• ঢাকা
  • বুধবার, ২৪ এপ্রিল, ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

নেই ঈদ আনন্দ, আছে কষ্টের ছাপ


আখাউড়া (ব্রাহ্মণবাড়িয়া) প্রতিনিধি মে ৪, ২০২২, ১১:২২ পিএম
নেই ঈদ আনন্দ, আছে কষ্টের ছাপ

ব্রাহ্মণবাড়িয়া : ঈদ মানে খুশি, ঈদ মানে আনন্দ। এই দিনে ছোট-বড়, ধনী গরিব সকল ভেদাভেদ ভুলে এক কাতারে দাঁড়িয়ে নামাজ আদায় করেন। নামাজ শেষে তারা একে অপরে কোলাকুল করে থাকেন। ঈদ উপলক্ষে প্রায় বাড়িতে কম বেশী তৈরী হয় সেমাই, ফিরনি, পোলাও, কোর্মা, জর্দাসহ নানা প্রকারের সুস্বাদু খাবার। পাশাপাশি নতুন পোশাক পরে তারা আত্মীয়-স্বজন কিংবা বন্ধু-বান্ধবদের বাড়িতে বেড়াতে যান। ছোট বড় সবাই যেন মেতে উঠে আনন্দ উৎসবে। নানা আয়োজনের মধ্য দিয়ে এই ঈদে আনন্দ উৎসব অতিবাহিত করলেও আমাদের সমাজে চারপাশে অনেক ভাসমান আর ছিন্নমূল মানুষ রয়েছে যাদের আনন্দটুকু নেই। তাদের চোখে মুখে শুধু কষ্টের ছাপ। তাদের কপালে যেন ভালো করে এক বেলা খাবার জুটছে না।

এদের কাছে ঈদ যেন নতুন চাঁদ দেখার মাঝেই সীমাবদ্ধ। ঈদের দিন আর বছরের অন্যান্য দিন এদের কাছে প্রায় একই। ঈদ যে কি তারা যেন তা জানেনা। অন্যরা আনন্দ উৎসব করে তারা যেন দুর থেকে চেয়ে দেখেন।

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়া পৌর এলাকায় ছিন্নমূল মানুষেরা ঈদের এসব আনন্দ থেকে প্রতিনিয়তই বঞ্চিত রয়েছেন। তাদের ভাগ্যে জুটছেনা ভালো খাবার খাওয়া, নতুন পোশাক পরে আর বন্ধু বন্ধবদের সাথে ঘুরাঘুরিসহ আনন্দে মেতে উঠা।

পৌর শহরের বড়বাজার ,রেলওয়ে স্টেশন, কুলিবাগান এলাকায় অনেক অসহায় ছিন্নমুল লোকজন রয়েছে। ওইসব ছিন্নমুল লোকদের কাছে ঈদ আনন্দ উৎসব বলতে কিছুই যেন নেই। ঈদ কখন আসে কখন চলে যায় কিছুই বুঝতে না পাড়ায় অন্যান্য দিনের ন্যায় তারা চলাচল করছে। নেই তাদের ঘরে পোলাও, কোর্মা, জর্দা, ফিরনি সেমাই খাওয়া। নেই কোন নতুন পোশাক, সেইসাথে আত্মীয়-স্বজন কিংবা বন্ধু-বান্ধবদের বাড়িতে বেড়াতে যাওয়া ও আনন্দ উৎসব করা।

সরেজমিনে রেলওয়ে স্টেশন এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, বেশ কয়েকজন নারী জটলা বেধে এক কোনায় বসে আছেন। তাদের মধ্যে বেশীভাগ লোকজনই দুপুরের খাবার খান নি। সকালে কেউ রুটি খেয়েছেন, কেউ পান্তাভাত কেউ বা বিস্কুট খেয়েছেন। সবার চোখে মুখে শুধু কষ্টের ছাপ রয়েছে।

রেলওয়ে স্টেশন এলাকায় কথা হয় ছিন্নমুল আলেয়া বেগমের সাথে। তিনি বলেন অনেক দিন ধরে স্টেশন এলাকায় থাকছেন। এখানে থেকে তিনি ভিক্ষা করছেন। আজ দুপুর পযর্ন্ত একটি পাউরুটি ছাড়া আর কিছুই খাওয়া হয় নি বলে জানায়।

