• ঢাকা
  • শনিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

নৌকার বিদ্রোহী প্রার্থী হলেন আ.লীগের সভাপতি!


নিজস্ব প্রতিবেদক  নভেম্বর ২৪, ২০২২, ০৭:০৯ পিএম
নৌকার বিদ্রোহী প্রার্থী হলেন আ.লীগের সভাপতি!

গোলাম সরোয়ার ফোরকান

ঢাকা: দীর্ঘ নয় বছর পর বরগুনা আমতলী উপজেলা আওয়ামী লীগের কমিটি গঠিত হয়েছে। এতে সভাপতি করা হয়েছে গত উপজেলা নির্বাচনে নৌকার বিপক্ষে নির্বাচন করা স্বতন্ত্র প্রার্থী গোলাম সরোয়ার ফোরকানকে। সাধারণ সম্পাদক করা হয়েছে জি এম ওসমানী হাসানকে। 

কমিটিকে ঘিরে স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা ক্ষোভে ফুসে উঠেছে। তারা বলছেন, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের গঠনতন্ত্রের ৪৭ অনুচ্ছেদ এর ১১ ধারায় কথা। সেখানে বলা হয়েছে, “জাতীয় বা স্থানীয় সরকার নির্বাচনে কেহ দলীয় প্রার্থীর বিরুদ্ধে প্রার্থী হইলে দল হইতে সরাসরি বহিষ্কার হইবেন এবং যারা দলীয় প্রার্থীর বিরোধিতা করবেন তাহারা তদন্ত সাপেক্ষে মূল দল বা সহযোগী সংগঠন থেকে বহিষ্কার হইবেন।”

তাহলে সভাপতি হিসেবে যাকে নির্বাচিত করা হয়েছে সে কি বহিষ্কার নাকি পুরস্কার পেল? প্রশ্ন নেতাকর্মীদের। 

নাম প্রকাশ না করার শর্তে স্থানীয় এক নেতা বলেন, ‘ফোরকান সাহেব গত উপজেলা নির্বাচনে আওয়ামী লীগের সভানেত্রী শেখ হাসিনা স্বাক্ষরিত নৌকার প্রার্থী প্রয়াত জি এম দেলোয়ার হোসেনের বিরুদ্ধে নির্বাচন করে উপজেলা চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছিলেন। যদি গঠনতন্ত্রের এই ধারা উপেক্ষা করে আমতলী উপজেলা আওয়ামী লীগের কমিটির সভাপতি হিসেবে তাকে ঘোষণা করা হয় তবে সেটা নিশ্চয়ই দলীয় সংবিধান পরিপন্থি।’

এ ছাড়া দল থেকে বহিষ্কার হওয়া কেউ বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার হওয়ার আগ পর্যন্ত কোনো পদে আসতে পারবেন না এবং যাদের শোকজ করা হয়েছে, তাদের উত্তর সন্তোষজনক না হলে তাদের বেলায়ও একই নিয়ম প্রযোজ্য বলে জানিয়েছেন আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতারা।   

সম্প্রতি আওয়ামী লীগ সভাপতির ধানমণ্ডিস্থ রাজনৈতিক কার্যালয়ে এক বৈঠকে কেন্দ্রীয় নেতাকর্মীরা বলেছিলেন, যারা দলের নির্দেশনা মানে না, তাদের বিষয়ে তো আমাদের আগে থেকেই নির্দেশনা আছে। যারা বহিষ্কার হয়েছে, সাময়িক বহিষ্কার হয়েছে, শোকজ হয়েছে, তাদেরটা নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত তাদের নেতৃত্বে আনা যাবে না। এ বিষয়গুলোকে সামনে রেখে দলকে গণমুখী করা, আগামী নির্বাচনকে সামনে রেখে দলকে ঢেলে সাজানো, যাতে দলের নতুন নেতৃত্বের ওপর জনগণের প্রত্যাশারা জায়গাটা আরো শক্তিশালী হয়, সুদৃঢ় হয়। এ লক্ষ্যে দলকে সম্মেলন করতে হবে।

বৈঠকে কেন্দ্রীয় নেতারা আরও বলেন, যাদেরকে শোকজ করা হয়েছে তাদেরকে নেতৃত্বে আনার সুযোগ নেই। কোনো গুরুত্বপূর্ণ জায়গাতেই তারা আসতে পারে না। প্রেসিডেন্ট-সেক্রেটারি হতে পারে না। যাদের বহিষ্কার করা হয়েছে তাদের জায়গা দেওয়ার সুযোগ আছে; কিন্তু সেটা বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার হওয়ার পর। এর আগে তাদেরকে কোনো জায়গায় আনা যাবে না। যাদেরকে শোকজ করা হয়েছে, তাদের নিষ্পত্তি হওয়ার পর তারা পদে আসতে পারে।  

এ ব্যাপারে বরগুনা জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আলহাজ্ব মো. জাহাঙ্গীর কবির সোনালীনিউজকে বলেন, ‘আমতলী উপজেলা আওয়ামী লীগের কমিটি সম্পর্কে এখন পর্যন্ত কোনো লিখিত প্রেস বিজ্ঞপ্তি আমরা পাইনি। যারা এটা নিয়ে বাড়াবাড়ি করছে তারা মৌখিক ভাবে শুনে করছে। প্রেস বিজ্ঞপ্তি হাতে পেলে আমরা এটা নিয়ে মন্তব্য করবো।’  

তবে এ বিষয়ে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম সোনালীনিউজকে বলেন, আমতলী উপজেলা কমিটি নিয়ে আমরা কাজ করছি। শিঘ্রই এটা প্রেসবিজ্ঞপ্তি আকারে নেতাকর্মীদের কাছে পৌঁছে যাবে। 

উল্লেখ্য গোলাম সরোয়ার ফোরকান গত উপজেলা নির্বাচনে চেয়ারম্যান হিসেবে জয়ী হওয়ার আড়াই বছর পর তার বিরুদ্ধে আদালতে নির্বাচনী হলফনামায় ঋণখেলাপির তথ্য গোপন করার অভিযোগ উঠে। পরে আদালত তাকে চেয়ারম্যান থেকে অব্যাহতি দিয়ে নতুন করে নির্বাচন করার ঘোষণা দেন। 

ঋণখেলাপির মামলা থেকে জানা যায়, ২০১৩ সালে পটুয়াখালীর রূপালী ব্যাংকের শাখা থেকে নিজ নামে ১ বছর মেয়াদে ১৮ লাখ টাকা ঋণ তোলেন ফোরকান। যা সুদে-আসলে ২৪ লাখ টাকায় দাঁড়ায়। এছাড়াও নিজের মালিকানাধীন বনানী ট্রেডার্স’র নামেও ১ বছর মেয়াদে ঋণ তোলেন গোলাম সরোয়ার ফোরকান। যা সুদে-আসলে দাঁড়ায় ২৭ লাখে।

যথাসময়ে এই ঋণ পরিশোধ না করায় ২০১৪ সাল থেকেই বাংলাদেশ ব্যাংকের ঋণ খেলাপির তালিকায় নাম ওঠে গোলাম সরোয়ার ফোরকানের।

সোনালীনিউজ/এম


 

Wordbridge School
Link copied!