• ঢাকা
  • বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল, ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

হাতিরঝিলে ওয়াটার ট্যাক্সি বন্ধে হাইকোর্টের পরামর্শ


নিজস্ব প্রতিবেদক মে ২৪, ২০২২, ০৬:০৪ পিএম
হাতিরঝিলে ওয়াটার ট্যাক্সি বন্ধে হাইকোর্টের পরামর্শ

ঢাকা: রাজধানীর হাতিরঝিলের পানি ও সৌন্দর্যকে অমূল্য সম্পদ হিসেবে বর্ণনা করে লেকটিতে ওয়াটার ট্যাক্সিসহ সব ধরনের যান্ত্রিক বাহন বন্ধের পরামর্শ দিয়েছেন হাইকোর্ট।এছাড়া বিজ্ঞানী জগদীশ চন্দ্র বসুর নামে হাতিরঝিল-বেগুনবাড়ি প্রকল্পের নামকরণ এবং সেখানে মাছের অভয়ারণ্য গড়ে তোলারও পরামর্শ দেয়া হয়েছে।

হাতিরঝিল-বেগুনবাড়ি প্রকল্পকে ‘পাবলিক ট্রাস্ট প্রোপার্টি’ ঘোষণার পাশাপাশি এ প্রকল্পের ভেতরে হোটেল, রেস্তোরাঁসহ সব ধরনের বাণিজ্যিক স্থাপনা অবৈধ ঘোষণা করে গত বছরের ৩০ জুন হাইকোর্ট যে রায় ঘোষণা হয়েছিল, তার পূর্ণাঙ্গ রায়ে এ পরামর্শ দেয়া হয়েছে।

বিচারপতি মো. আশরাফুল কামাল ও বিচারপতি রাজিক আল জলিলের বেঞ্চের দেয়া ওই পূর্ণাঙ্গ রায় মঙ্গলবার (২৪ মে) সুপ্রিম কোর্টের ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হয়।

প্রকল্পটির নকশার নির্দেশনার বাইরে ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রম পরিচালনা সংক্রান্ত প্রতিবেদন গণমাধ্যমে প্রকাশের পর ২০১৮ সালে জনস্বার্থে রিট করে হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড পিস ফর বাংলাদেশ। সেই রিটের প্রাথমিক শুনানি নিয়ে রুল জারি করেছিল হাইকোর্ট। রুল শুনানি শেষে গত বছর রায় দেয় আদালত।

পূর্ণাঙ্গ রায়ে বলা হয়েছে, হাতিরঝিলের পানি এবং এর নজরকাড়া সৌন্দর্য অমূল্য সম্পদ। এ অমূল্য সম্পদের কোনোরূপ ধ্বংস বা ক্ষতি করা যাবে না।

হাতিরঝিলের বিষয়ে রায়ে চারটি নির্দেশনা ছাড়াও সংশ্লিষ্টদের উদ্দেশ্যে কয়েকটি পরামর্শ দিয়েছেন আদালত।

চার নির্দেশনা:

১. সংবিধান, পরিবেশ আইন, পানি আইন এবং তুরাগ নদী রায় মোতাবেক রাজধানী ঢাকার ফুসফুস বেগুনবাড়ি খালসহ হাতিরঝিল এলাকা যা ‘হাতিরঝিল’ নামে পরিচিত, তা ‘পাবলিক ট্রাস্ট প্রপার্টি’ তথা জনগণের জাতীয় সম্পত্তি।

২. হাতিরঝিল এলাকায় হোটেল, রেস্তোরাঁসহ সব ধরনের বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান বরাদ্দ এবং নির্মাণ সংবিধান, পরিবেশ আইন, পানি আইন এবং তুরাগ নদীর রায় অনুযায়ী বেআইনি ও অবৈধ।

৩. হাতিরঝিল প্রকল্প এলাকায় বরাদ্দ করা সব হোটেল, রেস্তোরাঁ ও বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান অবৈধ এবং এখতিয়ার বহির্ভূত মর্মে এসব বরাদ্দ বাতিল ঘোষণা করা হল।

৪. এ রায়ের অনুলিপি প্রাপ্তির পরবর্তী ৬০ দিনের মধ্যে সব ধরনের হোটেল, রেস্তোরাঁ এবং বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান উচ্ছেদের জন্য নির্দেশ দেওয়া হল।

রায়ে আদালতের পরামর্শ:

১. হাতিরঝিল ও বেগুনবাড়ি সম্পূর্ণ প্রকল্পটি সংরক্ষণ, উন্নয়ন ও পরিচালনায় একটি পৃথক কর্তৃপক্ষ তথা ‘হাতিরঝিল লেক সংরক্ষণ, উন্নয়ন ও ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ’ গঠন করা, যা প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ের সরাসরি অধীনে থাকবে।

২. বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) প্রকৌশল বিভাগ এবং বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ২৪তম ইঞ্জিনিয়ারিং কনস্ট্রাকশন ব্রিগেডকে যৌথভাবে হাতিরঝিল প্রকল্প এলাকার স্থায়ী পরামর্শক নিয়োগ করা।

৩. জনসাধারণের ব্যবহারের জন্য মাটির নিচে আন্তর্জাতিক মানের টয়লেট স্থাপন করা।

৪. নির্ধারিত দূরত্বে বিনামূল্যে জনসাধারণের জন্য পান করার পানির ব্যবস্থা করা।

৫. পায়ে চলার রাস্তা, বাইসাইকেল লেন এবং শারীরিক প্রতিবন্ধীদের জন্য পৃথক লেন তৈরি করা।

৬. পানির জন্য ক্ষতিকর হওয়ায় লেকে সব ধরনের যান্ত্রিক বাহন তথা ওয়াটার ট্যাক্সি সার্ভিস ব্যবহার নিষিদ্ধ করা।

৭. লেকে মাছের অভয়ারণ্য করা।

৮. হাতিরঝিল-বেগুনবাড়ি প্রকল্পটি বাংলাদেশের প্রথম বাঙালি বিজ্ঞানী স্যার জগদীশ চন্দ্র বসুর নামে নামকরণ করা।

৯. হাতিরঝিল ও বেগুনবাড়ি সম্পূর্ণ প্রকল্পটি সংরক্ষণ, উন্নয়ন ও পরিচালনার ব্যয় রেভিনিউ বাজেট থেকে বরাদ্দ করা।

এ রায়ের বিষয়ে আইনজীবী মনজিল মোরসেদ বলেন, গত বছর ৩০ জুন রায় হওয়ার পর এর বিরুদ্ধে রাজউক আপিল করেছে, কিন্তু আপিলেও এই রায় স্থগিত হয়নি। এখন রায় প্রকাশ হয়েছে, তারা এখন নিয়মিত আপিল করতে পারবে। তারপর আদালত চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত দেবে। আমরা আশাবাদী এই রায় বহাল থাকবে।

সোনালীনিউজ/আইএ

Wordbridge School
Link copied!