মরিয়ম বেগম বলেন, অসুস্থ একটি ছেলে নিয়ে তিনি কুলিবাগান এলাকায় একটি বাড়ি বসবাস করছেন। দিনে ওই ছেলেকে নিয়ে তিনি বিভিন্ন স্থানে ঘুরে ভিক্ষা করেন। সকালে দুজনে পান্তা ভাত খেয়েছেন । ঈদ সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন,আমাদের আবার কিসের ঈদ। নেই থাকার জায়গা নেই , এক বেলা খেলে আরেক বেলা খাওয়া যায় না, ঈদতো আমাদের জন্য নয়। তিনি আরো বলেন অন্যান্য দিন আমাদের যেইভাবে কাটে আজকেও সেইভাবে কাটছে। তবে এই দিনে তার চোখে মুখে লুকিয়ে আছে বেদনার ছাপ। এই দিনে অন্ত:ত সন্তানদেরকে নিয়ে ভালো খাবার খেতে না পারায় তার মনের ভিতর খুবই খারাপ লাগছে বলে জানায়।
মজিদ মিয়া বলেন, অনেক দিন ধরে তিনি কুলি বাগান এলাকায় অন্যেও বাড়িতে থাকছেন। কাজকর্ম কিছুই নেই তার। মানুষের দয়ার উপর খেয়ে না খেয়ে বেঁচে আছেন। সকালে এক বাড়িতে কিছু সেমাই খেলে ও দুপুওে কিছুই খাওয়া হয়নি বলে জানায়।

রাজু মিয়া বলেন, তার মা বাবা বলতে কেউ নেই। স্টেশন এলাকায় এক খালার কাছে থাকেন। স্টেশনে ট্রেন আসলে মালিকের পানি বিক্রি করেন সে। কাজ নেই তাই বসে আছি। ঈদ সম্পর্কে সে জানায়, ঈদকি বুঝি না। সব দিনই সমান মনে হয়।

মরিয়ম, মজিদ মিয়াসহ আরো অনেক ছিন্নমূল মানুষকেই চোখে পড়ে পৌর শহরের বিভিন্ন জায়গায়। যাদের ঈদে বাড়তি কোনো আনন্দ নেই। এসব ছিন্নমূল অধিকাংশ মানুষের শরীরে নেই কোনো নতুন জামা-কাপড়। এদের কাছে ঈদ উপলক্ষে কোনো আনন্দ উল্লাস নেই।

লিলি আক্তার জানায়, তার মা অসুস্থ। বাবা থেকেও নেই। আগে মানুষের বাড়িতে তার মা কাজ করতো। এখন পারেন না। সবাই দেখি নতুন কাপড় কিনে মাকে বলছি এই ঈদে একটা ফ্্রগ কিনে দিতে কিন্তু দেইনি। তবে অন্যেও বাড়ি থেকে আনা সেমাই আজ খেয়েছেন বলে জানায়।

রেলওয়ে স্টেশনে থাকা ভিক্ষুক জয়নাল বললেন, গত প্রায় ৪ বছর ধরে রেলওয়ে স্টেশনে ফ্লাট ফরমে থাকছেন তিনি। প্রতিদিনের মতো আজকেও ভিক্ষা করতে বের হয়েছেন। তিনি বলেন ভিক্ষা না করলে কি খেয়ে বাঁচবো। ঈদের নামাজ পড়া হয়েছে কি না জানতে চাইলে ফেল ফেল করে তাকিয়ে থাকেন।

রাখেলা বেগম বলেন, বয়স হয়েছে শরীরে রোগও আছে, তাই কাজকর্ম করতে পারি না। গত কয়েক বছর ধরে ছোট নাতিকে নিয়ে ভিক্ষা করছেন। যা জুটে তাই দিয়ে খেয়ে বেঁচে আছেন তিনি। এই ঈদে তার এই নাতিটা শার্ট চেয়েছিল কিন্ত তা দিতে না পারায় খুবই কষ্ট লাগছে। ভালো মন্দো খেয়েছেন কিনা জানতে চাইলে বলেন আমাদের আবার ভালো খাবার।

সোনালীনিউজ/এমটিআই

Wordbridge School
Link copied!