• ঢাকা
  • মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল, ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১
রাসিক নির্বাচন 

সম্পদে এগিয়ে খায়রুজ্জামান লিটন, নগদ টাকায় এগিয়ে মুরশিদ


রাজশাহী ব্যুরো মে ২৯, ২০২৩, ১১:৫৩ এএম
সম্পদে এগিয়ে খায়রুজ্জামান লিটন, নগদ টাকায় এগিয়ে মুরশিদ

রাজশাহী: রাজশাহী সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন আগামী ২১ জুন। ইতিমধ্যে চারজন মেয়র প্রার্থীর প্রার্থীতা বৈধ ঘোষণা করা হয়েছে। তাদের মধ্যে সদ্য সাবেক মেয়র এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন মেয়র পদে চার প্রার্থীর মধ্যে সম্পদে এগিয়ে রয়েছেন। আর বার্ষিক আয়ে এগিয়ে রয়েছেন ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের প্রার্থী মুরশিদ আলম। তবে সম্পদ কিংবা নগদ অর্থে পিছিয়ে রয়েছেন জাতীয় পার্টির প্রার্থী সাইফুল ইসলাম স্বপন ও জাকের পার্টির প্রার্থী লতিফ আনোয়ার।

আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা ও রাসিক নির্বাচনের রিটার্নিং কর্মকর্তা দেলোয়ার হোসেন ইতোমধ্যে তাদের মনোনয়নপত্র বৈধ করেছেন। ফলে ভোটের মাঠে থাকছেন চার মেয়রপ্রার্থীই। রাসিক নির্বাচন উপলক্ষে মেয়র প্রার্থীদের জমা দেওয়া হলফনামা থেকে এসব তথ্য জানা গেছে।

হলফনামায় দেখা গেছে, আওয়ামী লীগ মনোনীত মেয়র প্রার্থী এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন বিএ অনার্স ও এলএলবি পাস। হলফনামায় পেশা হিসেবে উল্লেখ করেছেন আইনজীবী ও রাজশাহী অ্যাডভোকেট বার অ্যাসোসিয়েশনের সদস্য। তার বার্ষিক আয় দুই কোটি ৯৮ লাখ ১০ হাজার টাকা। তবে আইন পেশা থেকে কোনো আয় নেই তার। ১৯৯৬ সালের দুটি মামলা থাকলেও রাষ্ট্র কর্তৃক সেগুলো প্রত্যাহার করা হয়েছে। তার নামে বর্তমানে কোনো মামলা চলমান নেই।

তথ্যমতে, বছরে কৃষি খাত থেকে দুই লাখ ৩০ হাজার টাকা আয় লিটনের। এছাড়া বছরে বাড়ি, অ্যাপার্টমেন্ট বা দোকান ভাড়া বাবদ আয় ৩৭ লাখ ৭০ হাজার টাকা, মৎস্য চাষ বাবদ আয় দুই কোটি ৪২ লাখ টাকা। আর মেয়র হিসেবে সম্মানী ভাতা থেকে আয় ১৬ লাখ ১০ হাজার টাকা। তার স্ত্রী শাহীন আকতার রেনীর ব্যবসায় বাৎসরিক আয় এক কোটি ৬৯ লাখ টাকা ও মৎস্য চাষ থেকে আয় এক কোটি ৪১ লাখ টাকা।

২০১৮ সালের নির্বাচনী হলফনামায় লিটনের আয় ছিল ৭৮ লাখ ৩২ হাজার ২০৮ টাকা। এরমধ্যে কৃষিখাত থেকে এক লাখ ৬০ হাজার, বাড়ি/অ্যাপার্টমেন্ট/দোকান বা অন্যান্য ভাড়া থেকে পাঁচ লাখ ৫২ হাজার ৫০০ টাকা, মাছ চাষ থেকে ২০ লাখ টাকা,ব্যবসা থেকে ১২ লাখ টাকা, শেয়ার/সঞ্চয়পত্র/ব্যাংকে আমানত ২০ লাখ ১০ হাজার টাকা এবং অন্যান্য খাত থেকে বছরে তার আয় ছিল ১৯ লাখ নয় হাজার ৭০৮ টাকা। অর্থ্যাৎ ২০১৮ সালের তুলনায় লিটনের বার্ষিক আয় বেড়েছে ৩ দশমিক ৮০ গুণ।

