• ঢাকা
  • বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ, ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

তালেবান উত্থানে উদ্বুদ্ধ দেশীয় জঙ্গিরা


নিউজ ডেস্ক জুলাই ২৫, ২০২১, ১১:৩৩ এএম
তালেবান উত্থানে উদ্বুদ্ধ দেশীয় জঙ্গিরা

ঢাকা : আফগানিস্তানে তালেবান উত্থানে উদ্বুদ্ধ হচ্ছে দেশীয় জঙ্গিরা। ইতোমধ্যে আফগানিস্তানে গেছেনও কয়েকজন জঙ্গি। অনেকে যাওয়ার চেষ্টাতে আছেন। নিজেদের মধ্যে সিক্রেট অ্যাপ দিয়ে যোগাযোগও বাড়িয়েছে তারা।

এদিকে দেশের কয়েকটি জঙ্গি সংগঠন একত্রিত হওয়ার চেষ্টা করছে বলে তথ্য পেয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।

সম্প্রতি কয়েকজন জঙ্গিকে আটকের পর এমন তথ্য পায় তারা। কর্মকর্তারা বলছেন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কঠোর নজরদারির কারণে তারা কোণঠাসা হয়ে আছে। বর্তমানে তাদের বড় ধরনের নাশকতা চালানোর শক্তি নেই। নজরদারির কারণে তারা গ্রেপ্তারও হচ্ছে ।

সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, আনসারুল্লাহ বাংলাটিম (এবিটির) জঙ্গিরা দীর্ঘদিন ধরে চুপচাপ থাকলেও বর্তমানে আফগানিস্তানের পরিস্থিতি তাদের উজ্জীবিত করে তুলেছে। তারা নিজেদের মধ্যে যোগাযোগ রাখছে ইন্টারনেটভিত্তিক বিভিন্ন অ্যাপস ব্যবহার করে। এমনই একটি ক্লোজ গ্রুপের নাম ‘সায়েন্স প্রজেক্ট’। এই চ্যাট গ্রুপের ১০ তরুণের মধ্যে তিনজন আফগানিস্তানে যাত্রা করেছেন। তাঁদের মধ্যে দুজনের আফগানিস্তানে পৌঁছে যাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত হয়েছেন গোয়েন্দারা।

এই দুজন হলেন কুমিল্লার আব্দুর রাজ্জাক ও সিলেটের শিব্বির আহমেদ। রাজ্জাক সিলেটে একটি মাদরাসায় পড়াশোনার পাশাপাশি গাড়ি চালাতেন। তাঁর সন্ধান চেয়ে ভাই সালমান খান ২৫ মার্চ সিলেটের কোতোয়ালি থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেছিলেন।

আর রবিউল নামে নোয়াখালীর এক তরুণ আফগানিস্তানের উদ্দেশে বাড়ি ছেড়েছেন। তবে গত মে মাসে ওই গ্রুপেরই চারজনকে সিটিটিসি গ্রেপ্তার  করে। তাঁরা আফগানিস্তানে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, আফগানিস্তানের বড় একটি অংশ সমপ্রতি তালেবানের নিয়ন্ত্রণে চলে যাওয়ায় সেখানে ‘ইসলামী শাসনব্যবস্থা’ কায়েমে শরিক হওয়ার জন্য যুবকদের উদ্বুদ্ধ করা হচ্ছে। ইসলামের ভুল ব্যাখ্যা দিয়ে এসব যুবকের মগজ ধোলাই করা হচ্ছে। এরই মধ্যে আফগানিস্তানে যেতে ঘর থেকে অনেকেই বের হয়েছেন। তাঁদের অনেকেই চট্টগ্রাম থেকে সমুদ্রপথে পাকিস্তান হয়ে আফগানিস্তানে যাওয়ার চেষ্টা করছেন। আর তাঁদের নিয়ন্ত্রণে মরিয়া চেষ্টা চালাচ্ছেন গোয়েন্দারা।

র‌্যাব সূত্র বলছে, সম্প্রতি গ্রেপ্তার এবিটির নেতা মাহমুদ হাসান গুনবি তাঁর অনুসারীদের বেশিরভাগ সময়ই জিহাদে অংশ নেওয়ার জন্য অনুপ্রেরণা দিতেন।

সমপ্রতি তাঁর বিভিন্ন বক্তব্যে আফগানিস্তানের বিষয়টি তুলে ধরতেন। ঘনিষ্ঠদের তিনি আফগানিস্তানে যাওয়ার ব্যাপারে পরামর্শ দিয়েছেন বিভিন্ন সময়ে।

