• ঢাকা
  • শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

আইনের মারপ্যাঁচে পার পায় অপরাধীরা


নিজস্ব প্রতিবেদক সেপ্টেম্বর ২৪, ২০২১, ১০:৫৮ পিএম
আইনের মারপ্যাঁচে পার পায় অপরাধীরা

ঢাকা : দেশে কিশোর গ্যাং নিয়ন্ত্রণ করাই এখন বড় চ্যালেঞ্জ। কারণ আইনের মারপ্যাঁচে কিশোররা অনেক বড় অপরাধ করেও পার পেয়ে যায়। তবে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নজরদারির চেয়ে পারিবারিকভাবে যদি তাদের সচেতন করা যায়, তবে সেটি সবচেয়ে বেশি কার্যকর।

র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন-র‌্যাবের কিশোর অপরাধ বিরোধী টিভিসির উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে এমন মন্তব্য করেন বক্তারা।

বৃহস্পতিবার (২৩ সেপ্টেম্বর) রাজধানীর মগবাজারের মধুবাগ বীর মুক্তিযোদ্ধা আসাদুজ্জামান খান কমপ্লেক্স এ অনুষ্ঠানের আযোজন করা হয়। এতে সভাপতিত্ব করেন র্যাবের মহাপরিচালক চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল মামুন।

র‌্যাব জানায়, ২০১৭ সালে উত্তরায় আদনান হত্যাকাণ্ডের মধ্য দিয়ে কিশোর গ্যাংয়ের সহিংসতার নির্মমতা সামনে আসে। এরপর কিশোর অপরাধ দমনে আভিযানিক কার্যক্রম শুরু করে র‌্যাব। আদনান হত্যাকাণ্ডের মূল হোতা তালাচাবি রাজু ও ডিসকো বয়েজ গ্যাংয়ের দলনেতাসহ ৮ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল।

এছাড়া র‌্যাব রাজধানীর উত্তরখানের স্কুলছাত্র হূদয় হত্যা, টঙ্গীর স্কুলছাত্র শুভ হত্যা, গাজীপুরের নুরুল ইসলাম হত্যা, উত্তরখানের খ্রিস্টানপাড়ার সোহাগ হত্যাসহ ৫টি হত্যাকাণ্ডের জড়িতদের গ্রেপ্তার করেছে। ২০১৭ সাল থেকে এ পর্যন্ত ৩৭৩ জন কিশোর গ্যাং সদস্যকে আইনের আওতায় আনা হয়েছে।

প্রধান অতিথি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেন, ১৮ বছরের নিচে সবাইকে শিশু হিসেবে আখ্যায়িত করার বিষয়টি নিয়ে বর্তমানে চিন্তাভাবনার সময় এসেছে। আমি যখন এসএসসি পাস করেছি তখন বয়স ছিল ১৫ বছর। বর্তমানে যারা নিয়মিত পড়াশোনা করে ১৮ বছর বয়সে তারা বিশ্ববিদ্যালয়ে চলে যায়।

আমাদের মনে হয়, ১৮ বছরের এ সময়সীমা চিন্তাভাবনা করার সময় এসেছে। আন্তর্জাতিক একটি আইনে চুক্তিবদ্ধ হওয়ায় সমন্বয় করে এটি করা হয়েছে। কিন্তু এর ফলে কিশোর অপরাধ দমনে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে সমস্যায় পড়তে হচ্ছে, তাই বিষয়টি নিয়ে নতুন করে ভাবনার কথা বলেন তিনি।

আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে দেশ দুর্বারগতিতে এগিয়ে চলছে, এটি ধরে রাখার প্রথম শর্ত হচ্ছে নিরাপত্তা। কিন্তু আমাদের কিশোররা নানা ধরনের অপরাধে জড়িয়ে যাচ্ছে।

আমাদের শঙ্কার বিষয় ছিল করোনাকালে স্কুল-কলেজ বন্ধ থাকবে, সবাই বসে থাকবে। তবে এ সময়ে কিশোরদের নিয়ে শঙ্কা ততখানি হয়নি, আমাদের দেশ অনেক দেশের তুলনায় ভালো আছে।

তিনি আরো বলেন, পুলিশ-র্যাব, শিক্ষক ও সমাজ তার কার্যক্রম চালাচ্ছে। তারপরও অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতি কেন? তাই বিষয়টি খেয়াল না করলে আমাদের সন্তানকে হারিয়ে ফেলব, দেশ-জাতির সবাই নিগৃহীত হবে।

