ঢাকা: ছদ্মবেশে দীর্ঘ ৩১ বছর পলাতক থাকার পর মানিকগঞ্জ সদর এলাকার আজহার হত্যা মামলার মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি মো. কাওসারকে গ্রেফতার করেছে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব-৪)।
প্রথমদিকে তিনি রাজমিস্ত্রি, ইলেক্ট্রিক ও স্যানিটারি মিস্ত্রি হিসেবে কাজ করেন। পরে ড্রাইভিং শিখে সিএনজি চালান এবং বর্তমানে প্রাইভেটকারের চালক হয়ে জীবিকা নির্বাহ করে আসছিলেন।
রোববার (১৯ জুন) দিবাগত রাতে গুলশান থানার বারিধারা এলাকা থেকে তাকে গ্রেফতার করা হয়।
সোমবার (২০ জুন) রাজধানীর কারওয়ান বাজারে র্যাব মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান র্যাব-৪ এর অধিনায়ক (সিও) ডিআইজি মো. মোজাম্মেল হক।
তিনি বলেন, নিহত আজাহার (৪০) ও গ্রেফতার কাওছার (৬৩) মানিকগঞ্জের চর হিজুলো গ্রামের বাসিন্দা। তারা স্থানীয় এলাকায় একসঙ্গে ইরি ধানের ক্ষেতে পানি সেচ করতো। একসঙ্গে কাজ করার সুবাদে তাদের মধ্যে সুসম্পর্ক গড়ে ওঠে। একে অপরের বাড়িতে অবাধে যাতায়াত ছিল। এরই মধ্যে আজাহারের বিবাহিত বোন অবলার সঙ্গে কাওছারের পরকীয়া সম্পর্ক গড়ে ওঠে। এই সম্পর্ককে কেন্দ্র করে ভিকটিম ও কাওছারের মধ্যে ঝগড়া হয়। এই ঝগড়াকে কেন্দ্র করে ১৯৯১ সালের ১৪ জুন আজাহারকে দেশীয় অস্ত্র দিয়ে পিটিয়ে হত্যা করে কাওছার ও তার সহযোগীরা। ওই দিনই নিহতের ভাই কাওছারসহ সাতজনের বিরুদ্ধে একটি হত্যা মামলা করেন মানিকগঞ্জ থানায়।
‘মামলার পর কাওছারসহ আরও কয়েকজন এজাহারনামীয় আসামিকে গ্রেফতার করে পুলিশ। দু’মাস হাজতবাসের পর ১৯৯১ সালে জামিনে বের হয়ে আত্মগোপনে চলে যান কাওছার। এর মধ্যে ১৯৯১ সালের ডিসেম্বরে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা এই মামলার এজাহারনামীয় আসামি মো. কাওছার, ওমর, রুহুল আমিন, আসমান ও রফিজকে অভিযুক্ত করে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করে। পরে ১৯৯২ সালে মানিকগঞ্জ জেলা ও দায়রা জজ এই মামলায় কাওছারকে সর্বোচ্চ সাজা মৃত্যুদণ্ড দেন। বাকি আসামি ওমর, রুহুল আমিন, আসমান ও রফিজ প্রত্যেককে যাবজ্জীবন সাজা দেন।’
তিনি বলেন, যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত আসামিরা পাঁচ বছর সাজাভোগের পরে উচ্চ আদালতে আপিল করে বর্তমান আদালতের নির্দেশে জামিনে আছেন। কাওছার মামলা বিচারাধীন থাকা অবস্থায় দুই মাস হাজতে থেকে জামিনে বের হওয়ার পর থেকেই গত ৩১ বছর পলাতক ছিলেন। ১৯৯১ সালের পর থেকে কাওছার আর কোনোদিন মানিকগঞ্জে যাননি।
৩১ বছর যেভাবে আত্মগোপনে ছিলেন কাওছার
র্যাব-৪ এর অধিনায়ক বলেন, কাওছার মৃত্যুদণ্ড সাজাপ্রাপ্ত হওয়ায় গ্রেফতার এড়ানোর লক্ষ্যে লোকচক্ষুর আড়ালে আত্মগোপন করেন। পরিচিত লোকজন থেকে নিজেকে আড়াল করে রাখার জন্য ১৯৯১ সালের শেষ দিকে ঢাকায় চলে আসেন। ৩১ বছর ধরে আসামি কাওছার নাম পরিবর্তন করে ইমরান মাহামুদ নাম ব্যবহার করে ছদ্মবেশ ধারণ করেন। প্রথমে গাজীপুর, কালিয়াকৈর, পুবাইল, উত্তরা, টঙ্গীসহ ঢাকা মহানগরীর বিভিন্ন এলাকায় আত্মগোপনে ছিলেন। আত্মগোপনে থাকা অবস্থায় আসামি নিজের পরিচয় গোপন করার জন্য ক্রমাগতভাবে পেশা পরিবর্তন করতেন। প্রথমদিকে রাজমিস্ত্রি, ইলেক্ট্রিক ও স্যানিটারি মিস্ত্রি হিসেবে কাজ করেন। পরে ড্রাইভিং শিখে সিএনজি চালান এবং বর্তমানে প্রাইভেটকারের চালক হয়ে জীবিকা নির্বাহ করে আসছিলেন।
র্যাবের এই কর্মকর্তা আরও বলেন, কাওছার পালিয়ে ঢাকায় চলে আসার পর নিজেকে আড়াল করার জন্য মো. ইমরান মাহামুদ নাম ধারণ করে জাতীয় পরিচয়পত্র তৈরি করেন। জাতীয় পরিচয়পত্রে পিতা- শাহিন মাহামুদ, গ্রাম- নান্দুয়াইন, থানা- গাজীপুর, জেলা- গাজীপুরকে বর্তমান ও স্থায়ী ঠিকানা হিসেবে ব্যবহার করেন।
সোনালীনিউজ/আইএ
আপনার মতামত লিখুন :