• ঢাকা
  • বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল, ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১
খুলনায় সমাবেশ

বিভেদ ভুলে আরও ঐক্যবদ্ধ কর্মচারীরা, মহাসমাবেশ থেকে কঠোর কর্মসূচি


নিজস্ব প্রতিবেদক মে ১৫, ২০২২, ০৪:১০ পিএম
বিভেদ ভুলে আরও ঐক্যবদ্ধ কর্মচারীরা, মহাসমাবেশ থেকে কঠোর কর্মসূচি

খুলনা: নতুন পে-স্কেলসহ ৭ দফা দাবি আদায়ে খুলনায় সমাবেশ করেছে বাংলাদেশ সরকারি কর্মচারি দাবি আদায় ঐক্য পরিষদ। রোববার (১৫ মে) খুলনা প্রেসক্লাবের শহীদ শেখ আবু নাসের ব্যাংকুয়েট হলরুমে সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। 

সমাবেশে খুলনা বিভাগের সকল জেলা থেকে প্রজাতন্ত্রের ১১-২০ গ্রেডের সকল কর্মচারীরা অংশ নেন।

এর আগে শুক্রবার (১৩ মে) রংপুরের সমাবেশের দ্বন্দ্ব ভুলে প্রজাতন্ত্রের কর্মচারীদের স্বার্থে ঐক্যবদ্ধভাবে খুলনার সমাবেশে অংশ নেন কর্মচারী নেতৃবৃন্দ।সকল ষড়যন্ত্র মোকাবেলা করে দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত ঐক্যবদ্ধ থাকার প্রত্যয় ব্যক্ত করেন তারা। 

সমাবেশে কর্মচারি দাবি আদায় ঐক্য পরিষদের মুখ্য সমন্বয়ক মো. ওয়ারেছ আলী বলেন, স্বাধীনতার ৫১ বছর পরেও বৈষম্যের বেড়াজাল থেকে বের হতে পারেনি সরকারি কর্মচারীরা।এরমধ্যে নতুন করে আবারও বৈষম্য সৃষ্টি করা হয়েছে। 

তিনি বলেন, আমরা স্বাধীন দেশের নাগরিক। আমাদের মৌলিক অধিকার অন্য বস্ত্র স্বাস্থ্য বাসস্থান শিক্ষা।এই মৌলিক অধিকারের জন্য আমরা ৭ দফা দাবি নিয়ে মাঠে কাজ করছি। আমরা আন্দোলন করছি আমাদের বৈষম্য দূর করার জন্য। কিন্তু আমলা তান্ত্রিক জটিলতার কারণে আমাদের দাবি পূরণ হচ্ছে না। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু কী এজন্যই শোষিতদের পক্ষে কাজ করার জন্য স্বাধীনতা এনে দিয়েছিলেন?

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে আবেদন রেখে তিনি বলেন, আপনি বঙ্গবন্ধুর কন্যা। আপনার কাছে নতুন ভাবে কোন বৈষম্য চাই না। আমরা চাই না স্বাধীনতার ৫১ বছর পরেও সম দক্ষতা এবং সম নিয়োগ প্রক্রিয়া সত্ত্বেও সচিবালয়ের কর্মচারীদের সঙ্গে আমাদের বৈষম্য আরও বৃদ্ধি পাক।

সরকারি কর্মচারীদের মধ্যে কোনো অনৈক্য নেই উল্লেখ করে তিনি বলেন, আমাদের মধ্যে কোনো অনৈক্য নেই। এতোগুলো জাতীয় সংগঠন একসাথে আছে, ইনশাআল্লাহ সকলে ঐক্যবদ্ধ থেকে আমাদের প্রাণের দাবি নবম প্রে-স্কেলসহ ৭ দফা আদায় করেই ঘরে ফিরবো। বক্তব্যে প্রজাতন্ত্রের সকল কর্মচারীকে আগামী ২৭ মে ঢাকায় মহাসমাবেশে অংশগ্রহণের আহ্বান জানান ওয়ারেছ আলী।একইসঙ্গে মহাসমাবেশের আগেই ৭ দফা দাবি নিয়ে সরকারের সঙ্গে আলোচনায় বসার আগ্রহের কথা জানান তিনি। অন্যথায় ঢাকায় মহাসমাবেশ থেকে আরও কঠোর কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে বলেও উল্লেখ করেন এই কর্মচারী নেতা।   

ওয়ারেছ আলীর বক্তব্য শুনতে এখানে ক্লিক করুন

সমাবেশে দাবি আদায় ঐক্য পরিষদের সমন্বয়ক এবং ১১-২০ গ্রেডের সরকারি চাকুরিজীবীদের সম্মিলিত অধিকার আদায় ফোরাম-এর সভাপতি মো. লুৎফর রহমান বলেন, বৈষম্যের বিরুদ্ধে সংগ্রাম করতে গিয়ে বঙ্গবন্ধু তার ছাত্রত্ব হারিয়েছিলেন। এখন ক্ষমতায় সেই বঙ্গবন্ধুর কন্যা, বঙ্গবন্ধুর কন্যা ক্ষমতায় থাকতে কেন তার কর্মচারীরা মাঠে থাকবেন। কেন এই স্বাধীন বাংলায় বেতন বৈষম্য থাকবে। 

তিনি বলেন, প্রজাতন্ত্রের অফিস সহকারীরাও এখন উচ্চ শিক্ষিত। আমাদের সাথে প্রতারণা করার দিন আর নেই। সেই দিন শেষ হয়ে গেছে। এখন আপনারা যেটা করবেন ভেবেচিন্তে করবেন। ফাঁকি দেওয়ার দিন শেষ, প্রতারণার দিন শেষ। আমরা এই বৈষম্য আর মানবো না। আমরা আজ ঐক্যবদ্ধ হয়েছি, প্রজাতন্ত্রের কর্মচারীরা আজ ঐক্যবদ্ধ, আমাদের জীবন দিয়ে হলেও ৭ দফা দাবি বাস্তবায়ন করে ঘরে ফিরব ইনশাআল্লাহ। 