সমাজের শাসন যদি সুপ্রতিষ্ঠিত করতে না পারি, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী যতই কড়াকড়ি হোক আমরা হারিয়ে যাব। তাই সময় থাকতে সন্তানকে উপযুক্ত শিক্ষা দিন, তাদের সঙ্গে কথা বলুন। সন্তানরা কোথায় যাচ্ছে, কী করছে খেয়াল করুন। আমাদের আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কাজ করছে। তবে আপনার সন্তানদের প্রতি যদি খেয়াল না রাখেন এটি আমরা কখনোই পারব না।

বিশেষ অতিথির বক্তব্যে পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) ড. বেনজীর আহমেদ বলেন, একসময় আট বছর পর্যন্ত বয়সিদের শিশু ধরা হতো। কিন্তু পরবর্তিতে কিশোর আইন হালনাগাদ করা হয়েছে, এখন ১৮ বছর বয়স পর্যন্ত শিশু ধরা হয়। আইন পরিবর্তনের ফলে যখন একজন পূর্ণ যুবকের পর্যায়ে পৌঁছে যায় তাকেও শিশু ধরা হয়।

এর ফলে কিশোর অপরাধের বিরুদ্ধে আমরা যেভাবে আইনানুগ ব্যবস্থা নিয়েছি, সেভাবে করা হচ্ছে না। তাদের ক্ষেত্রে বিচার পদ্ধতি, গ্রেপ্তার পদ্ধতি সবকিছুই আলাদা। তাদের গ্রেপ্তারের সঙ্গে সঙ্গে প্রবেশন অফিসারের কাছে হস্তান্তর করা হয়। কিন্তু প্রবেশন অফিসাররা কাজ করেন সমাজ কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের আওতায়, আর আমরা কাজ করি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের আওতায়। আমরা তাদের সঙ্গে সমন্বয়ের চেষ্টা করে যাচ্ছি।

এ ছাড়া প্রয়োজনীয় সংখ্যক প্রবেশন অফিসার না থাকার বিষয়টিও রয়েছে। বললেই সেই সংখ্যক কর্মকর্তা নিয়োগ দিয়ে দেওয়া যায় না, এটি দীর্ঘমেয়াদি একটা প্রক্রিয়া।

কিশোর অপরাধীদের গ্রেপ্তারের পর জেলে পাঠানো যাবে না, সংশোধনগারে পাঠাতে হয়। সেই সংশোধনাগারের সংখ্যাও পর্যাপ্ত নয়। যেসব গ্যাপ রয়েছে পূর্ণ করতে কাজ করতে হবে। নয়তো বাড়বাড়ন্ত কিশোর গ্যাং নিয়ন্ত্রণ করা কঠোর হয়ে যাবে।

পুলিশ প্রধান বলেন, কিশোর ছেলে-মেয়েরা কী করছে, কোথায় যাচ্ছে এখানে অভিভাবকের নিয়ন্ত্রণের বিষয়টাও রয়েছে। প্রতিটি পরিবারকে খেয়াল রাখতে হবে বাচ্চারা কোথায় যায়, কার সঙ্গে মেশে এবং কী করছে। দেশ প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে এগিয়ে যাচ্ছে। সে দেশের উপযোগী একটা জেনারেশন আমাদেরই তৈরি করতে হবে।

র‌্যাবের মহাপরিচালক চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন বলেন, কিশোর গ্যাংয়ের মধ্যে ছোটদের সঙ্গে বড়রাও থাকে। ছোট-বড় মিলে বিরোধ হয়, পরে আলাদা গ্রুপ সৃষ্টি হয়। আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে মারামারির মতো ঘটনা ঘটে। কিশোর অপরাধ দমনে সচেতনতা কার্যক্রম শুরু হয়েছে মানে এ নয়, আভিযানিক কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যাবে। যদি কেউ সচেতনতার মাধ্যমে সুপথে না আসে, তার বিরুদ্ধে আইনানুগ কঠোর ব্যবস্থা চলমান থাকবে।

অনুষ্ঠানে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বিভিন্ন পর্যায়ের সদস্য, স্থানীয় ওয়ার্ড কাউন্সিলর এবং তেজগাঁও কলেজসহ বিভিন্ন স্কুল কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীরা উপস্থিত ছিলেন।

সোনালীনিউজ/এমটিআই

Wordbridge School
Link copied!