• ঢাকা
  • বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল, ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

মন্ত্রীর ফটোসেশন শেষে ফিরিয়ে নেওয়া হয় ত্রাণ


সিলেট প্রতিনিধি মে ২২, ২০২২, ০৩:৩১ পিএম
মন্ত্রীর ফটোসেশন শেষে ফিরিয়ে নেওয়া হয় ত্রাণ

সিলেট : ত্রাণের জন্য লাইনে দাঁড়িয়ে ছবি তুললেন মন্ত্রীর সঙ্গে। কিন্তু মন্ত্রী চলে যাওয়ার পরই প্যাকেট নিয়ে নিলেন আয়োজকরা। অবশেষে শূন্য হাতে বাড়ি ফিরতে হয় কোম্পানীগঞ্জের মাহফুজকে।

শনিবার (২১ মে) সিলেটের কোম্পানীগঞ্জে এ ঘটনা ঘটে।

গত সোমবার থেকে পরিবারসহ পানিবন্দি তিনি। ছিল খাবার পানির সংকটও। শনিবার মন্ত্রী আসছেন কোম্পানীগঞ্জে-এমন সংবাদে কিছুটা ভরসা পায় মাহফুজের পরিবার। আশায় বুক বেঁধে অবশেষে শনিবার ত্রাণের আশায় তিনি ছুটে আসেন কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা সদরের সিএনজি স্টেশন পয়েন্টে। সকাল ১০টায় এ জায়গা থেকেই ৬টি ইউনিয়নের বন্যাদুর্গত ২০০ পরিবারের মাঝে ত্রাণ বিতরণ করেন স্থানীয় সংসদ সদস্য ও প্রবাসী কল্যাণমন্ত্রী ইমরান আহমদ। এ ত্রাণ বিতরণ কার্যক্রমের আয়োজন করে কোম্পানিগঞ্জ উপজেলা প্রশাসন।

আয়োজকদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, মন্ত্রীর হাত দিয়ে বিতরণের জন্য ত্রাণের ২০০টি প্যাকেট তৈরি করা হয়। সরকারি হিসাবে এই উপজেলার আশপাশের ৬টি ইউনিয়নে প্রায় ৫৬ হাজার মানুষ বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন।

ত্রাণ বিতরণের শুরুতে ফটোসেশনের জন্য ১২ জনকে বেছে নেওয়া হয়। তাদের হাতে মন্ত্রী ত্রাণের প্যাকেট তুলে দেন। মাহফুজ মিয়া নামের একজন জানান, ওই ১২ জনের মধ্যে তিনিও ছিলেন।

তার সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ১০ কেজি চাল ও আনুষঙ্গিক কিছু জিনিসসহ প্যাকেটটি যখন মন্ত্রী তার হাতে তুলে দেন তখন পরিবারের খাবার যোগানোর দুশ্চিন্তা থেকে কিছুটা হলেও মুক্তি পান মাহফুজ। কিন্তু তা বেশি সময় স্থায়ী হয়নি। আয়োজকরা তার হাত থেকে প্যাকেটটি নিয়ে নেন এবং বলেন, যখন সবাইকে দেওয়া হবে তখন মাহফুজ মিয়াকেও ত্রাণ দেওয়া হবে।

ফটোসেশন ও বক্তৃতা পর্বের পর মন্ত্রী চলে যেতেই, ২০০ প্যাকেট ত্রাণের জন্য উপস্থিত লোকজনের মধ্যে কাড়াকাড়ি শুরু হয়। গায়ের জোরে যারা পেরেছেন তারা প্যাকেটগুলো কেড়ে নেন। তবে, নিজের প্যাকেটটি আর পাননি মাহফুজ। অব্যবস্থাপনা সামাল দিতে পুলিশ এক পর্যায়ে বন্যা দুর্গতদের ওপর লাঠিচার্জ করে বলেও অভিযোগ পাওয়া যায়।

তবে বন্যার্তদের দেওয়া ত্রাণ ফিরিয়ে নেওয়ার দাবি অস্বীকার করেছেন কোম্পানিগঞ্জ উপজেলার ইউএনও লুসিকান্ত হাজং। মাহফুজ মিয়ার অভিযোগ সঠিক নয় দাবি করে তিনি বলেন, মন্ত্রীর দেওয়া ত্রাণ কারও কাছ থেকেই ফিরিয়ে নেওয়া হয়নি। ত্রাণ প্রাপ্তদের তালিকার মধ্যে মাহফুজ মিয়া নামের কেউ ছিলেন না। হতে পারে যে তিনি ত্রাণ নিতে এসেছিলেন, কিন্তু না পেয়ে, উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে এই অভিযোগ করেছেন।

মাহফুজ বলেন, সবার আগে আমার ত্রাণ পাওয়ার কথা, পেলামও। কিন্তু আবার নিয়ে নিলো। শেষ পর্যন্ত আর ত্রাণ পেলাম না। পাওয়ার মধ্যে পেলাম পুলিশের লাঠির আঘাত। হুড়োহুড়ির মধ্যে মাহফুজের হাত থেকে ছাতাটাও কেউ নিয়ে যায়। মাহফুজ বলেন, ত্রাণ তো পেলামই না, উল্টো লুটের শিকার হলাম। গণমাধ্যমে ছবি দেখে মানুষ হয়তো জানবে মাহফুজ ত্রাণ পেয়েছেন। কিন্তু, তিনি ঘরে ফিরবেন খালি হাতে।

এ ব্যাপারে প্রবাসী কল্যাণমন্ত্রী ইমরান আহমদ বলেন, আমরা যতই ত্রাণ দেই না কেন, তারপরও কিন্তু কম পড়বে। আমরা কোনো ইউনিয়নে ১০০ মণ চাল দিলে ১০০ জন পাবে, যদি ২০০ জন চলে আসে, তাহলে অর্ধেক করে সেটা দেয়া যায়, যদি খোলা চাল ও গম থাকে। কিন্তু প্যাকেট করা খাবার তো ভাগ করা যায় না। তাই যারা আগে থেকে তালিকাভুক্ত হয়েছে তাদেরকে দেওয়া হয়েছে।

তিনি বলেন, কেউ যদি নির্দ্দিষ্টভাবে দেখাতে পারে যে তালিকায় অনিয়ম হয়েছে, আমি কঠিন ব্যবস্থা নেব। আগে এরকম হয়েছে, কিন্তু এখন এই অপবাদ আমি মাথায় নেবো না। যেহেতু ত্রাণ পায় নাই, তাই গণ্ডগোল করেছে, এটা ফেয়ার গণ্ডগোল না, আনফেয়ার গণ্ডগোল। সূত্র : দ্য ডেইলি স্টার

সোনালীনিউজ/এনএন

Wordbridge School
Link copied!