তিনি বলেন, একই বাংলাদেশ, এক প্রধানমন্ত্রী, এক রাষ্ট্রপতি, একই আইন। সবাই বলে আইন সবার জন্য সমান, আসলেই কী সমান।যদি হয় তাহলে সচিবালয় এবং সাচিবালয়ের বাহিরে কেন এই বৈষম্য।

তিনি আরও বলেন, বর্তমান বেতন-ভাতা দিয়ে ১১-২০ গ্রেডের কোনো কর্মচারী ১৫ দিনের বেশি চলতে পারে না। প্রতিটি কর্মচারী ঋণে জর্জড়িত, অতি কষ্টে দিন অতিবাহিত করছে। আমি মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে বলবো, এই কর্মচারীরা বঙ্গবন্ধুর সৈনিক। বঙ্গবন্ধুর সৈনিকেরা জানেন, কীভাবে দাবি আদায় করতে হয়। আমরা প্রধানমন্ত্রীর কাছে দাবি জানাচ্ছি, কোনো আন্দোলন করতে চাই না, আপনাকে বিনয়ের সাথে বলব, আপনি মানবতার মা, আপনি জাতির বিবেক, আপনার পক্ষেই সম্ভব এই কর্মচারীদের কষ্ট দূর করা, তাদের ৭ দফা বাস্তবায়ন করা। আপনি আমলাদের কথায় কান না দিয়ে এই কর্মচারীদের মনে ব্যথা বোঝার চেষ্টা করুন। আমরা অতিতে আপনার সাথে ছিলাম, এখনও আছি ভবিষ্যতেও থাকবো।কিন্তু কর্মচারীদের পেটে যদি ভাত না থাকে তাহলে আপনাকে কীভাবে সহযোগীতা করবো?

কর্মচারীরা ঐক্যবদ্ধ আছে উল্লেখ করে লুৎফর রহমান বলেন, আমাদের মুখ্য সমন্বয়ক ওয়ারেছ আলীর নেতৃত্বে আমরা ঐববদ্ধ আছি, অতিতেও ছিলাম এখনও আছি। কোনো ষড়যন্ত্রকারী আমাদেরকে বিচ্ছিন্ন করতে পারবে না। মুখ্য সমন্বয়ককে বলবো, কোনো ষড়যন্ত্রে কান দেবেন না, কারো কথায় কান দেবেন না। কর্মচারীদের কথা শুনুন। আমরা আপনার হাতকে আরও শক্তিশালী করবো। শান্তিপূর্ণভাবে আলাপ আলোচনার মাধ্যমে ৭ দফা দাবি আদায় করেই ঘরে ফিরবো। 

লুৎফর রহমানের বক্তব্য শুনতে এখানে ক্লিক করুন

‘বাংলাদেশ সরকারি কর্মচারী দাবি আদায়ে ঐক্য পরিষদ’-এর ৭ দফা দাবিসমূহ:

১। পে-কমিশন গঠন পূর্বক ৯ম পে স্কেল বাস্তবায়ন করতে হবে। পে-স্কেল বাস্তবায়নের পূর্বে অন্তর্বতীকালীন কর্মচারীদের জন্য ৫০% মহার্ঘ্য ভাতা প্রদান করতে হবে।

২। ১৯৭৩ সালে বঙ্গবন্ধুর ঘোষণা অনুযায়ী ১০ ধাপে বেতন স্কেল নির্ধারণসহ পে-কমিশনে কর্মচারী প্রতিনিধি রাখাতে হবে।

৩। সচিবালয়ের ন্যায় সকল দপ্তর, অধিদপ্তরের পদ পদবী পরিবর্তনসহ এক ও অভিন্ন নিয়োগবিধি প্রনয়ণ করতে হবে।

৪। টাইম স্কেল সিলেকশন গ্রেড পূণর্বহাল সহ বেতন জ্যেষ্ঠতা পূনঃবহল, বিদ্যমান গ্রাচুইটি/আনুতোষিকের হার ৯০% এর স্থলে ১০০% নির্ধারণ ও পেনশন গ্রাচুইটি ১ টাকার সমান ৫০০ টাকা নির্ধারণ করতে হবে।

৫। সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকদের আপীল বিভাগের রায় বাস্তবায়নসহ সহকারী শিক্ষকদের বেতন নিয়োগ বিধি-২০১৯ এর ভিত্তিতে ১০ম গ্রেডে উন্নীতকরণ।

৬। আউট সোর্সিং পদ্ধতি বাতিল পূর্বক উক্ত পদ্ধতিতে নিয়োগকৃত ও উন্নয়ন খাতের কর্মচারীদের রাজস্বখাতে স্থানান্তর করতে হবে। ব্লক পোষ্টে কর্মরত কর্মচারীসহ সকল পদে কর্মরতদের পদোন্নতি বা ৫ বছর পর পর উচ্চতর গ্রেড প্রদান করতে হবে।

৭। বাজারমূল্যের উর্দ্ধগতি ও জীবন যাত্রার ব্যয় বৃদ্ধির সাথে সমন্বয় পূর্বক সকল ভাতাদি
পুনঃনির্ধারণ করতে হবে। চাকুরীতে প্রবেশের বয়সসীমা ৩৫ বছর ও অবসরের বয়স সীমা ৬২ বছর নির্ধারণ করতে হবে। 

সোনালীনিউজ/দন্তস্য

Wordbridge School
Link copied!