• ঢাকা
  • শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল, ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

‘এটা গেটলক’ বলে রাজধানীতে চলন্ত বাস থেকে ফেলে হত্যা


নিজস্ব প্রতিনিধি নভেম্বর ১৩, ২০২১, ০৩:৪০ পিএম
‘এটা গেটলক’ বলে রাজধানীতে চলন্ত বাস থেকে ফেলে হত্যা

ফাইল ছবি

ঢাকা : সাহায্য (ভিক্ষা) চাইতে রাজধানীতে রাইদা পরিবহনের একটি বাসে ওঠেছিল ১০ বছরের মরিয়ম। কিছুদূর যাওয়ার পর ‘এটা গেটলক’ বলে চলন্ত বাস থেকে ফেলে দেওয়া তাকে। এতে ঘটনাস্থলেই তার মৃত্যু হয়। গত মঙ্গলবার (৯ নভেম্বর) সকালে রাজধানীতে যমুনা ফিউচার পার্কের সামনে এ ঘটনা ঘটে। 

এদিকে এ ঘটনায় দুইজনকে গ্রেপ্তার করেছে র‍্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‍্যাব)। তারা হলেন রাইদা পরিবহনের চালক রাজু মিয়া (২৫) ও তার সহযোগী ইমরান হোসেন (৩৩)। শুক্রবার (১২ নভেম্বর) দিবাগত রাতে আব্দুল্লাহপুর ও টঙ্গী এলাকায় অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়।

র‍্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‍্যাব) এর আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন শনিবার (১৩ নভেম্বর) দুপুরে কারওয়ান বাজারে র‍্যাবের মিডিয়া সেন্টারে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান।

গ্রেপ্তার চালক ও হেলপার

তিনি বলেন, ড্রাইভার রাজু মিয়া এবং হেলপার ইমরান হোসেন প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানান, প্রতিদিনের মতোই রাইদা পরিবহনের একটি বাস (ঢাকা মেট্রো ব-১৪-৯০২২) নিয়ে পোস্তগোলা থেকে দিয়াবাড়ির উদ্দেশে রওনা হয়। সকালে যানবাহন ও যাত্রী কম থাকায় তারা দ্রুতবেগে গাড়ি চালাচ্ছিল। বাসটি যমুনা ফিউচার পার্কে পৌঁছালে মরিয়ম যাত্রীদের কাছে সাহায্য চাইতে গাড়িতে ওঠে। হেলপার ইমরান হোসেন এ সময় যাত্রীদের কাছ থেকে ভাড়া নিচ্ছিল। 

ইমরান তখন চালককে বলে, একজন ছিন্নমূল পথশিশু গাড়িতে উঠে অর্থ সাহায্য চাচ্ছে। তাকে গাড়ি থেকে নামিয়ে দিতে সে রাজুকে গাড়ির গতি কমাতে বলে। এ সময় মরিয়মকে দরজার কাছে গিয়ে নেমে যেতে বলা হয়। চালক রাজু কিছুদূর না যেতেই আবার থামতে বলায় বিরক্ত হয়ে বাসের গতি হালকা কমিয়ে, মরিয়মকে তাড়াতাড়ি নামতে বলে। মরিয়ম তাড়াহুড়ো করে নামার সময় হঠাৎ চালক জোরে গাড়ি চালানো শুরু করে। এতে মরিয়ম বাসের দরজা থেকে ছিঁটকে রাস্তায় পড়ে গুরুতর আহত হয় এবং ঘটনাস্থলেই তার মৃত্যু হয়। 

এদিকে অবস্থা বেগতিক দেখে চালক গাড়ি না থামিয়ে দ্রুতবেগে দিয়াবাড়ির দিকে চলে যায়। এরপর পোস্তগোলায় হাসনাবাদের একটি বাস ডিপোতে গাড়িটি রেখে দুর্ঘটনা ও মৃত্যুর বিষয়টি কাউকে না বলে আত্মগোপনে চলে যায়।

খন্দকার আল মঈন আরও বলেন, পরে বাবা রনি মিয়া জানতে পারেন ভাটারা এলাকায় একটি মেয়ে শিশুর মরদেহ পাওয়া গেছে। ওইদিন বিকেলে তিনি মেয়ের মরদেহ শনাক্ত করেন। রাতে অজ্ঞাত গাড়িচালককে আসামি করে মামলা দায়ের করেন তিনি।

মামলার তদন্ত প্রসঙ্গে র‌্যাব মুখপাত্র বলেন, সিসিটিভি ফুটেজে দেখা গেছে- মরিয়ম হেঁটে ফুটওভারব্রিজ দিয়ে রাস্তা অতিক্রম করে যমুনা ফিউচার পার্কের বিপরীত পাশে আসে। এরপর সে রাইদা সিটিং সার্ভিসের একটি বাসে ওঠে। বাসটি সামনে যেতেই একজন পথচারীকে হাত দিয়ে ইশারা করতে থাকে। সিসিটিভি ক্যামেরার এক ফ্রেমের ঠিক পেছনে ভিকটিম মরিয়মকে আহত অবস্থায় পাওয়া যায়। সিসিটিভি ক্যামেরার অবস্থান এবং সময় বিবেচনা করে নিশ্চিত হওয়া যায় যে, এখানেই অকালে মৃত্যু হয় মরিয়মের।

র‍্যাব কর্মকর্তা আরও বলেন, অর্থ সহায়তা চাওয়ার উদ্দেশ্যে বাসটিতে উঠেছিল মরিয়ম। কিন্তু ভিকটিমের বাসে ওঠা এবং পড়ে যাওয়ার কোনো সিসিটিভি ফুটেজ না পাওয়ায় ওই বাসের ড্রাইভার ও হেলপারকে শনাক্ত করতে গোয়েন্দা কার্যক্রম এবং নজরদারি আরও বৃদ্ধি করা হয়। এরপরই পৃথক অভিযানে অভিযুক্তদের গ্রেফতার করা হয়। তারা এই ঘটনায় নিজেদের সংশ্লিষ্টতার কথা স্বীকার করেছে।

সোনালীনিউজ/এমএএইচ

Wordbridge School
Link copied!