• ঢাকা
  • বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ, ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০
সন্দেহভাজন নাগরিকদের দেশত্যাগ

নিষেধাজ্ঞার বিরুদ্ধে আপিল করতে চায় দুদক


আদালত প্রতিবেদক এপ্রিল ৯, ২০২১, ০৯:৩৮ পিএম
নিষেধাজ্ঞার বিরুদ্ধে আপিল করতে চায় দুদক

ঢাকা : দেশের কোনো নাগরিকের বিদেশে যেতে দুদকের নিষেধাজ্ঞা অবৈধ বলে হাইকোর্টের দেওয়া রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করার অনুমতি চেয়ে (লিভ টু আপিল) আবেদন করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। 

বৃহস্পতিবার (৮ এপ্রিল) আপিল বিভাগের সংশ্লিষ্ট শাখায় এ আবেদন করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন দুদকের আইনজীবী খুরশীদ আলম খান। আবেদনে হাইকোর্টের রায়ের ওপর স্থগিতাদেশ চাওয়া হয়েছে।

গত ১৬ মার্চ নরসিংদীর আতাউর রহমান ওরফে সুইডেন আতাউর রহমানের বিদেশ যাওয়ার ওপর দুদকের নিষেধাজ্ঞা অবৈধ বলে রায় দেন হাইকোর্ট। তবে ১২ পৃষ্ঠার পূর্ণাঙ্গ রায় গত ৪ এপ্রিল প্রকাশিত হয়। এরপর দুদক আপিল করার অনুমতি চেয়ে (লিভ টু আপিল) আবেদন দাখিল করল। 

নরসিংদীর বাসিন্দা ব্যবসায়ী আতাউর রহমান ওরফে সুইডেন আতাউর রহমানের বিদেশ যাওয়ার ওপর দুদকের দেওয়া নিষেধাজ্ঞা চ্যালেঞ্জ করে দাখিল করা এক রিট মামলায় এ রায় দেন হাইকোর্ট।

হাইকোর্টের রায়ে বলা হয়েছে, আমাদের বলতে দ্বিধা নেই যে, নাগরিকের চলাফেরার সাংবিধানিক অধিকার কোনো ব্যক্তি বা কর্তৃপক্ষের খেয়ালখুশি অনুযায়ী নিয়ন্ত্রণ বা বারিত করা অসাংবিধানিক। 

রায়ে আরো বলা হয়, অনির্দিষ্ট সময়ের জন্য কারো ওপর এ ধরনের বিধিনিষেধ আরোপ সংবিধান ও মানবতাবিরোধী পদক্ষেপ। সুনির্দিষ্ট আইন বা বিধির অনুপস্থিতিতে কোনো তদন্ত সংস্থার দাপ্তরিক আদেশ দিয়ে এ ধরনের পদক্ষেপ বা কার্যধারা গ্রহণ সংবিধান পরিপন্থী। তাই এর সময়সীমা নির্দিষ্ট করাও ন্যায়সঙ্গত হবে।

রায়ে জনগণের স্বাধীন চলাফেরার অধিকারসংবলিত সংবিধানের ৩৬ নম্বর অনুচ্ছেদ উল্লেখ করে বলা হয়, বিধান অনুসারে কোনো নাগরিকের চলাফেরার স্বাধীনতাকে নিয়ন্ত্রণ বা বারিত করতে হলে তা হতে হবে প্রথমত জনস্বার্থে এবং দ্বিতীয়ত সুনির্দিষ্ট আইনের দ্বারা।

এ ধরনের গৃহীত পদক্ষেপ শুধু জনস্বার্থে হলেই চলবে না, তা হতে হবে সুনির্দিষ্ট আইনের দ্বারা; আবার শুধু আইনের দ্বারা  হলেও চলবে না, হতে হবে জনস্বার্থে। কোনো ব্যক্তির চলাফেরা নিয়ন্ত্রণ বা বারিত করতে হলে ‌ওপরোক্ত দুটি  শর্তই পূরণ অপরিহার্য; দুই শর্তের একটি পূরণ হলে অপরটি না হলে তা আইন সঙ্গত হবে না।

