• ঢাকা
  • শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

ঈদকে সামনে রেখে সীমান্তপথে আসছে গরু


লালমনিরহাট প্রতিনিধি জুলাই ৩, ২০২২, ০৩:৫৯ পিএম
ঈদকে সামনে রেখে সীমান্তপথে আসছে গরু

লালমনিরহাট : ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর (বিএসএফ) নির্যাতন ও গুলি উপেক্ষা করে লালমনিরহাট সীমান্তপথে আসছে ভারতীয় গরু। টার্গেট আসন্ন কোরবানি ঈদ। অর্থের লোভে যুব সমাজের একটি বড় অংশ জড়িয়ে পড়েছে গরু পারাপার কাজে।

এদিকে গরু আনতে গিয়ে বিএসএফ’র গুলিতে নিহত সাতজনের ৬জনেরই লাশ ফেরত পায়নি স্বজনরা।

জানা গেছে, সীমান্তবর্তী এ জেলার মোট ২৮৪ কিলোমিটার সীমান্তপথ। এর মধ্যে ৫৪ কিলোমিটার অংশে কাঁটাতারের বেড়া নেই। সীমান্ত অপরাধ ঠেকাতে বাংলাদেশ বর্ডার গার্ড ব্যাটালিয়ন (বিজিবি) ৩টি ইউনিট ১৫, ৫১ ও ৬১ ব্যাটালিয়ন কাজ করছে। এরপরও নিয়ন্ত্রণে আসছে না সীমান্তপথে গরু ও মাদক পারাপারসহ অন্যান্য চোরাচালান। জেলার পাঁচ উপজেলার সীমান্তপথে গড়ে উঠেছে চোরাচালানের শক্তিশালী সিন্ডিকেট। অর্থের লোভে বিএসএফের হাতে আটক, নির্যাতন ও গুলিতে হত্যা ঘটনার পরেও সীমান্ত অপরাধীরা থামছে না। এদিকে জেলার বিভিন্ন সীমান্ত পথে গত বছরের জানুয়ারী থেকে চলতি বছরের জুন পর্যন্ত দেড় বছরে গরু আনতে গিয়ে বিএসএফ’র গুলিতে মোট ৭ জন নিহত হয়েছেন। আরো ২জন গুলিতে আহত হয়ে দুর্বিসহ জীবনযাপন করছেন। নিহতের সাতজনের মধ্যে একজনের লাশ ফেরত দিয়েছে বিএসএফ। কিন্তু জেলার আদিতমারী সীমান্তপথে একজন ও পাটগ্রাম সীমান্তপথে তিনজন এবং কালীগঞ্জ উপজেলার বুড়িরহাট সীমান্তপথে দুইজন গরু আনতে গিয়ে বিএসএফ’র গুলিতে নিহতের লাশ ফেরত পায়নি স্বজনরা। লাশ ফেরতের দাবীতে মানববন্ধন ও বিক্ষোভসহ নানা কর্মসূচীও পালন করেছে নিহতের পরিবারের স্বজন ও গ্রামবাসীরা।

জানা গেছে, জেলার ৫ উপজেলার বেশ কয়েকটি সীমান্তপথে চরকি দিয়ে ভারতীয় গরু পার হচ্ছে। আর এ কাজের সঙ্গে জড়িত স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, প্রভাবশালী ব্যক্তি ও রাজনৈতিক দলের স্থানীয় নেতারা এবং স্থানীয় থানা ও বিজিবি ক্যাম্পের কতিপয় অসাধু সদস্যরা।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন গরু ব্যবসায়ী জানান, জেলার হাতিবান্ধা উপজেলার দইখাওয়া সীমান্তে গড়ে উঠেছে গরু পারাপারের একটি শক্তিশালী সিন্ডিকেট। ওই সিন্ডিকেট সীমান্তে কাঁটাতারের বেড়ার ওপরে বাঁশের চরকি বেঁধে প্রায় প্রতিদিন ভোর রাতে গরু পারাপার করছে। আর গরুর সাথে পার করছে গাঁজা ও ফেন্সিডিলের বড় বড় চালান। অভিযোগ উঠেছে, দইখাওয়া সীমান্তের বিজিবি ক্যাম্পের অসাধু সদস্যদের সহযোগিতায় দীর্ঘদিন থেকে ওই সিন্ডিকেট সীমান্তে এসব চোরাকারবারি করে আসছে। প্রতি রাতে গরু পারাপারের ফলে সীমান্ত এলাকার ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হচ্ছে। তবে চোরাকারবারিরা এতোটাই প্রভাবশালী যে তাদের ভয়ে ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকরা মুখ খুলতে চান না।

