• ঢাকা
  • শনিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

‘ও আল্লাহ, আঁই খুন করি ন, অন্যায় করি ন’


নোয়াখালী প্রতিনিধি জানুয়ারি ২৪, ২০২৩, ০৬:১৬ পিএম
‘ও আল্লাহ, আঁই খুন করি ন, অন্যায় করি ন’

ছবি : সংগৃহীত

নোয়াখালী : ‘আমি খুন করি ন (নাই)। আমি অন্যায় করি ন। ও আল্লাহ, আঁই (আমি) অন্যায় করি ন।  ও আল্লাহ, আল্লাহ গো, আমি কিছু করি ন। আমার মা-বাপ কেউ ন।’ এভাবেই এজলাসের সামনে চিৎকার করে এসব কথা বলছিলেন মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি মো. ইসমাইল। 

মঙ্গলবার (২৪ জানুয়ারি) দুপুরে দুপুরে আসামিদের উপস্থিতিতে জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বিচারক নিলুফার সুলতানার দেওয়া আদেশের পর এজলাসের সামনে চিৎকার করেন। মো. ইসমাইল হলেন বৃদ্ধা নুর জাহান বেগম (৫৭) হত্যা মামলায় মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি। তিনি সুবর্ণচর উপজেলার জাহাজমারা ইউনিয়নের জাহাজমারা গ্রামের মৃত মমিন উল্যাহর ছেলে। 

পাশে দাঁড়িয়ে থাকা ইসমাইলের ভাই ইমরান বলেন, রায় শোনার সঙ্গে সঙ্গে আমার ভাই কান্নায় ভেঙে পড়েন। তিনি এজলাসের সামনে বসে পড়েন। আমি দূর থেকে ভাইকে বলেছি- আমি আছি। আমাদের বাবা-মা কেউ নেই। দেখি কি করা যায়।

সম্পত্তি নিয়ে দ্বন্দ্বের জেরে মাকে পাঁচ টুকরো করে হত্যার ঘটনায় ছেলে হুমায়ুন কবির হুমুসহ (২৭) সাত আসামিকে মৃত্যুদণ্ড দেন আদালত। মঙ্গলবার দুপুরে আসামিদের উপস্থিতিতে জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বিচারক নিলুফার সুলতানা এ আদেশ দেন। একইসঙ্গে প্রত্যেককে পাঁচ হাজার টাকা করে জরিমানা করে।

হুমায়ুন কবির হুমু ছাড়াও মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামিরা হলেন- নিরব (২৬), নুর ইসলাম (৩২), কালাম (৩০), সুমন (৩৩), হামিদ (২৮) ও মো. ইসমাইল (৩০)।

মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা সুবর্ণচর থানা পুলিশের পরিদর্শক ইব্রাহীম খলিল বলেন, আমরা তদন্তে ইসমাইলের সম্পৃক্ততা পেয়েছি। ইসমাইল সর্বপ্রথম বৃদ্ধার হাতের ব্যাগ ও শাক নিয়ে বাড়িতে আসেন এবং সেগুলো তার স্ত্রীর হাতে দেয়। 

আদালত সূত্রে জানা যায়, নুর জাহানের প্রথম সংসারের ছেলে বেলাল হোসেন ২০১৮ সালে মারা গেলে তার রেখে যাওয়া বিভিন্ন বেসরকারি সংস্থা ও ব্যক্তির ঋণের প্রায় ৪ লাখ টাকা পরিশোধ নিয়ে দ্বিতীয় সংসারের ছেলে হুমায়ুন কবিরের সঙ্গে ঝগড়া হয়। এর জেরেই ঠান্ডা মাথায় মাকে হত্যার পরিকল্পনা করেন হুমায়ুন। আর সেই হত্যাকাণ্ডে বন্ধু, প্রতিবেশী ও স্বজনের সহায়তা নেন তিনি। গত ২০২২ সালে ৬ অক্টোবর রাতে নূর জাহানকে প্রথমে বালিশচাপা দিয়ে হত্যা করা হয়। পরে মরদেহ পাঁচ টুকরা করে প্রতিবেশী পাওনাদারদের ধানখেতে রেখে আসা হয়।

আদালতের সরকারি কৌঁসুলি (পিপি) গুলজার আহমেদ জুয়েল বলেন, আদালত মামলার বিষয়টি নিয়ে খুব দুঃখ প্রকাশ করেছেন এবং ঘটনাটিকে মর্মস্পর্শী বলে আখ্যা দিয়েছেন।  যে মা সন্তানকে জন্ম দিলেন সেই সন্তান কীভাবে মাকে হত্যা করে। এটি একটি নির্মম হত্যাকাণ্ড। এটি একটি নজিরবিহীন রায় হয়েছে। সব আসামিকেই মৃত্যুদণ্ড দিয়েছেন বিচারক। এ রায়ে আমরা সন্তুষ্ট। আশা করি উচ্চ আদালতেও এই রায় বহাল থাকবে।

সোনালীনিউজ/এমএএইচ

Wordbridge School
Link copied!