• ঢাকা
  • শনিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১
বনানী, গুলশান, উত্তরার দেড় শতাধিক স্থাপনা নজরদারিতে

স্পার আড়ালে চলছে অনৈতিক কর্মকাণ্ড


নিজস্ব প্রতিবেদক ফেব্রুয়ারি ২১, ২০২১, ১০:১১ পিএম
স্পার আড়ালে চলছে অনৈতিক কর্মকাণ্ড

ঢাকা : রাজধানীতে আবারো শুরু হয়েছে স্পার আড়ালে অনৈতিক কর্মকাণ্ড। গত বছরের সেপ্টেম্বর গুলশানে একই সঙ্গে ৩টি স্পা সেন্টারে সবশেষ অভিযান চালিয়েছিল পুলিশ।

এগুলো হলো-ম্যাঙ্গো স্পা, লাইভ স্টাইল হেল্থ ক্লাব অ্যান্ড স্পা সুেলন, রেডিডেন্স সেলুন-২ অ্যান্ড স্পা। এরপর মাস দুয়েক বন্ধ ছিল এই ব্যবসা।

বিশেষ করে গুলশান, বনানী, নিকেতন, উত্তরার অভিজাত এলাকা টার্গেট করেই চলছে অনৈতিক কর্মকাণ্ড। আর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহার করে দেওয়া হচ্ছে লোভনীয় বিজ্ঞাপন।

স্থানীয়রা জানান, অভিজাত ও কূটনৈতিক এলাকায় বিলাসবহুল ফ্ল্যাট নিয়ে এমন অসামাজিক কার্যকলাপ হতবাক করেছে। তবে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী চাইলেই এটি বন্ধ করা সম্ভব। এই ব্যবসাকে ঘিরে নানা ব্ল্যাকমেইলিংয়েরও ঘটনাও ঘটছে।

তবে গুলশান থানার ওসি (তদন্ত) আমিনুল ইসলাম বলছেন, আমরা মাঝে মধ্যেই বিভিন্ন স্পা সেন্টারে অভিযান চালাই। পরে তারা আবারো বাসা পরিবর্তন করে ব্যবসা চালু করে। শিগগির স্পার বিরুদ্ধে সাঁড়াশি অভিযান শুরু হবে। এ জন্য গোয়েন্দা কার্যক্রম চলছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, গুলশান, বনানী, নিকেতন ও উত্তরায় দেড়শতাধিক স্পা সেন্টার রয়েছে। এরমধ্যে কয়েকটি ঘুরে দেখা যায়, বিভিন্ন রংয়ের আলোয় ঝলমল করছে স্পা সেন্টারগুলো। বাইরে থেকে ভেতরের পরিবেশ অনুমান করা কঠিন। ভেতরে গেলেই চোখে পড়বে ছিমছাম পরিপাটি সেলুন। অথচ এর মধ্যে চলছে অনৈতিক কর্মকাণ্ড। রয়েছে স্কুল, কলেজ ও ভার্সিটি পড়ুয়া সুন্দরীদের আনাগোনা।  ভেতরে ছোট ছোট কেবিন করা হয়েছে। স্কুল-কলেজের উঠতি বয়সী ছেলেরাসহ যুবসমাজের একটি বড় অংশ এদের খদ্দের।

এধরনের অসংখ্য স্পার আড়ালে চলছে মাদক বাণিজ্যও। স্থানীয় কিছু ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান  তাদের বিরুদ্ধে গুলশান বিভাগের ডিসির কাছে কয়েকবার অভিযোগ করলেও অ্যাকশনে যায়নি পুলিশ। কয়েকটি মানবপাচার মামলাও হয়। তবুও অসামাজিক কার্যকলাপ থেমে নেই। এসব পার্লার থেকে পুলিশের কিছু কর্মকর্তা মোটা অংকের উৎকোচ নিয়ে তাদের ছেড়ে দেয়।

সূত্র জানায়, খদ্দেরদের আকর্ষণ বাড়াতে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রচারও চালাচ্ছে তারা। সেখান থেকেই ফোন নাম্বারের মাধ্যমে যোগাযোগ করা হয়। কোনো সন্দেহ হলেই ভুল ঠিকানা দিয়ে এড়িয়ে চলা হয়।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, গুলশান রোড নং ১২৩ এর এক বাড়িতে মেঘলা ও তাজু এ অনৈতিক কর্মকাণ্ডের নেতৃত্ব দিচ্ছেন। তাদের সাথে আছেন হাসি ও ফারিয়া। কিছুদিন আগেও এই ফারিয়াকে আটক করেছিল পুলিশ। জামিনে বেরিয়ে আবারো সে এ ব্যবসা শুরু করে।  

