• ঢাকা
  • শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

প্রত্যন্ত অঞ্চলেও অনলাইন জুয়া


নিজস্ব প্রতিবেদক জুলাই ৪, ২০২১, ০১:৩৮ পিএম
প্রত্যন্ত অঞ্চলেও অনলাইন জুয়া

ঢাকা : রাজধানী থেকে শুরু করে প্রত্যন্ত অঞ্চলেও অনলাইন ক্যাসিনোতে আসক্ত হয়ে পড়ছে যুব ও তরুণসমাজ।

আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর চোখ ফাঁকি দিতে, সর্বোচ্চ ব্যবহার করা হচ্ছে প্রযুক্তির। এমন সর্বনাশা নেশায় সর্বস্ব খোয়াচ্ছেন অনেকে। এ কারণে উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছেন অভিভাবকমহল থেকে শুরু করে সাধারণ মানুষ।

সম্প্রতি এ রকম অনলাইন জুয়া চক্রের ৩ জনকে গ্রেপ্তার করেছে কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিটের সাইবার ক্রাইম বিভাগ। চক্রটির গত তিন মাসে জুয়ায় লেনদেন করেছে প্রায় চার কোটি টাকা।

সূত্রমতে, রাজধানী ঢাকার ক্যাসিনো সম্রাটদের অনেকেই কারাগারে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কঠোরতায় প্রকাশ্যে জুয়া-হাউজি খেলা অনেকটা কমে যায়। অথচ ডিজিটাল পদ্ধতির অপব্যবহার করে অ্যান্ড্রয়েড ফোনের মাধ্যমে জমজমাট হয়ে উঠেছে জুয়ার আসর। নাম দেওয়া হয়েছে-‘অনলাইন জুয়ার আসর’। এর জন্য রয়েছে বিভিন্ন অ্যাপ।

অনলাইনভিত্তিক হওয়া দিন-রাত ২৪ ঘণ্টা খেলা যায় এই জুয়া। দেশের স্কুল-কলেজের ছাত্র, বেকার যুবক ও তরুণ শিক্ষার্থীরা এসব খেলায় জড়িয়ে বখে যাচ্ছে। তরুণদের অনেকেই কৌতূহলবশত খেলা শুরু করার পরই আসক্ত হয়ে পড়ছেন ‘অনলাইন জুয়ায়’।

দেখা গেছে, অনলাইন জুয়ায় সব থেকে বেশি খেলে থাকেন শিক্ষার্থীরা। অ্যাপের নিয়ম অনুযায়ী খেলার চিপস কিনতে প্রয়োজন পড়ে ক্রেডিট বা ডেভিড কার্ড। এসব সহজলভ্য হওয়ায় অনেকেই ঝুঁকে পড়ছেন অনলাইন জুয়ার দিকে। অনেকে আবার আসক্ত হয়ে নেশাগ্রস্ত হয়ে পড়ছেন।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, রাজধানীর বাইরে জেলা, উপজেলা, এমনকি ইউনিয়নে ঢুকে পড়েছে প্যাথলজিক্যাল জুয়া নামের অনলাইন ক্যাসিনো। এ খেলায় একজন আসক্ত ব্যক্তি আরো ১২ জনকে অংশগ্রহণ করাতে পারলে তার ‘এক হাত’ হয়। এভাবে প্রত্যন্ত অঞ্চলের আনাচে-কানাচে কয়েক হাজার অনলাইন ক্যাসিনোতে পথভ্রষ্ট হচ্ছেন কিশোর-তরুণরা।

এটি এতটাই দ্রুত বিস্তার করেছে যে, যা নিয়ন্ত্রণ করা কঠিন হয়ে পড়েছে। যুবক-তরুণসমাজ অন্যান্য নেশা ছেড়ে সার্বক্ষণিক ইন্টারনেটে জুয়ার মাধ্যমে বিশাল অঙ্কের টাকা হারাচ্ছেন। অনলাইন ক্যাসিনো খেলে গুটিকয়েক মানুষ অল্প সময়ে ‘আঙুল ফুলে কলাগাছ’ হলেও অধিকাংশ হয়েছেন সর্বস্বান্ত। অনলাইন ক্যাসিনোতে আসক্তি হলে সাইকোপ্যাথোলজির একটি রূপ উৎসাহিত হয়।

যার অভিজ্ঞতা ইন্টারনেটের মাধ্যমে গেমসে অংশ নেওয়া এবং আর্থিক ইউনিট বা অর্থনীতির ওপর ভিত্তি করে মুদ্রার সঙ্গে বাজি ধরা। যারা এ খেলায় বার বার হারবে একসময় তাদের আর বাজি লাগানোর মতো টাকা থাকে না।

তখন বাধ্য হয়ে তারা চুরি, ডাকাতি, ছিনতাইসহ অপরাধজনিত কাজে লিপ্ত হয়। সকল বিষয়ে চিন্তা করে এখনই ব্যবস্থা না নিলে আইনশৃঙ্খলার অবনতির আশঙ্কা করছেন উপজেলার সচেতন নাগরিকরা।