গোয়েন্দা সূত্র বলছে, কয়েক বছর ধরে এবিটির সদস্যরা বিভিন্নভাবে গোপনে কক্সবাজার এলাকায় আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গাদের নিয়ে কাজ করছিলেন।

গত ৪ মার্চ এবিটির ‘অপারেশন শাখার প্রধান’ মো. মাইনুল ইসলাম ওরফে মাহিন ওরফে মিঠু ওরফে হাসান, সংগঠনের ‘শেখ’ সোহান শাদ ওরফে বাবা আব্দুল্লাহ ও মুরাদ হোসেন কবিরকে গ্রেপ্তারের পর অনেক গুরুত্বপূর্ণ তথ্য জানতে পারেন গোয়েন্দারা। গ্রেপ্তার মাইনুল ঢাকায় মাদরাসা পরিচালনার নামে শিশুদের ‘জিহাদি’ প্রশিক্ষণ দিচ্ছিলেন।

এছাড়া হেফাজতে ইসলামের সামপ্রতিক নাশকতায় আফগানিস্তানফেরত যোদ্ধাদের ‘মদত’ ছিল। তাঁদের একজন সর্বশেষ র্যাবের হাতে গ্রেপ্তার হওয়া গুনবি।

সিটিটিসির প্রধান আসাদুজ্জামান সাংবাদিকদের বলেন, ‘দেশ থেকে আনসার আল ইসলামের দুই সদস্য আফগানিস্তানে গিয়েছে বলে প্রাথমিক তথ্য পাওয়া গেছে। অবশ্য এটা এরই মধ্যে গ্রেপ্তারকৃতদের ভাষ্য। এবিষয়ে আমরা আরো নিশ্চিত হতে তদন্ত অব্যাহত রেখেছি।’

আসাদুজ্জামান বলেন, ‘আনসার আল ইসলাম উপমহাদেশের আল-কায়েদার শাখা বলে নিজেদের দাবি করে। তদন্তে তাদের এই দাবির কতটুকু সত্যতা আছে, তা জানার চেষ্টা অব্যাহত আছে। তবে আমাদের বক্তব্য স্পষ্ট, যারা দেশকে ভালোবাসবে, তারা কখনো এমন জঘন্যতম কাজ করতে পারবে না। একই সঙ্গে তাদের বোঝা উচিত, কেউই আমাদের নজরদারির বাইরে নয়।’

গোয়েন্দাদের একটি সূত্র জানায়, ‘গাজওয়াতুল হিন্দ’ বা ‘হিন্দুস্থানের বিরুদ্ধে যুদ্ধ’কে সামনে রেখে সংগঠিত হচ্ছে বাংলাদেশ ও ভারতের জঙ্গিরা।

বাংলাদেশে নিষিদ্ধ ঘোষিত দুই জঙ্গি সংগঠন জামাতুল মুজাহিদীন বাংলাদেশ-জেএমবি, আনসার আল ইসলাম ও ভারতের জামআতুল মুজাহিদীন ইন্ডিয়া-জেএমআই একজোট হয়ে এই অপতৎপরতা শুরু করেছে। সমপ্রতি পশ্চিমবঙ্গে গ্রেপ্তার হওয়া চার জঙ্গির কাছ থেকে এ তথ্য পেয়েছে ভারতের আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।

সিটিটিসির একজন কর্মকর্তা বলছেন, বাংলাদেশের নিষিদ্ধ তিন জঙ্গি সংগঠন আনসার আল ইসলাম, জেএমবি ও হরকাতুল জিহাদ বা হুজি মূলত আন্তর্জাতিক জঙ্গি সংগঠন আল-কায়েদার অনুসারী। আল-কায়েদা ভারতীয় উপমহাদেশে শাখা ঘোষণার (একিউআইএস বা আল কায়েদা ইন ইন্ডিয়ান সাবকন্টিনেন্ট) পর থেকেই তারা একজোট হয়ে কাজ করার চেষ্টা করছিল।

সিটিটিসির প্রধান মো. আসাদুজ্জামান অবশ্য জঙ্গিদের মাথাচাড়া দিয়ে উঠা ও নতুন করে সুসংগঠিত হওয়ার বিষয়টি অস্বীকার করেছেন।

তিনি বলেন, ‘গ্রেপ্তার এবং অভিযান মানেই আমাদের এখানে জঙ্গিবাদ এখনো নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। আমরা নিয়মিত নজরদারির মাধ্যমে জঙ্গিবাদ দমানোর চেষ্টা করছি।’