এছাড়া বর্তমানে আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য লিটনের অস্থাবর সম্পত্তির পরিমাণ চার কোটি ১৭ লাখ ৬২ হাজার ৮৯৯ টাকা। তার হাতে রয়েছে নগদ সাত লাখ দুই হাজার ২৩৭ টাকা, ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে জমা রয়েছে দুই কোটি ৮৪ লাখ ৯১ হাজার ৮০০ টাকা, ৪০ লাখ ৮৫ হাজার টাকার শেয়ার, ৪৬ লাখ ৩০ হাজার টাকা মূল্যের একটি জিপ গাড়ি, ১৫ ভরি স্বর্ণালঙ্কার, ২৫ লাখ টাকার ইলেট্রনিক সামগ্রী, সাত লাখ টাকা মূল্যের আসবাবপত্র এবং ছয় লাখ টাকা দামের একটি শটগান ও একটি পিস্তল।

লিটনের স্ত্রী শাহীন আকতার রেনীর অস্থাবর সম্পত্তি হিসেবে দেখানো হয়েছে- নগদ অর্থ ১৮ লাখ ৪৭ হাজার ১৩০ টাকা, ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে জমা রয়েছে এক কোটি ৭৮ লাখ ৭৬ হাজার ৮৭০ টাকা, ১০ লাখ টাকার শেয়ার, নয় লাখ টাকার স্থায়ী আমানত, উপহার হিসেবে পাওয়া ৫০ ভরি স্বর্ণালঙ্কার, আড়াই লাখ টাকার ইলেট্রনিক সামগ্রী, দুই লাখ ১০ হাজার টাকা মূল্যের আসবাবপত্র রয়েছে। এছাড়াও প্রার্থীর নির্ভরশীলের নামে আড়াই লাখ টাকার স্থায়ী আমানত ও উপহার হিসেবে পাওয়া ২১ ভরি স্বর্ণালঙ্কার রয়েছে।

তবে ২০১৮ সালে লিটনের অস্থাবর সম্পদ ছিল এক কোটি ৭৫ লাখ ১৩ হাজার ৫০৮ টাকার। এর মধ্যে নগদ ৩০ হাজার টাকা, ব্যাংকে এক কোটি ৩৮ লাখ ৫৩ হাজার ৪০৮ টাকা এবং ৩৬ লাখ ৩০ হাজার টাকার একটি জিপ গাড়ি ছিল। এছাড়া উপহার হিসেবে পাওয়া ১৫ ভরি স্বর্ণালঙ্কার ছিল তার। ফলে গত পাঁচ বছরে তার অস্থাবর সম্পদ বেড়েছে ২ দশমিক ৩৮ গুণ।

এখন স্থাবর সম্পদ হিসেবে লিটনের রয়েছে ৪ দশমিক ৬৩ একর কৃষি জমি, নগরীর উপশহরে একটি তিনতলা বাড়ি, ঢাকার বনানীতে পাঁচ কাঠার বিনিময়ে আড়াইটা অ্যাপার্টমেন্ট এবং ৭০ লাখ ১২ হাজার ১৯০ টাকার মাছের খামার। আর তার স্ত্রীর নামে রয়েছে ১ দশমিক ৭৭০৫ একর কৃষি জমি, নগরীর উপশহরে একটি দুইতলা পুরাতন বাড়ি এবং ৭৯ লাখ ৩৫ হাজার টাকার মাছের খামার।

