• ঢাকা
  • শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

অপরাধে ব্যবহার হচ্ছে হোয়াটসঅ্যাপ!


নিজস্ব প্রতিবেদক অক্টোবর ২৫, ২০২১, ০১:৩০ পিএম
অপরাধে ব্যবহার হচ্ছে হোয়াটসঅ্যাপ!

ঢাকা : সূত্রহীন অপরাধের জন্য হোয়াটসঅ্যাপে অপরাধীরা ব্যবহার করছে বিদেশি মোবাইল ফোন নম্বর। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে ব্যবহার করা হয় ভারত, মালয়েশিয়া, যুক্তরাজ্য ও মধ্যপ্রাচ্যের মোবাইল নম্বর। হোয়াটসঅ্যাপে এসব বিদেশি নম্বর দিয়ে করা হচ্ছে চাঁদাবাজি, ব্ল্যাকমেইলসহ নানা অপরাধ।

তথ্যপ্রযুক্তি বিশেষজ্ঞদের মতে, শুধু হোয়াটসঅ্যাপই নয়, অন্যান্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও পরিচয় গোপন রেখে ভুয়া লোকেশন দেখাতে বিদেশি নম্বর ব্যবহার করা যায়।

তাই সাইবার বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ, চাঁদাবাজি-ব্ল্যাকমেইলিং-এর চেয়েও বড় নাশকতা যেন সংঘটিত না হয় সেজন্য এখন থেকেই কার্যকর উদ্যোগ নিতে হবে।

গোয়েন্দা কর্মকর্তাদের মতে, ফেসবুক বা অন্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহার করে অপরাধ করলে সহজেই শনাক্ত করা যায়। এমনকি ফেইক অ্যাকাউন্ট দিয়ে এসব কাজ করলেও ধরা সম্ভব। কিন্তু বর্তমানে অধিকাংশ অপরাধ হচ্ছে হোয়াটসঅ্যাপের মাধ্যমে। অপরাধীরা অ্যাপটিকে অপরাধের জন্য নিরাপদ মনে করেন।

কারণ সাম্প্রতিক সময়ে অধিকাংশ ঘটনায় দেখা যায় অপরাধীরা বিদেশি মোবাইল নম্বর হোয়াটসঅ্যাপে ব্যবহার করেন। এক্ষেত্রে প্রযুক্তিগতভাবে তাদের শনাক্ত করা একটু জটিল।

বিদেশি মোবাইল সিমে হোয়াটসঅ্যাপ ব্যবহার করা অপরাধীরা পুলিশি জিজ্ঞাসাবাদে স্বীকার করেন, তারা মূলত বিদেশে বসবাসরত আত্মীয়-স্বজনের নম্বরে ওটিপি পাঠিয়ে হোয়াটসঅ্যাপ ইনস্টল করেন।

এছাড়া তাদের মধ্যে অনেকে বিভিন্ন কাজে মধ্যপ্রাচ্যে গিয়ে দেশে ফিরে এসেছেন। তারা সে দেশের সার্কেলের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষার জন্য অ্যাপটি মোবাইলে রেখে দেন। তবে বাংলাদেশে এসে কোনো কাজ না পেয়ে কেউ কেউ বিদেশি নম্বরের হোয়াটসঅ্যাপ ব্যবহার করে অপরাধ সংঘটিত করেন।

পুলিশের কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্স ন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিট সূত্রে জানা যায়, অনেক নারী ভিক্টিম এখানে অভিযোগ নিয়ে আসেন। তারা জানান, সম্পর্ক থাকাকালীন তারা তাদের বয়ফ্রেন্ডদের সঙ্গে নিজেদের সংবেদনশীল মুহূর্তের ছবি শেয়ার করেন।

একপর্যায়ে সম্পর্ক ছিন্ন হলে তাদের অনেকেই সেসব ছবি দিয়ে মেয়েদের ব্ল্যাকমেইল করেন, কেউ আবার টাকা দাবি করেন। এমন অধিকাংশ ঘটনায় আমরা হোয়াটসঅ্যাপের ব্যবহার দেখেছি। তারা নিজেদের নয় বরং বিদেশি কোনো নম্বরের হোয়াটসঅ্যাপ ব্যবহার করে এসব অপকর্ম করছেন।

পুলিশের সাইবার ক্রাইম ইনভেস্টিগেশন বিভাগের সিনিয়র সহকারী কমিশনার (এসি) ধ্রুব জ্যোতির্ময় গোপ বলেন, প্রবাসী বাংলাদেশিদের অধিকাংশই মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে থাকেন। তারা দেশে এসে নিজ নিজ কমিউনিটির সঙ্গে যোগাযোগের জন্য অনেক সময় বিদেশি সিম ব্যবহার করেন। তাদের মধ্যে অপরাধ-প্রবণতা তেমন দেখা যায় না। তবে আমাদের কাছে বর্তমানে অসংখ্য ‘চাঁদাবাজি ও পর্নোগ্রাফি’ সংক্রান্ত ব্ল্যাকমেইলের অভিযোগ আসছে।

এসব অপরাধ হচ্ছে মূলত বিদেশি হোয়াটসঅ্যাপ নম্বর ব্যবহার করে। অধিকাংশ নম্বর ভারত ও মালয়েশিয়ার। কেউ যদি বিদেশি নম্বর দ্বারা হোয়াটসঅ্যাপে অপরাধের শিকার হন, তাহলে তাকে সেই নম্বরটির বিষয়ে হোয়াটসঅ্যাপ কর্তৃপক্ষের কাছে রিপোর্ট করার পাশাপাশি দেশের প্রচলিত আইনের আশ্রয় নিতে পরামর্শ দিয়েছেন তিনি।

তথ্যপ্রযুক্তি গবেষক মেহেদী হাসান বলেন, বাংলাদেশে হোয়াটসঅ্যাপ চালু রয়েছে। নির্বিঘ্নে ফোন কল ও ম্যাসেজ করা যায় এতে। সেক্ষেত্রে বিদেশি নম্বরে হোয়াটসঅ্যাপ ব্যবহারে ক্ষতি ছাড়া উপকারের কিছু নেই।

যখনই বিদেশি নম্বর দিয়ে কেউ হোয়াটসঅ্যাপ ব্যবহার করবেন, বুঝতে হবে তার মূল উদ্দেশ্য নিজের আইডেন্টিটি বা পরিচয় গোপন রাখা। পাশাপাশি তাদের অবৈধ কোনো উদ্দেশ্যও থাকতে পারে।

তিনি আরো বলেন, শুধু হোয়াটসঅ্যাপের ক্ষেত্রে নয়।

অন্যান্য সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমেও পরিচয় গোপন রাখা, ভুয়া (ফেইক) লোকেশন দেখানোর কাজে বিদেশি নম্বর ব্যবহার হচ্ছে। কারো যদি এমন কোনো উদ্দেশ্য না-ই থাকে তাহলে দেশি নম্বর ব্যবহার করে হোয়াটসঅ্যাপ বা অন্যান্য অ্যাপ ব্যবহার করাই বাঞ্ছনীয়।

সোনালীনিউজ/এমটিআই

Wordbridge School
Link copied!