সূত্র জানায়, যেসব অনলাইনে ক্যাসিনো জুয়া চলছে তার মধ্যে অন্যতম হলো ‘ডে৩০ডটনেট’, ‘গেমটি১০ডটকম’, ‘টাকা১০০ডটকম’। এসবে অনলাইনে প্রবেশ করতে হয়। এরপর ক্লাবে ঢুকে খেলা শুরু করতে হয়।

জানা গেছে, অনলাইনভিত্তিক লুডু, ক্যারাম, তরুণদের মধ্যে তুমুল জনপ্রিয় হালের পাবজি গেম, ফ্রি-ফায়ারসহ শতাধিক গেমে আসক্ত হচ্ছেন কিশোর-কিশোরীরা। এসব খেলায় বেশিরভাগ সাইট পরিচালনা করা হচ্ছে দেশের বাইরে থেকে। চাহিদা বাড়ায় প্রতিদিনই গজিয়ে উঠছে নতুন নতুন সাইট। গেমভিত্তিক মোবাইল অ্যাপসও রয়েছে বলে জানা গেছে। তাই কিশোর-কিশোরীরাও এ ধরনের অপরাধে জড়িয়ে পড়ছে। এসব অনলাইন জুয়ার প্ল্যাটফরমে নিঃস্ব হচ্ছে অনেকে।

এদিকে অনলাইন জুয়ার আসর নাইন উইকেটস ডটকম। ইমেইল দিয়ে রেজিস্ট্রেশনই বেটিং দুনিয়ার প্রবেশদ্বার। তারপরই শুরু হয় টাকার খেলা। টাকা দিয়ে দিয়ে পয়েন্ট কেনা। তা দিয়েই বাজি। নেশায় পড়েই লাখ টাকা খোয়াচ্ছেন ব্যবহারকারীরা। আর কোটি টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে, একটি চক্র।

এমন একটি চক্রের তিনজনকে গ্রেপ্তার করেছে কাউন্টার টেররিজেম ইউনিটের সাইবার ক্রাইম বিভাগ। তাদের মধ্যে সাগর আহম্মেদকে (২১) মাগুরা সদর থেকে, মো. বিপুল হোসেনকে (২৯) বালিয়াকান্দি রাজবাড়ী থেকে, হামিদুল ইসলামকে (২৪) শ্রীপুর, মাগুরা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়।

জুয়ার রাজ্যে যাদের পরিচয় মাস্টার এজেন্ট, সুপার এজেন্ট, লোকাল এজেন্ট। এখানে জুয়া খেলতে লাগে পিবিইউ বা পার বেটিং ইউনিট, যার এক ইউনিটের দাম একশ টাকা। ব্যবহারকারী মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে টাকা দেয় লোকাল এজেন্টকে। তার কাছ থেকে পায় মাস্টার এজেন্ট। তারপর সুপার এজেন্টের হাত হয়ে টাকা পাচার হয় দেশের বাইরের থাকা সুপার অ্যাডমিনের কাছে। ফিরতি পথে পিবিইউ পৌঁছায় ব্যবহারকারী হাতে। শুরু হয় জুয়া।

যোগাযোগ চলে বিদেশি নাম্বারের হোয়াটস্যাপে। ব্যবহারকারীদের অধিকাংশই তরুণ। ছড়িয়ে গেছে মফস্বলেও। ধরা পড়া চক্রটির ব্যবহারকারী হাজারের ওপরে। আর তাদের সুপার অ্যাডমিনের মালিকানায় আছে এমন একাধিক ওয়েবসাইট।

কাউন্টার টেরোরিজমের সাইবার ক্রাইম ইউনিটের অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার নাজমুল ইসলাম বলেন, অনলাইন জুয়ায় উদ্বেগ বাড়িয়েছে। আমরা সাইটগুলো মনিটরিং করছি। কারা এটি পরিচালনা করছে সে ব্যাপারেও রয়েছে নজরদারী। ইতোমধ্যে এ বিষয়ে আমরা গ্রেপ্তার অভিযান পরিচালনা শুরু করেছি।

তিনি আরো বলেন, অনলাইন জুয়ায় নেশায় পড়ে সর্বস্ব খোয়াচ্ছেন অনেকেই। তাই আইন প্রয়োগের পাশাপাশি সচেতন হতে হবে ব্যবহারকারীদেরও।

র‌্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক খন্দকার আল মঈন বলেন, অনলাইন জুয়ার ব্যাপারেও আমাদের নজরদারি শুরু হয়েছে। র্যাবের সাইবার ক্রাইম ইউনিট থেকে মনিটরিং হচ্ছে। আমরাও ইতোমধ্যে অভিযান শুরু করেছি। দ্রুত এ বিষয়ে ফলাফল আসবে।

সোনালীনিউজ/এমটিআই

Wordbridge School
Link copied!