যেভাবে সংগঠিত হচ্ছে জঙ্গিরা : গতবছরের শেষ দিকে রাজধানীর মগবাজার, ইস্কাটন ও রাজাবাজার এলাকায় কয়েকটি সিরিয়াল ডাকাতির ঘটনা তদন্ত করতে গিয়ে জঙ্গি সম্পৃক্ততা পেয়েছিল মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ। এসময় বেশ কয়েকজন জঙ্গিকে গ্রেপ্তার করা হয়। উদ্ধার করা হয় শীর্ষ এক জঙ্গি নেতার মোবাইল ফোন।

সেই মোবাইল ফোন থেকেই ‘গাজওয়াতুল হিন্দ’-এর জন্য বিভিন্ন জঙ্গি সংগঠনের একজোট হয়ে কাজ করা সম্পর্কিত কিছু নথি উদ্ধার হয়। সেসব কাগজপত্রে কীভাবে একজোট হয়ে কাজ করা হবে তা নিয়ে কয়েক পাতার একটি নির্দেশিকা ছিল।

মোবাইল ফোনটি যে শীর্ষ জঙ্গি ব্যবহার করতেন, তার নাম আনোয়ারুল ইসলাম হূদয়। যাকে ‘হিন্দ অঞ্চল’-এর সামরিক শাখার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।

পলাতক এই শীর্ষ জঙ্গির সঙ্গে একদিকে যেমন বাংলাদেশের বিভিন্ন কারাগারে থাকা জঙ্গিদের নিয়মিত যোগাযোগ ছিল, তেমনি তিনি মাঝে-মধ্যেই সীমান্ত পেরিয়ে নিয়মিত ভারতে যাতায়াত করতেন। ভারতের স্পর্শকাতর অঞ্চল হিসেবে বিবেচিত কাশ্মীরে গিয়ে জঙ্গিবাদের সামরিক প্রশিক্ষণও নিয়েছেন তিনি।

পশ্চিমবঙ্গে গ্রেপ্তার হওয়া জঙ্গিদের বরাত দিয়ে এসটিএফ বলেছে, বারাসাত থেকে লালু সেন বা রাহুল নামে যাকে তারা গ্রেপ্তার করেছে, গ্রেপ্তারের আগে তার বাসায় এই হূদয় অবস্থান করেছিল। রাহুলের বাসা থেকে এসটিএফ হূদয়ের ব্যবহার করা কয়েকটি ইলেকট্রনিক ডিভাইসও উদ্ধার করেছে।

রাহুল অর্থের বিনিময়ে জঙ্গিদের অস্ত্র-বিস্ফোরক সরবরাহ এবং ভারতে সংগঠিত হতে সহযোগিতা করত। ঢাকার গোয়েন্দা পুলিশের একটি মামলার এজাহারভুক্ত আসামি হিসেবে ভারতে গ্রেপ্তার হওয়া রাহুল ও পাভেল ওরফে জোফের নামও রয়েছে।

পশ্চিমবঙ্গে গ্রেপ্তার হওয়া রাহুলও অবৈধভাবে সীমান্ত পাড়ি দিয়ে নিয়মিত বাংলাদেশে যাতায়াত করতেন।

ভারতে গ্রেপ্তার হওয়া তিন জঙ্গির একজন নাজিউর রহমান ওরফে পাভেল ওরফে জোসেফ বাংলাদেশের আনসার আল ইসলামের শীর্ষ জঙ্গি আল-আমীনের বোন-জামাই। আল-আমীন কাশিমপুর কারাগারে বন্দি।

র‌্যাবের গোয়েন্দা শাখার পরিচালক লে. কর্নেল খায়রুল ইসলাম বলেন, জঙ্গিরা র্যাবের গোয়েন্দা নজরদারির মধ্যেই রয়েছে। মাঠে এবং সাইবারে আমাদের ‘২৪/৭’ নজরদারি অব্যাহত রয়েছে।

তিনি বলেন, নজরদারির কারণেই মূলত জঙ্গিরা কোণঠাসা হয়ে রয়েছে। তাদের আর আগের সেই শক্তি নাই। তবে তারা যতই আগ্নগোপনে থাকার চেষ্টা করুক না কেন আমরা যেহেতু নজরদারি করে আসছি গ্রেপ্তার হতেই হবে।

সোনালীনিউজ/এমটিআই

Wordbridge School
Link copied!