• ঢাকা
  • শুক্রবার, ০৮ ডিসেম্বর, ২০২৩, ২৪ অগ্রহায়ণ ১৪৩০

রাজশাহীতে এমটিএফই’র ফাঁদে নিঃস্ব হাজারো মানুষ


জনাব আলী, রাজশাহী ব্যুরো আগস্ট ২১, ২০২৩, ০৩:০২ পিএম
রাজশাহীতে এমটিএফই’র ফাঁদে নিঃস্ব হাজারো মানুষ

রাজশাহী: ক্রিপ্টো, বৈদেশিক মুদ্রা, পণ্য, এমনকি বিদেশি স্টক পর্যন্ত নিজের ছায়া প্যাট ফরমেট্রেড করার সুযোগ দিয়ে সম্প্রতি সাড়া জাগানো অ্যাপ এমটিএফই’র ফাঁদে পড়ে নিঃস্ব হয়েছে রাজশাহীর হাজারো মানুষ।যাদের মধ্যে অধিকাংশই বেকার যুবক-যুবতী। তারা চাকরি না পেয়ে ধার-দেনা করে কেউবা জমি বন্ধক রেখেও এই অ্যাপে টাকা লগ্নি করেন।এখন অনেকের ঘাড়ে জমেছে উল্টো ঋণের বোঝা। সেই ঋণ কিভাবে তারা শোধ করবেন, সেটি নিয়েও পড়েছেন দুশ্চিন্তায়। 

সব মিলিয়ে রাজশাহী নগরীসহ জেলার ৯টি উপজেলার অন্তত ৫ হাজার মানুষ এ অ্যাপের মাধ্যমে প্রতারিত হয়েছেন বলে একাধিক সূত্র নিশ্চিত করেছে। 

জানা গেছে, এই বিপুল সংখ্যক মানুষের নিকট থেকে কমপক্ষে ২০০ কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে প্রতারক চক্রটি। তবে রাজশাহীর কেউ এর সঙ্গে জড়িত ছিল কিনা এটি কেউ নিশ্চিত করতে পারেনি।

রাজশাহী নগরীর লক্ষীপুর এলাকার বাসিন্দা সেলিম উদ্দিন অভিযোগ করে জানান, কিছুদিন আগে তিনি ধার করে ৬০ হাজার টাকা জমা দিয়েছিলেন এমটিএফই’তে। দুই-তিন বার তিনি টাকাও উত্তোলন করেছেন। সবমিলিয়ে তিনি ১০ হাজার টাকার মতো উত্তোলন করতে পেরেছিলেন। কিন্তু বেশি লাভের আশায় আর টাকা উত্তোলন না করে জমাচ্ছিলেন। আর সেটিই হয়েছে কাল। একপর্যায়ে পুরো অ্যাপসটিই বন্ধ হয়ে যায়। ফলে লাভ তো দূরের কথা নিজের আসল টাকাটিও তুলতে পারেননি তিনি।

সেলিম বলেন, কোনো কাজ-কাম নাই। তাই এক আত্মীয়ের নিকট থেকে ৫০ হাজার টাকা ধার নিয়ে আর নিজের কাছে থাকা ১০ হাজার টাকাসহ সবমিলিয়ে ৬০ হাজার টাকা জমা দিয়েছিলাম এমটিএফইতে। কিছুদিন পরে দেখি ওই অ্যাপসটি আর কাজ করছে না। কাউকে বিষয়টি নিয়ে অভিযোগও করতে পারছি না। আবার গ্রামে গিয়ে শুনি আমার মতো শত শত মানুষ এভাবে প্রতারিত হয়েছে। গ্রামেই বেশি জনপ্রিয় হয়ে উঠেছিল এই অ্যাপসটি। যারা টাকা জমিয়েছিলেন, তাদের অধিকাংশই বেকার যুবক-যুবতি।’

রাফিয়া খাতুন নামের এক শিক্ষার্থী বলেন, ‘অ্যাপের মাধ্যমে মোবাইল ব্যাংকিং বা বাইন্যান্সের মাধ্যমে আমরা টাকা তুলতাম। এক ভাইয়ার মাধ্যমে এই অ্যাপটাতে কাজ করছিলাম। কিন্তু পরবর্তিতে টাকা মার যাবে বুঝতে পেরে আমার টাকা আমি তুলে নিয়েছি। ৬-৭ মাস আগে আমি টাকা দিয়িছিলাম। এখন শুনছি, অনেকের টাকা মার গেছে।’

রাজশাহী নগরীর অলোকার মোড়ের বাসিন্দা আব্দুর রাজ্জাক বলেন, ‘আমি এক লাখ টাকা জমা করে সব টাকা হারিয়েছি। এখন এনজিও’র ঋণ টানতে হচ্ছে। এনজিও থেকে ঋণ নিয়ে ওই টাকা এমটিএইতে জমা করেছিলাম। বেশি লাভ করতে গিয়ে এখন ঘাড়ে ঋণের বোঝা আরও বাড়লো।’

রাজশাহীর পবা এলাকার কলেজছাত্র আসগর হোসেন বলেন, ‘বাপের একটা জমি বন্ধক রেখে দেড় লাখ টাকা জমা দিছুনু। কয়েক দিন কিছু টাকা তুলে বাজার-টাজার করেছি। কিন্তু তার কয়েকদিন পরেই দেখি গোটা অ্যাপসটাই আর নাই। আমার মতো শত শত যুবক এভাবে টাকা দিয়ে বিপাকে পড়েছে।’

এদিকে বাংলাদেশ থেকে প্রায় ১০ হাজার কোটি টাকার মতো হাতিয়ে নিয়ে উল্টো সব হারানো সাধারণ লগ্নিকারীদেরই এখন হুমকি দিচ্ছে এমটিএফই।

একদিনের ব্যবধানে প্রত্যেকের একাউন্ট মাইনাস করে দিয়ে অ্যাপে নোটিফিকেশনের মাধ্যমে এমটিএফই গ্রাহকদের জানায়, এমটিএফই একটি ব্রোকার প্রতিষ্ঠান। গ্রাহকদের বিনিয়োগ করা ডলার দিয়ে ট্রেডিং করতে সহায়তা করে। প্রতিষ্ঠানটি লোকসান করেছে, তাই সবার ব্যালেন্স ঋণাত্মক বা মাইনাসে চলে গেছে। বিনিয়োগকারীদের এর দায়ভার নিতে হবে। তাই প্রত্যেকের অ্যাকাউন্টে নিজ নিজ লোকসানের অংক দেওয়া হয়েছে। ২৪ ঘণ্টার মধ্যে যদি এ পরিমাণ ডলার পরিশোধ করা না হয়, তাহলে বিনিয়োগকারীদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

সোনালীনিউজ/আইএ

Wordbridge School
Link copied!