এর আগে ২০১৮ সালে লিটনের কৃষি জমি ছিল ১ দশমিক ৬৩ একর। এখনকার মতো তখনও রাজশাহীতে তিনতলা বাড়ি ও ঢাকায় দুইটি অ্যাপার্টমেন্ট ছিল। পাঁচ বছরে তিন একর জমি ও মাছের খামার হয়েছে খায়রুজ্জামান লিটনের। তবে ২০১৮ সালে লিটনের কোনো ঋণ ছিল না। এখন অবশ্য গাড়ি কিনতে গিয়ে পূবালী ব্যাংকে ২০ লাখ ৭৯ হাজার ৩৭ টাকা ঋণ নিয়েছেন তিনি।


অপরদিকে রাজশাহী সিটি নির্বাচনের প্রার্থীদের মধ্যে হাতে সবচেয়ে বেশি নগদ অর্থ রয়েছে চরমোনাই পীরের হাতে গড়া ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ মনোনীত প্রার্থী মুরশিদ আলমের। হলফনামায় দেখানো তার নগদ টাকার পরিমাণ ১২ লাখ। এছাড়া অস্থাবর সম্পদ হিসেবে একটি মোটরসাইকেল, ১০ ভরি স্বর্ণালঙ্কার, ফ্রিজ, ফ্যান, ল্যাপটপ এবং আসবাবপত্র হিসেবে খাট, শোকেশ ও আলমারি রয়েছে।

তবে কোনোই স্থাবর সম্পত্তি বা ঋণ নেই এই প্রার্থীর। তার স্থায়ী ঠিকানা জানানো হয়েছে লালমনিহাটের আদিতমারি উপজেলার চন্দনপাট গ্রাম। বর্তমান বা আগে কোনো মামলা দায়ের হয়নি মুরশিদের বিরুদ্ধে। কামিল পাস এই প্রার্থীর পেশা হিসেবে বলা হয়েছে টিউশনি ও ধর্মীয় আলোচক। তবে তার বার্ষিক আয় তিন লাখ ৩০ হাজার টাকা উল্লেখ থাকলেও আয়ের খাত সুনির্দিষ্টভাবে হলফনামায় উল্লেখ নেই। 

এদিকে প্রাতিষ্ঠানিক কোন স্বীকৃতি নেই জাতীয় পার্টির প্রার্থীর। কিন্তু তার হলফনামায় শিক্ষাগত যোগ্যতা হিসেবে ‘স্বাক্ষর জ্ঞান সম্পন্ন’ হিসেবে উল্লেখ করেছেন  জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য ও রাসিক নির্বাচনে দলীয় প্রার্থী সাইফুল ইসলাম স্বপন। পেশায় তিনি সিজনাল পণ্য ক্রয়-বিক্রয়কারী। সেই ব্যবসা থেকে তার বার্ষিক আয় হয় তিন লাখ ৬০ হাজার টাকা। এছাড়া তার হাতে আছে নগদ তিন লাখ টাকা, ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে জমা রয়েছে ৫০ হাজার টাকা, ১০ ভরি স্বর্ণালঙ্কার, ৩০ হাজার টাকার ইলেট্রনিক সামগ্রী ও ৫০ হাজার টাকা মূল্যের আসবাবপত্র। তবে সাড়ে চার বিঘা কৃষি জমি ও ১২ শতক অকৃষি জমি থাকলেও ঋণ নেই স্বপনের। ব্যাংকে দুই হাজার টাকা জাকের পার্টির প্রার্থী আনোয়ারের মনোনীত মেয়রপ্রার্থী একেএম আনোয়ার হোসেনের শিক্ষাগত যোগ্যতা এলএলএম পাস। পেশায় আইনজীবী, আর সেখান থেকেই তার বার্ষিক আয় তিন লাখ টাকা। তবে কোনোই স্থাবর সম্পত্তি বা ঋণ নেই এই প্রার্থীর। অস্থাবর সম্পদ হিসেবে হাতে রয়েছে এক লাখ টাকা। আর ব্যাংকে আছে মাত্র দুই হাজার টাকা, ৩০ হাজার টাকার ইলেট্রনিক সামগ্রী ও ২০ হাজার টাকা মূল্যের আসবাবপত্র। তার বিরুদ্ধেও কোনো মামলা নেই।

সোনালীনিউজ/জেএ/এসআই

Wordbridge School
Link copied!