• ঢাকা
  • বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ, ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০
মৃত তরুণীদের ধর্ষণ করত মুন্না ভগত

এ কেমন নরপশু!


নিজস্ব প্রতিবেদক নভেম্বর ২১, ২০২০, ১২:০৩ পিএম
এ কেমন নরপশু!

সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের মর্গের প্রধান ডোম জতন কুমার

ঢাকা : সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের মর্গের প্রধান ডোম জতন কুমার। বছর কয়েক আগে তার ভাগ্নে মুন্না ভগতকে (২০) সহকারি হিসেবে আনেন। মুন্না মর্গেই থাকত। এই মর্গে থাকাতেই জড়িয়ে পড়ে বীভৎস কর্মকাণ্ডে। সেখানে বিকৃত যৌনাচারে লিপ্ত হতো সে। যে কাজ পশুও করে না তা করল মুন্না দিনের পর দিন এ ধরনের কর্মকাণ্ড চালিয়ে আসা মুন্নাকে অবশেষে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ সিআইডি। সিআইডির কাছে সে তার অপরাধের কথা স্বীকারও করেছে।

শুক্রবার (২০ নভেম্বর) মালিবাগে সিআইডির প্রধান কার্যালয়ে এ বিষয়ে সংবাদ সম্মেলনও করা হয়। সিআইডির অর্গানাইজড ক্রাইম বিভাগের প্রধান অতিরিক্ত ডিআইজি শেখ মোঃ রেজাউল হায়দার বলেন, জঘন্যতম ও খুবই বিব্রতকর অভিযোগ। অভিযোগের প্রাথমিক সত্যতার পরই ওই যুবককে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

তিনি বলেন, বিভিন্ন স্থান থেকে যেসব লাশ ময়নাতদন্তের জন্য মর্গে নেওয়া হতো, সেসব লাশের মধ্য থেকে মৃত নারীদের ধর্ষণ করত মুন্না।

সিআইডি জানিয়েছে, উচ্চ আদালতের নির্দেশে সংস্থাটি দেশের বিভিন্নস্থানে ধর্ষণ ও আত্মহত্যায় নিহতদের আলামতের ডিএনএ পরীক্ষা ও প্রোফাইল তৈরি করে আসছে। এরই ধারাবাহিকতায় গত বছরের মার্চ মাস থেকে একটি সরকারি হাসপাতাল থেকে আসা কিছু আলামতের মধ্যে (হাই-ভ্যাজাইনাল সোয়াব) বা পুরুষের বীর্যের উপস্থিতি পাওয়া যায়। এরই ধারাবাহিকতায় সিআইডির কর্মকর্তারা আসল ঘটনা জানতে শুরু করেন তদন্ত। রাজধানীর মোহাম্মদপুর ও কাফরুল থানার কয়েকটি ঘটনার পরে পাওয়া আলামতের ডিএনএ গবেষণা করে সবগুলোতে একই ব্যক্তির ডিএনএ পাওয়া যায়।

সিআইডি সূত্রে জানা গেছে, ডোমের সহযোগী মুন্না ভগত দুই-তিন বছর ধরে এই কাজ করছে। রাতে সে মর্গেই ঘুমাতো। রাতে ওই হাসপাতালে আসা লাশ সে পাহারা দিত। রাতে কোনো তরুণীর লাশ আসলেই সে মেতে উঠত বিকৃত যৌনাচারে। আত্মহত্যাকারী ১১ থেকে ২০ বছর বয়সী মেয়েরাই ছিল মুন্নার বিকৃতির লক্ষ্য।

মুন্না ওই হাসপাতালের স্টাফ না হয়েও মামার সহযোগী হিসেবে কাজ করে আসছিল বলে জানিয়েছে সিআইডি।

সিআইডি আরো জানিয়েছে, অধিকতর তদন্তে আত্মহত্যাকারীদের লাশের ময়না তদন্তের আগে ধর্ষণের আলামত পাওয়া যায়। প্রতিটি ধর্ষণই রাতের নিরিবিলি সময়ে হতো। তদন্তের এক পর্যায়ে মুন্নার ডিএনএর সঙ্গে সিআইডির প্রোফাইলে থাকা লাশের ডিএনএর নমুনা পাওয়া যায়। পরে বৃহস্পতিবার রাতে ওই হাসপাতালের মর্গ থেকে মুন্নাকে গ্রেপ্তার করে সিআইডি।

