• ঢাকা
  • শনিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

অপহরণের পর চাঁদা দাবি, ৪ র‌্যাব সদস্য আটক


নিজস্ব প্রতিবেদক এপ্রিল ৯, ২০২১, ০৯:০২ পিএম
অপহরণের পর চাঁদা দাবি, ৪ র‌্যাব সদস্য আটক

ঢাকা: রাজধানীর হাতিরঝিলে এক ব্যক্তিকে অপহরণ করে চাঁদা দাবির অভিযোগে পুলিশের হাতে আটক হয়েছেন চার র‌্যাব সদস্য। তাদের বিষয়ে র‌্যাব বাহিনীটির সদরদফতরের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা জানিয়েছেন, আটক র‌্যাব সদস্যরা এমন অপরাদে জড়িত থাকলে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। তাদের কারাদণ্ড এমনকি চাকরিচ্যুতিও হতে পারে।

জানা গেছে, রাজধানীর মীরবাগের বাসিন্দা তামজিদ হোসেনকে (২৭) অপহরণের পর মুক্তিপণ দাবি করার ঘটনায় শুক্রবার (৯ এপ্রিল) চার র‍্যাব সদস্যকে গ্রেফতার করে হাতিরঝিল থানা পুলিশ। এ ঘটনায় তামজিদের ছোট বোন রাইয়ানা হোসেন হাতিরঝিল থানায় একটি মামলা করেন।

মামলার এজাহারে রাইয়ানা হোসেন বলেন, ‘আমার বড় ভাই তামজিদ হোসেন বৃহস্পতিবার (৮ এপ্রিল) সকাল আনুমানিক ৯টায় আমাদের মীরবাগের বাসা থেকে উত্তরা যাওয়ার কথা বলে বের হন। বেলা ১২টার দিকে এক ব্যক্তি নিজেকে র‍্যাবের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা পরিচয় দিয়ে আমার মোবাইল নম্বরে ফোন করেন। তিনি আমাকে জানান, আমার বড় ভাই (তামজিদ) র‍্যাব হেফাজতে আছে। এ বিষয়ে থানা পুলিশ বা ডিবিকে না জানানোর কথা বলেন ওই কর্মকর্তা। পুলিশ বা ডিবিকে এ বিষয়ে জানালে আমার বড় ভাইকে প্রাণে মেরে ফেলা হবে বলেও তিনি আমাকে জানান।’

অপহরণের শিকার তামজিদের বোন এজাহারে আরও উল্লেখ করেন, ‘এরপর র‍্যাবের কর্মকর্তা পরিচয় দানকারী সেই ব্যক্তি ফোনের লাইন কেটে দেন। পরবর্তী সময়ে আমি অনেকবার তার সঙ্গে মোবাইলফোনে যোগাযোগ করার চেষ্টা করি। কিন্তু সেই ব্যক্তি বারবার আমার কল কেটে দেন।’

মামলার বাদী বলেন, ‘পরে দুপুর দেড়টার দিকে র‍্যাবের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা পরিচয়দানকারী সেই ব্যক্তি আবার কল দেন। মোবাইলফোনে তিনি আমাকে জানান, আমার বড় ভাইকে র‍্যাব অফিসে সিনিয়র অফিসাররা জিজ্ঞাসাবাদ করছেন। তার নামে অস্ত্র ও মাদক আইনে মামলা হবে। আমার বড় ভাইকে র‍্যাবের কোন অফিসে, কোন সিনিয়র অফিসার জিজ্ঞাসাবাদ করছেন- তা জানতে চাইলে, সেই ব্যক্তি জানান, এই মুহূর্তে আপনার ভাই র‍্যাবের কোন অফিসে আছেন- তা বলা যাবে না। তাকে ক্রসফায়ারও দেওয়া হতে পারে। যদি আপনার ভাইকে বাঁচাতে চান, তাহলে দুই কোটি টাকা রেডি করেন।’

রাইয়ানা ঘটনার বর্ণনা দিয়ে বলেন, ‘এর কিছুক্ষণ পর ওই ব্যক্তি ফোনে আমার ভাইকে তার সহযোগীদের দ্বারা মারধর করার শব্দ শোনান এবং আমার ভাইকে মোবাইলফোন দিলে সে কাঁদতে কাঁদতে জানায়, তাকে চোখ বেঁধে গাড়িতে তুলে মারধর করা হচ্ছে। আমার ভাই কাঁদতে কাঁদতে বাঁচার আকুতি জানায়। পরে একই নম্বর থেকে আরও অজ্ঞাত ২-৩ জন ফোন করে টাকা জোগাড় করতে পেরেছি কি না আমার কাছে জানতে চান।’

ভুক্তভোগীর বোন বলেন, ‘আমি তখন তাদেরকে বলি, আমরা গরিব মানুষ। এত টাকা কোথায় পাব? এক পর্যায়ে ব্যাবের কর্মকর্তা হিসেবে পরিচয়দানকারী সেই ব্যক্তি ১৫ লাখ টাকা দাবি করেন। আমাদের কাছে কোনো টাকা নেই জানালে সে আমাকে নগদ ১২ লাখ টাকা নিয়ে যমুনা ফিউচার পার্ক মার্কেটে যেতে বলেন। এ সময় সে আমাকে হুমকি দিয়ে বলেন, থানা পুলিশ বা ডিবি পুলিশে জানালে আমার ভাইকে প্রাণে মেরে ফেলবেন।’

রাইয়ানা বলেন, ‘পরে বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে সেই ব্যক্তি আমাকে ফোনে করে আমার বড় ভাইয়ের সঙ্গে কথা বলিয়ে দেন। আমার ভাই তখন তাকে খুব মারধর করছে বলে কান্নাজড়িত কণ্ঠে তাদের দাবিকরা টাকা দিয়ে দিতে বলে। আমরা তখন তার অবস্থান জানতে চাইলে সে জানায়, তার হাত-পা ও চোখ বাঁধা। সে কোথায় আছে বলতে পারবে না।’

‘পরে আমার কাছে মনে হয়, র‍্যাব কর্মকর্তা পরিচয়দানকারী ব্যক্তিরা আমার ভাইকে অপহরণ করে কোথাও আটকিয়ে মুক্তিপণ আদায়ের চেষ্টা করছেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে বৃহস্পতিবার হাতিরঝিল থানায় একটি অভিযোগ করি।’

এ বিষয়ে হাতিরঝিল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আবদুর রশিদ বলেন, ‘এ ঘটনায় একটি মামলা হয়েছে। এছাড়া চারজন গ্রেফতার রয়েছেন। বিষয়টি আমরা তদন্ত করে দেখছি।’

সোনালীনিউজ/আইএ

Wordbridge School
Link copied!