• ঢাকা
  • বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল, ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

তিস্তার পানিপ্রবাহ স্বাভাবিক রাখতে জেলা প্রশাসককে নির্দেশ


নিজস্ব প্রতিবেদক ডিসেম্বর ৩, ২০২২, ০৩:১৯ পিএম
তিস্তার পানিপ্রবাহ স্বাভাবিক রাখতে জেলা প্রশাসককে নির্দেশ

ঢাকা: তিস্তা নদীর ভাঙ্গনে বসতভিটা, মসজিদ-মন্দির, স্কুল, ক্লিনিকসহ বিভিন্ন স্থাপনা নদী গর্ভে বিলীন হচ্ছে। এতে দিশেহারা হয়ে পড়েছে চরাঞ্চলের পরিবারগুলো। প্রতিবছর নদী বালু দিয়ে ভরাট হওয়ার কারণে নদীর গতিপথ পাল্টে নতুন নতুন এলাকা ভাঙ্গনের মুখে পড়ছে। তিস্তা ব্যারেজ ও নদীর দু‘পাড় ভাঙ্গনের কবল থেকে সুরক্ষার বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে নদীর পানি প্রবাহের জন্য চ্যানেল তৈরী, জমাকৃত বালুর পরিমাপ ও উত্তোলনের জন্য উপযুক্ত স্থান সমূহ ব্লকভিত্তিক নির্ধারণ করে বালুমহল ঘোষণার কার্যকর উদ্যেগ নিতে লালমনিরহাট জেলা প্রশাসককে নির্দেশ দিয়েছে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ। 

সম্প্রতি মন্ত্রিপরিষদের উপসচিব মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম ভূইয়া স্বাক্ষরিত চিঠিতে এই নির্দেশনা দেওয়া হয়।

চিঠিতে বলা হয়, মন্ত্রিপরিষদ সচিব লালমনিরহাট জেলার হাতীবান্ধা উপজেলায় অবস্থিত তিস্তা ব্যারেজ ও তৎসংলগ্ন এলাকা পরিদর্শন করেন। পরিদর্শনকালে তিস্তা নদীর ভাঙ্গনরোধ, পানি প্রবাহ স্বাভাবিক রাখা এবং জমাকৃত বালি/পলি অপসারণের বিষয়ে স্থানীয় সংসদ সদস্য এবং পানি উন্নয়ন বোর্ড ও স্থানীয় কর্মকর্তাগণের সঙ্গে মতবিনিময় করেন।

পরিদর্শনে দেখা যায়, তিস্তা নদীর বিস্তীর্ণ এলাকায় পলি পড়ে নদীর স্বাভাবিক গতিপথ বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। বর্ষা মৌসুমে অতিবর্ষণ ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ী ঢলে নদীর দু'কূলের বিশাল এলাকা ভাঙ্গনসহ প্লাবিত হয়। অধিবাসীগণ প্রায়শই বিভিন্ন প্রাকৃতিক দুর্যোগের শিকার হয়ে দুর্ভোগের কবলে পতিত হয়। উক্ত ভাঙ্গনরোধে তিস্তা ব্যারেজের ভাটির জমে উঠা বিশাল চর সার্ভে করাসহ নদীতে চ্যানেল তৈরি করে পানি প্রবাহ স্বাভাবিক রাখা প্রয়োজন। 

তিস্তা ব্যারেজ ও নদীর দু'পাড় ভাঙ্গনের কবল হতে সুরক্ষার বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে পানি উন্নয়ন বোর্ডের প্রকৌশলগত সহায়তা গ্রহণ করে নদীতে পানি প্রবাহের জন্য চ্যানেল তৈরি, জমাকৃত বালু পরিমাপ ও উত্তোলনের জন্য উপযুক্ত স্থানসমূহ ব্লকভিত্তিক নির্ধারণ করে বালু মহাল ঘোষণার কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ করা প্রয়োজন। এমতাবস্থায়, উল্লিখিত বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য নির্দেশক্রমে অনুরোধ করা হলো।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ভারতের সিকিম ও পশ্চিমবঙ্গের ওপর দিয়ে প্রবাহিত হওয়ার পর লালমনিরহাটের পাটগ্রাম উপজেলার দহগ্রাম দিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করে তিস্তা নদী। যা লালমনিরহাট, নীলফামারী, রংপুর ও গাইবান্ধা জেলার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়ে কুড়িগ্রাম জেলার চিলমারী বন্দর হয়ে ব্রহ্মপুত্র নদের সঙ্গে মিশে যায়। দৈর্ঘ্য প্রায় ৩১৫ কিলোমিটার হলেও বাংলাদেশ অংশে রয়েছে প্রায় ১২৫ কিলোমিটার।   

ভারতের গজলডোবায় বাঁধ নির্মাণের মাধ্যমে ভারত সরকার এক তরফা তিস্তার পানি নিয়ন্ত্রণ করায় শীতের আগেই বাংলাদেশ অংশে তিস্তা মরুভূমিতে পরিণত হয়। বর্ষা মৌসুমে অতিরিক্ত পানি প্রবাহের ফলে বাংলাদেশ অংশে ভয়াবহ বন্যার সৃষ্টি হয়। বন্যায় সব থেকে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয় তিস্তার বাম তীরের জেলা লালমনিরহাট।

তিস্তা নদী জন্মলগ্ন থেকে খনন না করায় পলি পড়ে ভরাট হয়েছে নদীর তলদেশ। ফলে পানি প্রবাহের পথ না পেয়ে বর্ষাকালে উজানের ঢেউয়ে লালমনিরহাটসহ ৫টি জেলায় ভয়াবহ বন্যার সৃষ্টি হয়। এ সময় নদী ভাঙনও বেড়ে যায় কয়েকগুণ। প্রতি বছরই নদী পরিবর্তন করছে তার গতিপথ। ফলে লালমনিরহাটে বিস্তীর্ণ জমি বালুময় চরাঞ্চলে পরিণত হচ্ছে। বর্ষায় ভয়াবহ বন্যার ধকল কাটিয়ে উঠতে না উঠতেই ভাঙন আতঙ্কে পড়ে তিস্তাপাড়ের বাসিন্দারা।

সোনালীনিউজ/এসআই/আইএ

Wordbridge School
Link copied!