রায়ে বলা হয়, সংবিধান ও আইনের প্রতিষ্ঠিত নীতির আলোকে আমাদের অভিমত ব্যক্ত করতে কোনো দ্বিধা নেই যে, কমিশন কর্তৃক আবেদনকারীর বিরুদ্ধে দেশত্যাগে গৃহীত ব্যবস্থা আইনসংগত কর্তৃত্ব ব্যতিরেকে করা হয়েছে এবং এর কোনো আইনি কার্যকারিতা নেই।

জানা যায়, দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) ২০২০ সালের ২৪ আগস্ট আতাউর রহমানের সম্পদের তথ্য চেয়ে নোটিশ দেয়। ওই নোটিশের পর ২২ অক্টোবর তিনি তার সম্পদের তথ্য দুদকে দাখিল করেন। দুদক সম্পদের তথ্য পেয়ে অনুসন্ধানে নামে। 

অনুসন্ধানকালে গতবছরের ২০ ডিসেম্বর আতাউর রহমানের বিদেশে যাওয়ার ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়ে পুলিশের বিশেষ শাখায় (এসবি) চিঠি দেয় দুদক। এ অবস্থায় এই চিঠির বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে রিট আবেদন করেন আতাউর রহমান।

রায়ে আরো বলা হয়, অনুসন্ধান বা তদন্ত পর্যায়ে সন্দেহভাজন বা অভিযুক্ত অনেকে বিভিন্ন অজুহাতে দেশ ত্যাগ করছে এবং পরবর্তীতে তাদের আর আইন-আদালতের সম্মুখীন করা সম্ভব হচ্ছে না। 

এই সকল বাস্তবতাকে আমলে নিয়ে দুর্নীতি বা মানি লন্ডারিং সংক্রান্ত মামলায় কিংবা অন্যান্য মামলার ক্ষেত্রেও অনুসন্ধান বা তদন্ত পর্যায়ে সংশ্লিষ্ট কোনো ব্যক্তিকে দেশত্যাগে বারিত বা তার চলাফেরা নিয়ন্ত্রণ করার জন্য প্রয়োজনীয় আইন বা বিধি প্রণয়ন অপরিহার্য হয়ে পড়েছে, যা সময়ের চাহিদাও বটে।

রায়ে আরো বলা হয়, সামগ্রিক অবস্থা বিবেচনায় নিয়ে আদালতের সুস্পষ্ট ও সুনির্দিষ্ট অভিমত এই যে, দুর্নীতি দমন কমিশনসহ বিভিন্ন তদন্ত সংস্থা ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর উচিত হবে যে, অনুসন্ধান বা তদন্ত  পর্যায়ে যে কোনো অপরাধের সঙ্গে জড়িত সন্দেহভাজন কোনো ব্যক্তিকে দেশত্যাগে বারিত করার জন্য অবিলম্বে প্রয়োজনীয় আইন বা বিধি প্রণয়ন করা; এবং যতক্ষণ  পর্যন্ত এই ধরনের আইন বা বিধি প্রণয়ন করা না হবে ততক্ষণ পর্যন্ত অন্তর্বর্তী ব্যবস্থা হিসেবে এখতিয়ার সম্পন্ন আদালতের নিকট এ ধরনের বারিত আদেশ প্রার্থনা করা এবং আদালতের অনুমতি গ্রহণ করা।

অনুসন্ধান বা তদন্ত পর্যায়ে সংশ্লিষ্ট তদন্তকারী সংস্থা বা কর্তৃপক্ষ যথাযথ প্রতিনিধির মাধ্যমে এখতিয়ার সম্পন্ন আদালতে আবেদন জানালে আদালত সন্তুষ্টি সাপেক্ষে একটি সুনির্দিষ্ট সময়ের জন্য, যার মেয়াদ ৬০ দিনের অধিক হবে না বারিত আদেশ কিংবা স্বীয় বিবেচনায় ন্যায়সংগত অন্য কোনো আদেশ প্রদান করতে পারবেন। সংক্ষুব্ধ ব্যক্তি বা পক্ষ ওই আদেশ বাতিল বা প্রত্যাহার করার জন্য সংশ্লিষ্ট আদালতে আবেদন জানাতে পারবেন এবং সেক্ষেত্রে আদালত প্রয়োজনীয় আদেশ প্রদান করতে পারবেন।

সোনালীনিউজ/এমটিআই

Wordbridge School
Link copied!