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, মূলত এ সিন্ডিকেটটি সবকিছু নিয়ন্ত্রণ করছে। গুলশান, বনানী, উত্তরা এবং নিকেতন এলাকায় যেসব বাড়িতে এমন অনৈতিক কারবার চলে তার মূলে রয়েছে এ সিন্ডিকেটটি।

তবে গুলশান বিভাগের উপ-কমিশনার সুদীপ্ত চক্রবর্তী বলেন, অবৈধ স্পা বা ম্যাসাজ পার্লারের নাম যারা অসামাজিক কর্মকাণ্ড চালিয়ে যাচ্ছেন তাদেরকে ছাড় দেওয়া হবে না এবং আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। আমরা বারবারই এর বিরুদ্ধে অভিযানে যাই। কিন্তু ছাড়া পেয়ে আবারো স্থান পাল্টিয়ে ওই ব্যবসা শুরু করে। আমরা দ্রুত অভিযানে যাচ্ছি বলেও জানান তিনি।

উত্তরা বিভাগের উপ-কমিশনার শহিদুল্লাহ বলেন, উত্তরা এলাকায় এ ধরনের অনৈতিক কারবারের বিরুদ্ধে বেশ কয়েকবার অভিযান পরিচালনা করেছি। আবারো যদি এ ধরনের কারবার চলে আমরা অভিযান পরিচালনা করবো।

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, গোয়েন্দা তথ্য সংগ্রহ করার জন্য কাজ শুরু হচ্ছে। কোনোভাবেই এ ধরনের অনৈতিক কারবারিদের ছাড় দেওয়া হবে না বলে হুঁশিয়ারি দেন তিনি।

ফেসবুকে  বিজ্ঞাপন : ঢাকা শহরে প্রায় ডজনখানেক স্পা সেন্টার অশ্লীল বিজ্ঞাপন আর সুন্দরি তরুণীদের প্রলোভন দেখিয়ে ব্যবসা পরিচালনা করছে। অথচ তাদের কাছে নেই কোনো বৈধ কাগজ কিংবা ট্রেড লাইসেন্স। সিটি করপোরেশনের কাছ থেকে হোটেল, বিউটি পার্লার, সেলুন আর ব্যায়ামাগারের ট্রেড লাইসেন্স নিয়ে চলছে এ ব্যবসা।

অশ্লীলতার ইঙ্গিত দিয়ে বিজ্ঞাপন তৈরি করে তরুণ ও বয়স্ক পুরুষদের আকর্ষণ করা হয়। একটি স্পার বিজ্ঞাপনে স্পার সঙ্গে ‘কমপ্লিট ফান’র ব্যবস্থার কথা উল্লেখ করা হয়েছে। পোস্ট করা হয়েছে অশ্লীল ভিডিও।

এদিকে বেশ কয়েকবার স্পার নামে ব্ল্যাকমেইলের ঘটনা ঘটিয়েছে কয়েকটি স্পা সেন্টারে। ধনী ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে হাতিয়ে নিয়েছে লাখ লাখ টাকা।

২০১৮ সালের অক্টোবরে গুলশান ও বনানী এলাকার ডব্লিউ বিউটি অ্যান্ড স্পা, মহাখালী ডিওএইচএস-এর ফনিক্স হেলথ কেয়ার, গুলশানের হোয়াইট বিউটি সেলুন অ্যান্ড স্পা সেন্টার এবং ডায়মন্ড বিউটি অ্যান্ড স্পায় অভিযান চালিয়ে ৪০ জনকে আটক করে গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। তাদের বিরুদ্ধে তরুণীদের দিয়ে স্পা করানোর পর সেসময়ের ছবি ধারণ করে পরবর্তীতে ব্ল্যাকমেইলিংয়ের অভিযোগ ছিল।

মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের উপ-কমিশনার মশিউর রহমান বলেন, যদি কেউ প্রতারিত বা ব্ল্যাকমেইলিংয়ের শিকার হন তবে আমাদের কাছে অভিযোগ দিলে ব্যবস্থা নিতে পারবো।

সোনালীনিউজ/এমটিআই

Wordbridge School
Link copied!