জানা যায়, মৃতদেহের সঙ্গে যৌন সম্পর্ক করা একটি মানসিক রোগ। এই ধরনের রোগকে চিকিৎসাবিজ্ঞানের ভাষায় নেক্রোফিলিয়া বলা হয়ে থাকে।

যেভাবে শনাক্ত করল সিআইডি : ২০১২ সালে বাংলাদেশ পুলিশের প্রথম ডিএনএ ল্যাব স্থাপিত হয়। ল্যাব স্থাপনের পর হতে ধর্ষণ ও হত্যাসহ আদালতের নির্দেশে প্রেরিত সব আলামতের ডিএনএ পরীক্ষা ও প্রোফাইল তৈরি করে সিআইডি।

গত বছরের মার্চ থেকে চলতি বছরের আগস্ট পর্যন্ত সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালের ফরেনসিক মেডিসিন বিভাগ কয়েকটি নমুনা পাঠিয়েছিল সিআইডিকে। সেখানে মৃত নারীর এইচভিএসে পুরুষবীর্যের উপস্থিতি পাওয়া যাওয়ায় পূর্ণাঙ্গ ডিএনএ প্রোফাইল তৈরি করার চেষ্টা করে তারা।

সিআইডির একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, ‘কোডিস (ঈঙউওঝ) সফটওয়ার আমরা সার্চ দিয়ে দেখি। মোহাম্মদপুর ও কাফরুল থানার কয়েকটি ঘটনায় প্রাপ্ত ডিএনএর প্রোফাইলের সঙ্গে একই ব্যক্তির ডিএনএ বারবার ম্যাচ করছে। যেটা অনেকটাই অস্বাভাবিক ছিল। ধারণা করা হয়, একজন ব্যক্তি কর্তৃক ধর্ষণ পরবর্তী হত্যা অথবা ধর্ষণজনিত কারণে আত্মহত্যা হয়েছে। কিন্ত মরদেহগুলোতে কোনো আঘাতের চিহ্ন ছিল না।’

সিআইডির এই কর্মকর্তা বলেন, আমরা তখন মনে করি, কোনো না কোনোভাবে ভিকটিমদের মৃতদেহের ওপরে কোনো ব্যক্তির বিকৃত যৌনলালসা চরিতার্থ হয়েছে। প্রতিটি মৃতদেহ মর্গে আনার পর তার মৃত্যুর কারণ জানতে ময়নাতদন্ত ও ডিএনএ বিশ্লেষণ করা হয়। সব লাশই ময়নাতদন্তের জন্য মর্গে রেখে দেওয়া হয়। সেখানে বেশ কয়েকজন ডোম নিয়মিত পাহারা দিত। কিন্তু এই লাশগুলোর ক্ষেত্রে একজন ডোমসহকারী নিয়মিত ডিউটিতে থাকত। প্রাথমিকভাবে তাকে সন্দেহ হয় আমাদের। পরবর্তীতে তার সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়।

বাইরে নিয়ে গিয়ে কথা বলার নামে, চা খাওয়ার ছলে তার ডিএনএ সংগ্রহ করি আমরা। সেটা সিআইডি ল্যাবে নিয়ে এসে বিশ্লেষণ করলে ওই ৬ মরদেহের ডিএনএর সঙ্গে ম্যাচ করে। তখন শতভাগ নিশ্চিত হয়ে তাকে গ্রেপ্তারের অভিযান চালাই। বিষয়টি আসামি বুঝতে পেরে গা-ঢাকা দেয়।’

এদিকে মর্গে রাখা মৃত নারীদের ধর্ষণের দায় স্বীকার করে জবানবন্দি দিয়েছেন ডোম মুন্না ভগত (২০)।

শুক্রবার তাকে ঢাকা মহানগর হাকিম আদালতে হাজির করে পুলিশ। এ সময় তিনি স্বেচ্ছায় দায় স্বীকার করে জবানবন্দি দিতে সম্মত হওয়ায় তা রেকর্ড করার আবেদন করেন তদন্ত কর্মকর্তা। আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ঢাকা মহানগর হাকিম মামুনুর রশীদ তা রেকর্ড করেন। এরপর তাকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন।

এর আগে শেরে বাংলা নগর থানায় তার বিরুদ্ধে একটি মামলা করা হয়।

সোনালীনিউজ/এমটিআই

Wordbridge School
Link copied!