এদিকে গরু পাচারের নিরাপদ রুট খ্যাত জেলার পাটগ্রাম উপজেলার দহগ্রাম ইউনিয়নে স্থানীয় রাজনৈতিক দলের নেতা, ইউপি চেয়ারম্যান, কাউন্সিলর ও স্থানীয় প্রশাসন মিলে তৈরী করেছে একটি চোরাচালান সিন্ডিকেট। ওই সিন্ডিকেট দীর্ঘদিন থেকে চোরাই পথে আসা গরুর ¯িøপ বানিজ্য ও সীমান্তে চোরাচালান বাণিজ্য করে আসছে। দহগ্রাম সীমান্ত দিয়ে ভারত থেকে ওই সিন্ডিকেটের সদস্যরা বছরের পর বছর গরু পাচার করে হয়েছেন কোটিপতি। ওই সিন্ডিকেটের সদস্যদের রয়েছে ভারত-বাংলাদেশ দুই দেশেরই ভোটার এনআইডি কার্ড। আসন্ন কোরবানি ঈদকে টার্গেট করে আরো বেপরোয়া হয়ে উঠেছে ওই সিন্ডিকেট।

তবে মাঝে মধ্যে সীমান্ত এলাকাগুলোতে বিজিবি অভিযান পরিচালনা করে করিডরবিহীন ভারতীয় গরু আটক করে নিলামে বিক্রি করে থাকেন। তখন রুট পরিবর্তন করে আবারও চরকি দিয়ে গরু পার অব্যহত রাখে চোরাচালানকারীরা।

অনুসন্ধানে জানা যায়, সীমান্তের অন্তত ১১টিরও বেশি পয়েন্ট দিয়ে প্রতিরাতে গরু পারাপার করে শতাধিক চোরাকারবারি সিন্ডিকেট। আর গরুর সাথে সীমান্ত পেড়িয়ে দেশে আসে মাদকের বড় বড় চালান। স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, প্রভাবশালী ব্যক্তি ও রাজনৈতিক নেতার মদদে বিজিবির কতিপয় অসাধু সদস্যদের ম্যানেজ করে এক শ্রেনীর ব্যক্তিদের মাধ্যমে চোরাকারবারিরা শক্তিশালী সিন্ডিকেট তৈরী করেছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সীমান্তের বাসিন্দারা জানান, কালীগঞ্জ উপজেলার চন্দ্রপুর ইউনিয়নের খামারভাতী গ্রামের বাসিন্দা বিএসএফের গুলিতে নিহত জয়নালের ছেলে আনারুল ও মৃত তছলিম উদ্দিনের ছেলে আলো মেম্বারের নেতৃত্বে সীমান্তপথে প্রতি রাতে গরু ও মাদক পারাপার হচ্ছে। আর এসব গরু স্থানীয় দইখাওয়া, চাপারহাট ও দুরাকুটি হাটে প্রকাশ্যে বিক্রি হচ্ছে। গরুর করিডোর না হওয়ায় সরকার রাজস্ব আয় থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। অভিযোগ উঠেছে, সিন্ডিকেটের কাছ থেকে মাসোহারা নিয়ে থাকেন স্থানীয় থানা পুলিশ এবং বিজিবির স্থানীয় বিওপি ক্যাম্পের ক্যাম্প কমান্ডার। যদিও স্থানীয় থানার অফিসার ইনচার্জ ও বিজিবি’র স্থানীয় বিওপি ক্যাম্পের ক্যাম্প কমান্ডার চোরাকারবারিদের কাছ থেকে মাসোয়ারা নেওয়ার বিষয়টি অস্বীকার করেছেন।

এ বিষয়ে লালমনিরহাট ১৫ ব্যাটলিয়নের অধিনায়ক লে. কর্নেল এস এম তৌহিদুল আলম জানান, সীমান্ত অপরাধ নিয়ন্ত্রণে বিজিবি’র কঠোর নজরদারী ও জোর তৎপরতা রয়েছে। জনসচেতনতা বৃদ্ধি করে সমন্বিতভাবে কাজ করলে চোরাচালান অপরাধ কমে আসবে। আর এজন্য তিনি জনপ্রতিনিধি, সুশীল সমাজ ও স্থানীয় সচেতন ব্যক্তিদের এগিয়ে আসারও আহ্বান জানিয়েছেন।

সোনালীনিউজ/এমটিআই

Wordbridge School
Link copied!