্গবন্ধুর ঘোষণা অনুযায়ী ১০ ধাপে বেতন স্কেল নির্ধারণসহ পে-কমিশনে কর্মচারী প্রতিনিধি রাখাতে হবে।

৩। সচিবালয়ের ন্যায় সকল দপ্তর, অধিদপ্তরের পদ পদবী পরিবর্তনসহ এক ও অভিন্ন নিয়োগবিধি প্রনয়ণ করতে হবে।

৪। টাইম স্কেল সিলেকশন গ্রেড পূণর্বহাল সহ বেতন জ্যেষ্ঠতা পূনঃবহল, বিদ্যমান গ্রাচুইটি/আনুতোষিকের হার ৯০% এর স্থলে ১০০% নির্ধারণ ও পেনশন গ্রাচুইটি ১ টাকার সমান ৫০০ টাকা নির্ধারণ করতে হবে।

৫। সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকদের আপীল বিভাগের রায় বাস্তবায়নসহ সহকারী শিক্ষকদের বেতন নিয়োগ বিধি-২০১৯ এর ভিত্তিতে ১০ম গ্রেডে উন্নীতকরণ।

৬। আউট সোর্সিং পদ্ধতি বাতিল পূর্বক উক্ত পদ্ধতিতে নিয়োগকৃত ও উন্নয়ন খাতের কর্মচারীদের রাজস্বখাতে স্থানান্তর করতে হবে। ব্লক পোষ্টে কর্মরত কর্মচারীসহ সকল পদে কর্মরতদের পদোন্নতি বা ৫ বছর পর পর উচ্চতর গ্রেড প্রদান করতে হবে।

৭। বাজারমূল্যের উর্দ্ধগতি ও জীবন যাত্রার ব্যয় বৃদ্ধির সাথে সমন্বয় পূর্বক সকল ভাতাদি
পুনঃনির্ধারণ করতে হবে। চাকুরীতে প্রবেশের বয়সসীমা ৩৫ বছর ও অবসরের বয়স সীমা ৬২ বছর নির্ধারণ করতে হবে। 

সোনালীনিউজ/দন্তস্য

Wordbridge School
Link copied!